পূর্ব আফ্রিকা ভিত্তিক আল-কায়েদা সংশ্লিষ্ট ইসলামি প্রতিরোধ বাহিনী হারাকাতুশ-শাবাব। দলটি সোমালিয়া ও ইথিওপিয়া সীমান্ত লাইনে ইথিওপিয়ান সেনাদের বিরুদ্ধে একযোগে ভারী আঘাত হানতে শুরু করেছে। এতে এখন পর্যন্ত ইথিওপীয় বাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন ৩টি বড় শহর বিজয় করে নিয়েছেন আশ-শাবাবের বীর যোদ্ধারা।
আল-কায়েদার পূর্ব আফ্রিকা শাখা আশ-শাবাব সোমালিয়াতে তাদের হামলা অব্যাহত রেখেছেন। আশ-শাবাবের দৃষ্টি এখন সীমান্তবর্তী দখলদার দেশগুলোর উপরেও। এরমধ্যে রয়েছে খৃষ্টান প্রধান দেশ ইথিওপিয়া এবং কেনিয়া।
সেই সূত্র ধরেই গত ২০ জুলাই দুপুরের কিছুক্ষণ পর থেকে ইথিওপিয়া সীমান্তের বাকুল প্রদেশে হামলা চালাতে শুরু করেছে আশ-শাবাব। প্রদেশটি ইথিওপিয়া নিয়ন্ত্রণাধীন মুসলিম সোমালি অধ্যুষিত অঞ্চল।
স্থানীয় গণমাধ্যমে বলা হয়েছে যে, সীমান্ত লাইনে ইথিওপিয়ান প্রশাসন দ্বারা সমর্থিত ‘লিউ’ বাহিনীর ঘাঁটি লক্ষ্য করে একযোগে এই আক্রমণ শুরু করে আশ-শাবাব। যেখানে আশ-শাবাবের শত শত যোদ্ধা ভারি অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছেন। আশ-শাবাব যোদ্ধারা এতটাই প্রবল বেগে হামলা চালিয়েছেন যে, মাত্র কয়েক ঘন্টার লড়াইয়ে দখলদার ইথিওপিয় বাহিনীর শত শত সেনা নিহত এবং আহত হয়। সেই সাথে ইয়াদ, আটো এবং আয়াশাকু শহর বিজয়ের পাশাপাশি অর্ধডজনেরও বেশি সামরিক ঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন শাবাবের বীর প্রতিরোধ যোদ্ধারা।
স্থানীয় গণমাধ্যম সূত্র জানিয়েছে যে, আশ-শাবাবের দুর্দান্ত এই সফল অভিযানে এখন পর্যন্ত ইথিওপিয়ান সামরিক বাহিনীর অন্তত ২০০ সদস্য নিহত হয়েছে। বাকিরা পালিয়ে গেলেও আহত হয়েছে আরও কয়েক শতাধিক দখলদার সৈন্য। হতাহতের মাঝে বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ কমান্ডার ও কর্নেলও রয়েছে বলে জানা গেছে।
আশ-শাবাবের হামলার শিকার ইথিওপিয়ান সরকারের অধীনে ‘লিউ’ বাহিনী বেসামরিকদের বিরুদ্ধে জুলুম ও সামরিক শক্তির অপব্যবহারের জন্য পরিচিত।
সূত্র মতে, সীমান্ত অঞ্চলটি জুড়ে আজকেও ভারি অভিযান চালাচ্ছে আশ-শাবাব। বর্তমানে আশ-শাবাব বীর যোদ্ধারা ইথিওপিয়া নিয়ন্ত্রিত ওগাদিনীও শহরে প্রবেশ করেছেন, যেখানে লড়াই এখন তীব্র থেকে আরও তীব্রতর হচ্ছে।
অপরদিকে আশ-শাবাব মুজাহিদিন ইয়াদ আটো এবং ইয়াশাকু শহরের নিয়ন্ত্রণ পাওয়ার পর, এখন সোমালিয়ার আল-জাইর অঞ্চলের দিকে অগ্রসর হচ্ছেন। অর্থাৎ সীমান্ত অঞ্চলটির দু’টি ফ্রন্টে একযোগে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন মুজাহিদগণ।
উল্লেখ্য যে, সোমালিয়ায় কার্যক্রম ছাড়াও, আশ-শাবাবের লক্ষ্য কেনিয়া এবং ইথিওপিয়ার নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকা। যেখানে মুসলমানরা এই অমুসলিম দেশগুলোর দ্বারা প্রতিনিয়ত নির্যাতিত, নিষ্পেষিত হয়ে আসছেন।
বিশ্লেষকরা মনে করেন যে, আশ-শাবাব কর্তৃক পরিচালিত এই আক্রমণের পর ইথিওপিয়ান বাহিনী একটি বড় ধরনের এবং গুরুতর আঘাত পেয়েছে। যা এই অঞ্চলে ইথিওপিয়ার প্রভাবকেও প্রভাবিত করবে।
সোমালিয়ার সর্বশেষ পরিস্থিতি:
সরকারি হিসাব মতে, কেন্দ্রীয় সোমালিয়ার মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চলের ৭০ শতাংশ অঞ্চলে আশ-শাবাবের আধিপত্য রয়েছে। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চলের ৯০ শতাংশ এলাকাই নিয়ন্ত্রণ করছে আশ-শাবাব। অপরদিকে দেশের উত্তরাঞ্চলের স্বায়ত্তশাসিত সোমালিল্যান্ড এবং পুন্টল্যান্ডেরও বিস্তৃত অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করছে আশ-শাবাব। বিশেষ করে সোমালিল্যান্ডের প্রায় ৩০-৩৫ শতাংশ এলাকাই নিয়ন্ত্রণ করছে আশ-শাবাব। একই সাথে প্রতিবেশি দেশ কেনিয়ার উত্তরাঞ্চলের প্রায় অর্ধেকেরও বেশি অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করে দলটি।
সব মিলিয়ে পশ্চিমা-সমর্থিত মোগাদিশু প্রশাসনের উপস্থিতি দেশের প্রায় ৩০ শতাংশে রয়েছে। যেখানে রীতিমতো আশ-শাবাবের হামলার শিকার হচ্ছে সোমালি বাহিনী। আর জনগণ তাদের প্রয়োজনে আশ-শাবাব প্রশাসনের কাছেই যায়।
কেন্দ্রীয় সোমালিয়ার মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চলে আশ-শাবাবের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকার ম্যাপ। যেখানে সবুজ চিহ্নিত অংশ নিয়ন্ত্রণ করছেন আশ-শাবাব মুজাহিদিন এবং লাল অংশ নিয়ন্ত্রণ করছে গাদ্দার সোমালি সরকার।
উল্লেখ্য, এই ম্যাপে সোমালিয়ার উত্তরাঞ্চলের স্বায়ত্তশাসিত সোমালিল্যান্ড এবং পুন্টল্যান্ডে আশ-শাবাবের নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল যুক্ত করা হয়নি। এতে শুধু দেশের কেন্দ্রীয় এবং দক্ষিণাঞ্চলে আশ-শাবাবের নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল দেখানো হয়েছে।
পূর্ব আফ্রিকায় আশ-শাবাব যে ক্ষিপ্র গতিতে প্রভাব বিস্তার করে চলেছে, তাতে করে ইসলামি বিশ্লেষকগন আশা প্রকাশ করে বলেছেন যে, এই অঞ্চলেও অচিরেই আফগানিস্তানের মত শক্তিশালী ইসলামি ইমারত প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ইনশাআল্লাহ। তবে আফগানিস্তানে পশ্চিমা ক্রুসেডার জোট চুক্তি করে অনেকটা নিরাপদে আফগানিস্তান ত্যাগ করার সুযোগ পেলেও, সোমালিয়া তথা পূর্ব-আফ্রিকায় যে সেই সুযোগ তাদেরকে দিবে না আশ-শাবাব, সেটা অনেকটা নিশ্চিত করেই বলছেন তাঁরা।
লেখক : ত্বহা আলী আদনান
আলহামদুলিল্লাহ, সুম্মা আলহামদুলিল্লাহ। এভাবেই একদিন আসবে ইসলামের সোনালী দিন।
আলহামদুলিল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ
আলহামদুলিল্লাহ