কথিত বন্ধুত্বের আড়ালে বাংলাদেশ ও বাংলাদেশিদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করে চলেছে হিন্দুত্ববাদী ভারত। সশীত ও গ্রীষ্মের শুরুতে প্রয়োজনের সময় পানি না দিয়ে ফসলি জমিন নস্ট করে। আর বর্ষার সময় সব গেট খুলে দিয়ে এদেশকে পানিতে ডুবিয়ে মারে হিন্দুত্ববাদী ভারত। এটাই ভারতের বন্ধুত্ব।
সম্প্রতি টানা কয়েক দিনের বৃষ্টির পর ভারতের গজল ডোবার সব গেট খুলে দেওয়ায় তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমা ছাপিয়ে ঢুকে পড়েছে নদী তীরবর্তী এলাকাগুলোতে। তিস্তা অববাহিকার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের মুসলিমরা কাটাচ্ছেন নির্ঘুম রাত।
পানি প্রবাহ বেড়ে তলিয়ে গেছে বাদাম, মরিচ, পেঁয়াজ, মিষ্টি কুমড়া ও ভুট্টাসহ বিস্তীর্ণ চরের বিভিন্ন উঠতি ফসল। অন্তত ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ হাঁটু বা কোমর পানিতে বন্দিদশায় আছেন। এসব মানুষের হাতে এখনও পৌঁছেনি কোনো সহায়তা। দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়া পয়েন্টে ৪৪টি স্লুইসগেট বাধ্য হয়ে খুলে রাখা হয়েছে।
পানি বিপৎসীমার পরিমাপ হচ্ছে ৫২ দশমিক ৬০ মিটার। আর শুক্রবার তিস্তা ব্যারাজে সকাল ৬টায় নদীর পানি বিপদসীমার ১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল। নদীর পানি বাড়ায় তিস্তা তীরবর্তী চর ও নিম্নাঞ্চলে কয়েক শত পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে।
স্থানীয় লোকজন বলেন, আমাদের দুর্ভোগ এখনও কমে যায়নি। গোটা এলাকা কাদাময় হয়ে রয়েছে। আবার উজান থেকে ধেয়ে আসা ভারতের পানি কখন সবকিছু ডুবিয়ে দেবে তা বলা মুশকিল।
লালমনিরহাটের হাতীবান্ধার ডাউয়াবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মশিউর রহমান বলেন, পানি কমেছে। তবে কতক্ষণ এ অবস্থা থাকে এটাই দেখার বিষয়। বৃষ্টির পানির চেয়ে উজান থেকে নেমে আসা পানিই তিস্তা নদীর অবস্থার পরিবর্তন করে। তাই বর্ষা আসলেই নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারি না। কখন সবকিছু ডুবিয়ে নিয়ে যাবে।
সিলেট সুনামগঞ্জ :
বাংলাদেশের উত্তর পূর্বে সিলেট সুনামগঞ্জ অঞ্চলে বন্যা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন লক্ষ লক্ষ মানুষ।
এই দুই জেলায় প্রায় ৩০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যদিও প্রকৃত সংখ্যা আরো অনেক বেশি। বন্যার পানিতে তলিয়ে সুনামগঞ্জ শহর পুরো দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বন্যার ভয়াবহতায় দিশেহারা সুনামগঞ্জের মানুষ
ঘরবাড়ি পানির নিচে। চারপাশে অথৈই পানিতে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ারও উপায় নেই বলছেন স্থানীয় মানুষজন। সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার একটি ইউনিয়নের সাবেক একজন চেয়ারম্যান মুরাদ হোসেন বন্যার পানির কারণে পরিবারসহ তার বাড়ির ছাদে আশ্রয় নিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, পানি নেই এমন এক ইঞ্চি জায়গা এখন মিলবে না সুনামগঞ্জ জেলায়। “আমাদের এলাকায় প্রতিটা ঘরবাড়ি পানির নিচে। কোন কোন ঘরবাড়ির চালের ওপর দিয়ে পানি যাচ্ছে।” “…মানুষের একটু আশ্রয় নেয়ার জায়গাও নাই। মানুষকে দ্রুত উদ্ধার করা না হলে লাশের মিছিল দেখা যাবে,” মন্তব্য মুরাদ হোসেনের।
তিনি পরিস্থিতির বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন, গবাদিপশু, হাঁস মুরগি সব পানিতে ভেসে যাচ্ছে।
সুনামগঞ্জে দু’টি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় পুরো জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। মোবাইল নেটওয়ার্কও কাজ করছে না। অন্যদিকে সুনামগঞ্জ শহর পানিতে ডুবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে পুরো দেশ থেকে।
তিনি আরও জানিয়েছেন, “ভারতের মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে ভারী বর্ষণের কারণে বৃহস্পতিবার রাত থেকে ১২ ঘন্টাতেই সুনামগঞ্জে চার ফুট পানি বেড়ে যায়।
“জেলা শহরের সব রাস্তায় পানি। কোথাও বুক সমান পানি এবং কোথাও তার চেয়েও বেশি পানি। সুনামগঞ্জের সাথে যোগাযোগের হাইওয়েগুলোও পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে শহর বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে,” বলেন সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো: জাহাঙ্গীর হোসেন।
সিলেটেও বন্যার পানি হু হু করে বাড়ছে।
সিলেট শহর থেকে একজন সমাজকর্মী শাহ শাহেদা বেলা বলেছেন, আকস্মিক বন্যা এবং তার ভয়াবহতায় তাদের জীবনযাত্রা থমকে গেছে।
সিলেটের কোম্পানিগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত এক গ্রামে পাঁচ সন্তান এবং দিনমজুর স্বামীকে নিয়ে বন্যার পানিতে আটকে পড়েছেন সালমা বেগম। কয়েকদিন ধরে খাবার না থাকলেও তিনি এখন নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে পারবেন কিনা-সেটাই তার কাছে বড় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তিনি বলেন, “বর্তমানে পানির মধ্যে ভাসতেছি। একেবারে ঘরের চাল পর্যন্ত পানি। এখান থেকে বাঁচতে চাই।”
কোম্পানিগঞ্জ থেকে একজন সাংবাদিক মোহাম্মদ কবির জানিয়েছেন, বন্যায় যত মানুষ আটকা পড়েছে, তাদের উদ্ধারে পর্যাপ্ত নৌকা নেই। সেজন্য বেশিরভাগ মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে পারছেন না। “রাস্তাঘাট সব জায়গায় এতটাই পানি যে নৌকা ছাড়া অন্য কোন উপায়ে চলাচল করা সম্ভব নয়। ফলে নিরাপদ জায়গায় যেতে না পেরে অনেক মানুষ ঘরের চালের ওপরও আশ্রয় নিয়েছে,” বলেন মোহাম্মদ কবির।
ভারতের পানি আসায় এবং বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় দেশের উত্তরে কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট এবং নীলফামারী সহ কয়েকটি জেলাতেও আগামী কয়েকদিন বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। এছাড়া উত্তরের জেলাগুলোর পানি নামার সময় সিরাজগঞ্জ টাঙ্গাইলসহ মধ্যাঞ্চলের জেলাগুলোতেও বন্যা হতে পারে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, ভারতে বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় তা দেশের কুড়িগ্রাম, সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলা থেকে প্রবেশে করে আরও এগিয়ে আসছে।
ফলে জামালপুর, বগুড়া, শেরপুর, গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, লালমনিরহাট, নীলফামারি ও পাবনায় বন্যা ছড়িয়ে পড়তে পারে। এছাড়া নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মৌলভিবাজারেও বন্যা ছড়িয়ে পড়তে পারে। বন্যার পানি আরও নীচের দিকে নেমে এলে রাজবাড়ী, ফরিদপুর, শরীয়তপুর ইত্যাদি এলাকাও প্লাবিত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এমন বিপর্যয়ের জন্য দায়ী হিন্দুত্ববাদী ভারত এবং তাদের এদেশীয় দালাল হাসিনা সরকার। তারা যদি সব মৌসুমে গেট খুলে রাখতো তাহলে পানির চলাচল স্বাভাবিক থাকতো। গ্রীষ্মকালে ভালো ফসল হতো। আর বর্ষাকালেও বন্যা হতো না। আর দালালহাসিনা সরকারও এসব সমস্যার সমাধানে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করে ভারতের চাতুকারিতাই করে চলেছে। তাই বিশ্লেষকগণ বলেছেন, এখনই সময় কে বন্ধু আর কে শত্রু চিনে নেওয়ার। সাথে এদেশে অবস্থিত হিন্দুত্ববাদীদের দালালদেরকেও চিনে রাখার।
প্রতিবেদক : উসামা মাহমুদ
তথ্যসূত্র :
১. খুলে দেয়া হয়েছে ভারতের গজল ডোবার সব গেট : আতঙ্কে লালমনিরহাটের মানুষ
– https://tinyurl.com/2p8dzpxa
২. বন্যা: সিলেট, সুনামগঞ্জে ভয়াবহ পরিস্থিতিতে লাখ লাখ মানুষ, বিচ্ছিন্ন সুনামগঞ্জ
– https://tinyurl.com/3hdmftv7
৩. বন্যা: উত্তরাঞ্চলের আরও ১৭টি জেলা দুদিনের মধ্যে প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা পূর্বাভাস কেন্দ্রের
– https://tinyurl.com/yy4mndnt
ভাই আপনার সাথে আছি লড়ে যান শত্রুর বিরুদ্ধে 🥰🥰
আল্লাহ আপনি আমাদের সকল মুসলিমদের পূর্ণ হেদায়েত দান করুন আমিন ইয়া রাব্বুল আলামিন।
আল্লাহ আপনি আমাদের সকল মুসলিমের জন্য সাহায্য সর্বোচ্চ সাহায্যকারী, আমাদেরকে সাহায্য করুন আমিন ইয়া রাব্বুল।