ভারতের নতুন আতংক, হুজির ‘৩১৩ ব্রিগেড’:
উম্মাহর হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে এবং মহান রবের ফরজ বিধান আদায় করতে শহীদ কমান্ডার ইলিয়াস কাশ্মীরি রহিমাহুল্লাহর সামরিক অঙ্গনের পথচলার সূচনা হয় ‘তেহরিকে আজাদিয়ে কাশ্মীর’-এর মাধ্যমে। এরপর তিনি “হারকাতুল জিহাদ আল-ইসলামী (হুজি) ৩১৩ ব্রিগেড” প্রতিষ্ঠা করেন। হুজি এমন মজবুত আক্রমণাত্মক অপারেশন চালায়, যে কয়েক মাসের মধ্যেই ভারতীয় সেনাবাহিনী এই দলের নাম শুনলে কেঁপে উঠত। বেশির ভাগ অপারেশনে তিনি নিজেই শাহাদাতের প্রবল আকাঙ্ক্ষা নিয়ে যোগ দিতেন। তাঁর এ অতুলনীয় জযবার জন্য সাথীদের মধ্যেও তাঁর একটি বিশেষ স্থান ছিল।”
এই দল তখন দক্ষিণ এশিয়ার একটি শক্তিশালী দল ও বিস্তৃত জিহাদি নেটওয়ার্কে পরিণত হয়। হুজির সুগভীর নেটওয়ার্ক পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ভারত, নেপাল ও বাংলাদেশ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। CIA-এর কিছু নথিতে ৩১৩-ব্রিগেডের ইউরোপে শাখা থাকার কথাও উঠে আসে। সিএনএন এ নিউজ শিরোনামে তাঁকে “পৃথিবীর সবচেয়ে বিপজ্জনক মানুষ” বলে অভিহিত করা হয়। পাকিস্তানের প্রয়াত সাংবাদিক সৈয়দ সেলিম শাহজাদ তাঁর সম্পর্কে বলেন, “বিশ্ব গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তাঁকে সর্বদাই সবচেয়ে কার্যকর, কৌশলী এবং মারাত্মক লোক হিসাবে বর্ণনা করেছে। সেই সাথে তিনি বর্তমান বিশ্বের একজন সফল গেরিলা কমান্ডারও ছিলেন।”
ভারতের বিরুদ্ধে কাশ্মীরির যুদ্ধ:
কমান্ডার ইলিয়াস কাশ্মীরি ৯০ দশকে কাশ্মীর জিহাদে অংশগ্রহণের পর থেকে সেখানে ধারাবাহিকভাবে ভরতীয় মুশরিকদের বিরুদ্ধে একের পর এক সফল অভিযান চালাতে শুরু করেন। তাঁর এসব সফল অভিযানের ফলে ভারতের মুশরিক সৈন্যরা এতটাই ভীতসন্ত্রস্ত ছিলো যে, তারা নিজেদের ক্যাম্পের বাহিরে একা বের হতেও ভয় পেতো। তাঁর এসব সফল অভিযানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো-
– ১৯৯৪ সালে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লীতে আল-হাদীদ অপারেশন। এই অপারেশনের উদ্দেশ্য ছিল তাঁর কয়েজন সাথীকে মুক্ত করা। তাঁরা ছিলেন মাত্র ২৫ জনের একটি দল, যার ডেপুটি পদে ছিলেন শায়খ উমার সাঈদ (২০০২ সালে করাচীতে অপহৃত ইউএস রিপোর্টার ড্যানিয়েল পার্লের অপহরণকারী)।
মুজাহিদদের এই দলটি বন্দী ভাইদের মুক্ত করতে ইংল্যান্ড ,মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের নাগরিকসহ বেশকিছু বিদেশীকে অপহরণ করেন। তাদেরকে দিল্লীর অদূরে গাজিয়াবাদে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর তাঁরা ভারত সরকারের নিকট তাঁদের সাথীদের মুক্তির দাবী জানান।
– ২০০০ সালের ২৫শে ফেব্রুয়ারি, ভারতীয় মুশরিক সেনাবাহিনীর কমান্ডোরা লাইন অব কন্ট্রোল রেখা অতিক্রম করে পাকিস্তান শাসিত কাশ্মীরে প্রবেশ করে। এরপর সেখানকার লনজট গ্রামে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে গুলি চালিয়ে ১৪ জন সাধারণ নাগরিককে হত্যা করে। ফেরত যাবার সময় তারা মুসলিম মেয়েদের অপহরণ করে নিয়ে যায় এবং এর মাঝে তিনজনের ছিন্ন মস্তক অপরপ্রান্তে জড়ো হওয়া পাকিস্তানি সৈন্যদের দিকে ছুড়ে মারে।
এই ঘটনার ২৪ ঘন্টা না কাটতেই তার ঠিক পরদিনই, ইলিয়াস কাশ্মীরি রহ. তাঁর “৩১৩ ব্রিগেড” হতে ২৫ জনকে সঙ্গে নিয়ে লাইন অব কন্ট্রোল অতিক্রম করেন। ভারতীয় সেনাবাহিনীর নাকাইল সেক্টরে এক গেরিলা অভিযান পরিচালনা করেন। অভিযানের সময় তাঁরা ইন্ডিয়ান সেনাবাহিনীর একজন অফিসারকে আটক করেন এবং তার শিরোচ্ছেদ করেন। এরপর ওই অফিসারের কাটা মাথা পাকিস্তানের কোতিল বাজারে সাড়ম্বরে প্রদর্শন করা হয়।
– ইলিয়াস কাশ্মীরির সবচেয়ে দুর্ধর্ষ অপারেশন ছিল ২০০২ সালে ভারত অধিকৃত কাশ্মীরের আঙ্কুরছাউনির ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে। এ সময় গুজরাটে মুসলিমদের উপর কসাই নরেন্দ্রমোদির নেতৃত্বে হিন্দুরা গনহত্যা চালাচ্ছিল। এই অপারেশনে তিনি তাঁর ৩১৩-ব্রিগেডের সদস্যদের দুই ভাগে ভাগ করে দেন। প্রথম হামলার পর ভারতীয় জেনারেল, ব্রিগেডিয়ার ও অন্যান্য সিনিয়র অফিসাররা ঘটনাস্থলে এসে একত্রিত হলে সেখানে দ্বিতীবার হামলা চালানো হয়। যেখানে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ভারতের সাথে সংঘটিত তিন তিনটি যুদ্ধে একজন জেনারেলকেও আহত করতে সক্ষম হয়নি, সেখানে ইলিয়াস কাশ্মীরির এই দলটি সেই হামলায় ভারতীয় দুই জেনারেলকে আহত এবং কয়েকজন ব্রিগেডিয়ার ও কর্নেল হত্যা করতে সক্ষম হন। কাশ্মীরে চলমান ভারতীয় আগ্রাসনের দীর্ঘ ইতিহাসে সেটা ছিল ভারতের জন্য সুস্পষ্ট পরাজয়।
– বাস্কার পর্বত বিজয় ছিলো তাঁর আর একটি সফল অপারেশন। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই কাশ্মিরের এই বীর মুজাহিদ হিন্দুত্ববাদী ভারতীয় মুশরিকদের আতংকিত করে তুলতে সক্ষম হন। তিনি শত্রুদেরকে ভীত-সন্ত্রস্ত করেই ক্ষান্ত ছিলেন না বরং তাঁর গেরিলা অপারেশন এমনই এক মাত্রায় পৌছে যে, তিনি ভারতীয় সেনাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি বিজয় করে নেন। কতলি আজাদ কাশ্মিরে আয়ত্তে রাখা এই ঘাঁটিটি আসলে একটি পর্বত যা স্থানীয় ভাষায় বলা হয় “ভাল্লুক পর্বত” আর মুজাহিদরা এটাকে ডাকতেন “বাস্কার পর্বত” নামে। এই পর্বতটি ছিল মুজাহিদদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এই পর্বত হয়ে মুজাহিদগণ তাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন করেন। এর মাধ্যমে দখলকৃত কাশ্মীর উপত্যকায় কর্মরত মুজাহিদদের সাথে যোগাযোগ করা অনেকটা সহজ হয়ে যায়।
এদিকে পাকিস্তানের গাদ্দার সেনারা বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার নামে সংগঠনের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে থাকে। বিষয়টি ভালো দৃষ্টিতে নিচ্ছিলেন না ইলিয়াস কাশ্মীরি। ফলে পাকিস্তানের গাদ্দার সেনাদের সাথে সম্পর্কের আরও অবনতি ঘটে। এসময় গাদ্দার পাকিস্তানি সেনারা বিভিন্নভাবে ইলিয়াস কাশ্মীরির উপর চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। এরমধ্যে রয়েছে তাঁর নিজের দলকে নিষ্ক্রিয় করা, গোয়েন্দা সংস্থার অধীনে পরিচালিত জাইশে মুহাম্মদে যুক্ত হওয়া, বাস্কার পর্বতের উক্ত ঘাঁটিটি ভারতকে ফেরত দেওয়া ইত্যাদি। কিন্তু আল্লাহর পথে জিহাদের উদ্দেশ্যে বের হওয়া এই মহান বীর এসব করতে রাজি হননি। ফলে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা ও জাইশে মুহাম্মদ তাঁর বাহিনীর উপর হামলা চালায়, আর ঠিক সেসময় ভারতীয় মুশরিক বাহিনীও ‘৩১৩-ব্রিগেডের’ ঘাঁটির উপর প্রবল বোমা বর্ষণ করতে থাকে। শত্রুরা এই যৌথ হামলার মাধ্যমে অনেক মুজাহিদকে শহীদ করে। সেই সাথে বাস্কার পর্বতের উক্ত ঘাঁটিটি ভারতকে উপহার হিসেবে দিয়ে দেয় গাদ্দার পাকিস্তান। তবে এই অভিযানের সময় পরাক্রমশালী মহান আল্লাহ্ তায়ালার কুদরতে ইলিয়াস কাশ্মীরি রহিমাহুল্লাহ বেঁচে যান।
চলবে ইনশা আল্লাহ্…
লেখক : ত্বহা আলী আদনান
পড়ুন প্রথম পর্ব-