ভারতে মুসলিমদের জান মালের কোন নিরাপত্তা নেই। এমনকি নিজের বাড়িতেও নয়। হিন্দুত্ববাদীদের বিরুদ্ধে যেসব মুসলিমরা প্রতিবাদ করছেন, তাদেরকে নানা কৌশলে দমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কাউকে মিথ্যা মামলা দিয়ে আর কাউকে খুন করে। হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসীরা জানে মুসলিমদের হত্যা করলেও তাদের কোন শাস্তি হবে না।
হত্যাযজ্ঞের ধারাবাহিকতায় এবার তারা বাড়িতে ঢুকে মুসলিম প্রতিবাদী ছাত্রনেতাকে অভিনব কায়দায় খুন করেছে। পুলিশের পোশাক পরিহিত একজনসহ চার অজ্ঞাত হিন্দুত্ববাদী যুবক ছাদ থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে তাকে খুন করে।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উলুবেড়িয়ার আমতায় চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।
নিহত ছাত্রনেতার নাম আনিস খান (২৮)। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী তিনি। বর্তমানে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা নিয়ে পড়াশোনা করছিলেন। পরিবারের লোকেরা শুক্রবার রাতে তাকে তিনতলা বাড়ির নিচে পড়ে থাকতে দেখেন।
পরিবারের দাবি, জোর করে তিন দুষ্কৃতকারী ঘরে ঢুকে ছাদে উঠে আনিসকে ছাদ থেকে ফেলে খুন করেছে। আনিস এলাকায় অন্যায় বিরুদ্ধে প্রতিবাদী মুখ বলে পরিচিত ছিলেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার রাতে বাড়িতে ছিলেন আনিস। ওই সময় চারজন দুষ্কৃতকারী তাঁদের বাড়িতে আসে। তিনজন সাধারণ পোশাকে থাকলেও একজন ছিল পুলিশের পোশাকে এবং তার হাতে আগ্নেয়াস্ত্র ছিল।
পরিবারের সদস্যরা জানান, তারা বারবার আনিসের নাম করে ডাকছিল। ওই সময় আনিসের বাবা সালাম খান বেরিয়ে আসেন। প্রথমে দরজা খুলতে চাননি তিনি, পরে দুষ্কৃতকারীরা হুমকি দিয়ে দরজা খুলতে বাধ্য করে।
দুষ্কৃতকারীরা জানায়, বাগনান থানায় আনিসের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তাকে আটক করতে এসেছে।
সালাম খান দরজা খুলে দিলে আনিস কোথায় জানতে চায় তারা। সালাম জানান, আনিস বাড়িতে নেই। তার পরেও সাধারণ পোশাকে থাকা তিনজন সোজা ছাদে উঠে যায়। পুলিশের পোশাক পরা যুবক সালাম খানকে নিচে আটকে রাখে। আনিস ওই সময় বাড়ির ছাদে বসে ছিলেন।
আনিসের বাবা বলেন, ‘কিছুক্ষণ পর এই তিনজন নেমে আসে এবং পুলিশের পোশাক পরিহিত ব্যক্তিকে বলে, ‘স্যার হয়ে গেছে চলুন।’ এর পরেই তারা বেরিয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, ‘ধপ করে কিছু একটা পড়ার আওয়াজ শুনি। এর পরে নিচে গিয়ে দেখি ছেলে পড়ে রয়েছে।’
এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই এলাকাবাসী জড়ো হয়। খবর পেয়ে আসে আমতা থানার পুলিশ। পুলিশকে প্রথমে মরদেহ সরাতে দেয়নি স্থানীয় বাসিন্দারা। দ্রুত তদন্ত করে দোষীদের ধরার দাবি জানান তারা। কিন্তু হিন্দুত্ববাদী পুলিশ তদন্ত করার পরিবর্তে ১০টার দিকে এসে মরদেহ নিয়ে যায়।
জানা গেছে, আনিস কলকাতায় থাকেন, আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত। সাধারণত সপ্তাহে বাড়িতে আসেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় তিনি বাড়ি এসেছিলেন ওই এলাকায় একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান উপলক্ষে। ধর্মীয় অনুষ্ঠান থেকে রাত ১টার পরে বাড়ি ফেরেন তিনি।
ভারতের একজন আইন বিশেষজ্ঞ মুফাক্কিরুল ইসলাম বলেছেন, এটা সম্পূর্ণ হিন্দুত্ববাদীদের পরিকল্পিত ঘটনা। অন্যথায় কোন আসামি রাইফেল নিয়ে মর্ডার করতে যায় না।
গত এক মাসের ভিতরে প্রায় ৪জন মুসলিম যুবককে হিন্দুত্ববারীরা খুন করেছে একই কায়দায়। এই হত্যাগুলোকে তাই বর পরিসরে গণহত্যা শুরু করার আলামত হিসেবেই দেখছেন বিশ্লেষকরা।
তথ্যসূত্র:
১।Anis Khan’s murder: Bengal student leader earlier told police his “life is in danger”
https://tinyurl.com/2p9anvtn
২।পুলিশের পোশাকে ছাদ থেকে ফেলে ছাত্রনেতাকে হত্যা!
https://tinyurl.com/3fh2p83a