উত্তর প্রদেশের মতো আসামেও ইতিহাস মুছে দিতে হিন্দুত্ববাদীদের মুসলিম নাম পরিবর্তন

উসামা মাহমুদ

0
736
উত্তর প্রদেশের মতো আসামেও মুসলিমদের ইতিহাস মুছে দিতে মুসলিম নাম পরিবর্তন

আগামী মুসলিম প্রজন্মকে পূর্বসূরিদের গৌরবমাখা ইতিহাস ভুলিয়ে দিতে হিন্দুত্ববাদীরা নানা চেষ্টা করে যাচ্ছে। পাঠ্যপুস্তক থেকে মুসলিম মনীষীদের ইতিহাস বাদ দিয়ে দিচ্ছে। মুসলিমদের ইতিহাস জড়িত বিভিন্ন অঞ্চলের নাম পরিবর্তন করে দিচ্ছে।

গত কয়েক বছর ধরে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) যেসব এলাকায় ক্ষমতায় রয়েছে সেসব এলাকার বিভিন্ন স্থানের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। বছর তিনেক আগে উত্তর প্রদেশের বড় শহর এলাহাবাদের নাম পরিবর্তন করে প্রয়াগরাজ করা হয়েছে। দিল্লির লাগোয়া গুরগাঁওয়ের নাম হয়েছে গুরুগ্রাম। ফইজাবাদ শহরের নাম পাল্টে অযোধ্যা করা হয়েছে।

এবার সেই হাওয়া লেগেছে ভারতের আসামে। ভারতের আসামের বিভিন্ন অঞ্চলের নাম পরিবর্তন করা হবে বলে জানিয়েছে রাজ্যের হিন্দুত্ববাদী মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা।
গত বুধবার (১৬/০২/২২)এবিষয়ে সে টুইট করে। এতে সে বলেছে, ‘কোনো শহর, নগর বা গ্রামের নাম তার সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং সভ্যতার সঙ্গে সংগতি রেখে হওয়া উচিত।’

ঐ হিন্দুত্ববাদী মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছে, এই প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপে একটি ওয়েব পোর্টাল চালু করা হবে। সেখানে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে পরামর্শ চাওয়া হবে। আসামের যেসব স্থানের মুসলিম নাম রয়েছে, সেগুলো পরিবর্তনের ব্যাপারে পরামর্শ নেবে রাজ্য সরকার।

তবে আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসবিষয়ক একজন গবেষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে গণমাধ্যমকে বলেন, আসামে দীর্ঘ সময় ধরেই মুসলমান সম্প্রদায়ের বাস। এখানে মোট জনসংখ্যার ৩৫ শতাংশ মুসলমান। স্বাভাবিকভাবেই বিভিন্ন সম্প্রদায়ের নামের সঙ্গে সংগতি রেখে বিভিন্ন স্থানের নামকরণ করা হয়েছে। যেমন বরাক উপত্যকার নাম করিমপুর। হয়তো এমন জায়গাগুলোর নাম পাল্টে যাবে।

আসাম এবং পূর্ব ভারতে এই নাম পরিবর্তনের প্রক্রিয়া এখনো সেভাবে চালু না হলেও এবার তা হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
আসামে দীর্ঘ সময় ধরেই মুসলমান সম্প্রদায়ের বাস। এখানে মোট জনসংখ্যার ৩৫ শতাংশ মুসলমান। স্বাভাবিকভাবেই বিভিন্ন সম্প্রদায়ের নামের সঙ্গে সংগতি রেখে বিভিন্ন স্থানের নামকরণ করা হয়েছে। যেমন বরাক উপত্যকার নাম করিমপুর। হয়তো এমন জায়গাগুলোর নাম পাল্টে যাবে।

এদিকে ১৮ শতকের মহীশূরের মুসলিম শাসক টিপু সুলতান হিন্দুদের উপর অত্যাচার করেছিল বলে ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে তার নামে জনসাধারণের প্রয়োজনীয় কোনও বিষয়ের নাম রাখা মেনে নেওয়া হবে না বলে জানিয়েছে হিন্দুত্ববাদী বিজেপি।

এদিকে যোগী আদিত্যনাথের উত্তরপ্রদেশে স্থাপনা ও এলাকার মুসলিম নাম বদলে হিন্দু নাম রাখার ধুম পড়েছে। মোঘলসরাইয়ের নাম বদলে পণ্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায় নগর করা হয়েছে। এলাহাবাদের নাম হয়েছে প্রয়াগরাজ। একইভাবে ফইজাবাদ হয়েছে অযোধ্যা। সেই নামবদলের হিড়িকে এবার রাতারাতি বদলে দেওয়া হলো প্রায় দেড়শ’ বছরের পুরনো স্টেশনের নাম। সেখানে ঐতিহাসিক ফইজাবাদ স্টেশন এখন থেকে পরিচিত হবে অযোধ্যা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন হিসেবে। উত্তর প্রদেশ সরকার সূত্রে খবর, মন্দিরের আদলে গড়ে তোলা হবে এই নয়া রেল স্টেশন।

মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে এই ধরণের কাজই খুব মন দিয়ে করেছে হিন্দুত্ববাদী যোগী আদিত্যনাথ। মেরুকরণের পালে হাওয়া দিতেই রাজ্যে একের পর এক মুসলিম এলাকার নাম বদলাচ্ছে।

ক্ষুব্ধ ইতিহাসবিদদের একাংশের বক্তব্য, শুধু মুসলিম বিদ্বেষের মেরুকরণে সুড়সুড়ি দিতেই নামবদলের এই উদ্যোগ। এতে জায়গাটির ইতিহাস ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু সেটি ক্ষতিকর। তাদের আশঙ্কা, এই ধারা অব্যাহত থাকলে হয়তো দ্রুতই রাজ্যের ইতিহাস বিজড়িত সব মুসলিম নামই বদলে দেওয়া হবে।

আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ঐতিহাসিক দলিল বা তথ্যকে উপেক্ষা করে যখন কেউ বা কারা ইতিহাস নিয়ে বুলি আওড়ান, তখন তাদের ‘বোধহীন’ অথবা ‘বিকৃতমনষ্ক’ বলে দাবি করতে হয়।

বিশ্লেষকরা বলেন, বলতে দ্বিধা নেই, যোগী আদিত্যনাথের ইতিহাসের যথেষ্ট জ্ঞান নেই। তা নিয়ে সে যে আজগুবি কথা বলছে, তার পিছনে আবার একটি মস্ত চক্রান্ত রয়েছে। গৈরিক ঐতিহাসিকরা ভারতীয় ইতিহাস চর্চায় নতুন ব্যাখ্যার আমদানির চেষ্টা চালাচ্ছে। তথ্যের উপর দাঁড়িয়ে সেই বিতর্ক হলে তর্ক করতে অসুবিধা নেই। কোনও কোনও ক্ষেত্রে তা হচ্ছেও। কিন্তু যোগী যে ইতিহাস বলছে, তা বিতর্কেরও অযোগ্য। ভাবতে অবাক লাগে, তার পারিষদগণ, তার আধিকারিকরা মুখ্যমন্ত্রীকে ভুল ধরিয়ে দিতে পারেন না বা ভয় পান।

তারা বলেন, তিনি আসলে ঐতিহাসিক তথ্যকে বিকৃত করে রাজনীতি করার অপচেষ্টা করছে। যোগীর রাজনীতিটা হচ্ছে হিন্দুত্বের রাজনীতি। তাই অতীতের মুসলিমদের সোনালী শাসনকে তার কাছে দাসত্ব ছাড়া আর কিছু নয়। সে জন্যই ইতিহাস বদলে দেয়ার চেষ্টা। এটা কট্টর মানসিকতাকে তুষ্ট করবে, তার প্রশাসনিক ব্যর্থতা থেকে নজর অন্যদিকে ঘোরাবে। হয়তো বা ভোট পেতেও ঢালাও সাহায্য করবে। তবে বলে রাখা ভালো, এক বা একাধিক ব্যক্তি শত চেষ্টা করলেও ইতিহাস বদলাবে না। ঐতিহাসিক দলিল আগুন দিয়েও পুড়িয়ে ফেলা যায়, কিন্তু সত্যকে আড়াল করা যায় না।

ভারত মুসলিমরা দীর্ঘদিন শাসন করেছে। তাদের রয়েছে এক সোনালী অতীত। কালচক্রে, হিন্দুদের ধোঁকাবাজি বুঝতে না পেরে শাসন ক্ষমতা হারালেও তারা তাদের অতীতের গৌরব উজ্জ্বল ইতিহাস ভুলে যাবে না। বরং ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে হিন্দুত্ববাদী আগ্রাসনের অবসান ঘটাবে।
তারা যতই বলুক লাল কেল্লায় গেরুয়া পতাকা উড়াবে, মুসলিম মুক্ত হিন্দু রাষ্ট্র বানাবে। এগুলো দিবাস্বপ্নই থেকেই যাবে।
মুসলিমদের ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ে শুধু দিল্লি নয় সমগ্র ভারতে মুসলিমরা তাওহিদের পতাকাই উড়াবে। হাদিসের আলোকে এমনটাই মত ব্যক্ত করেছেন ইসলামিক চিন্তাবীদগণ।

তথ্যসূত্র:

ভারতের উত্তর প্রদেশের মতো আসামে শুরু হচ্ছে স্থানের মুসলিম নাম পরিবর্তন
https://tinyurl.com/mrw94t9k

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধদখলদার ও তাদের দোসরদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলতে থাকবে: আশ-শাবাব
পরবর্তী নিবন্ধভারতে হিন্দুত্ববাদীরা পুলিশের পোশাকে বাড়িতে ঢুকে মুসলিম ছাত্রনেতাকে খুন