এক আরাকানী মুসলিমের আর্তনাদ!

0
987

আরাকানে এখন এমন কোন এলাকা নেই যেখানে মুসলিমরা নিরাপত্তার সাথে জীবন-যাপন করতে পারছে। প্রতিদিনই কেউ না কেউ গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হচ্ছেন। ফলে নিরাপত্তার স্বার্থে ঘর-বাড়ি ছেড়ে বন-জঙ্গলে আশ্রয় নিচ্ছেন তারা। দুই সপ্তাহ আগে, বুথিডাং টাউনশিপের গুতা পাইন গ্রামে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী ও আরাকান আর্মির মধ্যে যুদ্ধ তীব্র রূপ ধারণ করে। ফলে শত শত মুসলিম গ্রামবাসী পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। তাদের বর্তমান অবস্থা জানিয়ে বিশ্ববাসীর প্রতি করুণ চিঠি লিখেছেন এক রোহিঙ্গা মুসলিম।

চিঠিটির ভাবানুবাদ-

“প্রিয় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে আপনাদেরকে বিনীত অনুরোধ করছি।

বুথিডাং টাউনশিপে প্রায় ৮০০ উদ্বাস্তু মুসলিমের জন্য জরুরি খাবারের প্রয়োজন। গত দুই সপ্তাহ ধরে রাখাইন রাজ্য, বুথিডাং টাউনশিপ ও গুতা পাইন রোহিঙ্গা গ্রামে আরাকান আর্মি এবং মিয়ানমার সেনাবাহিনী অবস্থান নিয়েছে। তারা এখানে তুমুল যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে।

দুই সপ্তাহেরও বেশি হয়েছে আমরা গ্রাম ছেড়ে চলে এসেছি। এখন পর্যন্ত আমরা গ্রামে ফিরতে পারিনি। লুজ গ্রামে এখন আরাকান আর্মি নেই। শুধু সেনাবাহিনী। আর আরাকান আর্মি গ্রামের পশ্চিম দিকের জঙ্গল এবং পূর্বে অবস্থান নিয়েছে। আমরা জানি না কখন আবার যুদ্ধ শুরু হয়। এখানে ১৩০ এর বেশি রোহিঙ্গা পরিবার রয়েছে, লোকসংখ্যা প্রায় ৮০০।

পুরোপুরি গ্রামে ফেরার অবস্থা দেখছি না। ফিরতেও পারছি না। গত ৮ অক্টোবর আরাকান আর্মি একজন বিজ্ঞ ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা করেছে। তাই এখন গ্রামে যাওয়ার সাহস পাচ্ছি না। এই মুহূর্তে, আমারা যে আশ্রয়স্থলগুলি খুঁজে পেতে পারি সেগুলি হলো সায়েং ফাই, ফু খাও ক্রিক এবং সাং টাউং গ্রামে। আমারা এখানে কঠিন সময় পার করছি।

আমাদের জরুরি খাদ্য সহায়তা দরকার। এখানে কোন এনজিও (বেসরকারি সংস্থা) আসতে পারছে না। সেনাবাহিনী তা নিষিদ্ধ করে রেখেছে। আমাদের কেউ সাহায্য করতে আসবে কি না তাও জানি না। গুতা পাইন গ্রামের স্থানীয় এক বাসিন্দার মাধ্যমে জানতে পারলাম, সেখানে ২-৩ টি পরিবার পৃথক বাড়িতে বসবাস করছে। কিছুদিনের মধ্যেই তারা দুর্ভিক্ষ ও বিভিন্ন রোগের মুখোমুখি হতে পারে।

বুথিডং টাউনশিপে সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও আরাকান আর্মির মধ্যে ঘন ঘন সংঘর্ষ হচ্ছে। ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২ তারিখে, মিডল রিভার ব্যাটালিয়নের ৮ম ব্যাটালিয়ন রোহিঙ্গা গ্রামগুলির আশেপাশে ভারী অস্ত্র এবং হালকা অস্ত্র দিয়ে হামলা চালিয়েছে। এতে এক রোহিঙ্গা শিশু নিহত ও চার রোহিঙ্গা আহত হয়েছে। যুদ্ধের ফলে খিং চাও, কিং চাও এবং থাবাং তাউং গ্রাম থেকে প্রায় ১ হাজার রোহিঙ্গা পার্শ্ববর্তী গ্রামে পালিয়ে গেছে। সেপ্টেম্বরের শেষে, উভয় পক্ষের গোলাগুলি প্রশমিত হয় এবং গ্রামবাসী তাদের গ্রামে ফিরে আসে। বুথিডাং টাউনশিপের দক্ষিণে আরাকান আর্মি এবং সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে অবস্থান নিয়েছে। তারা এখনো যুদ্ধ করছে।”

উল্লেখ্য যে, এই চিঠি লেখার পরবর্তী সময়ে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর আগের থেকে আরও বেশি হামলা হচ্ছে। এছাড়াও সাম্প্রতিক সময়ে আরও ৪ রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ নিহত হয়েছেন। এমনকি বুধবার ১৯ অক্টোবর বুথিদাং টাউনশিপে মুহাম্মদ ইউনুস নামে ৪৫ বছর বয়স্ক এক যুবক নিহত হয়েছেন। ফলে আরও বেশি মুসলিম এখন উদ্বাস্তু হচ্ছেন। তাদের বেঁচে থাকার জন্য জরুরী সাহায্যের প্রয়োজন।


তথ্যসূত্র:
——
1. Two weeks ago, hundreds of Rohingya villagers from Guda Pyin village in Buthidaung Township had to flee as the fighting between Myanmar Military and Arakan Army intensified. They need emergency assistance. The letter was sent by a villager today-
https://tinyurl.com/2xsnfpv8
2. A Rohingya Killed-
https://tinyurl.com/2p8czavb

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধআমাদের দেশে শরিয়াহ আইন প্রয়োগ করা উচিত: ইন্দোনেশিয়ার আধ্যাত্মিক ধর্মীয় নেতা
পরবর্তী নিবন্ধআল-ফিরদাউস নিউজ বুলেটিন || অক্টোবর ২য় সপ্তাহ, ২০২২ঈসায়ী