ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল। তালিবান মুজাহিদগণ ক্ষমতায় আসার পরই রাজধানী পুনর্গঠন ও সংস্করণের জন্য ১৮০টি প্রকল্প নিয়ে কাজ শুরু করেন। এই প্রকল্পের অধিকাংশ কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে বলে জানা গেছে, বাকিগুলোর কাজ অব্যাহত রয়েছে।
রাজধানী কাবুল পৌরসভা বর্তমানে ৫ মিলিয়ন জনসংখ্যার শহর। এর অবকাঠামো ও সুপারস্ট্রাকচার কাজের জন্য একটি বড় বাজেট বরাদ্দ করেছে ইমারাতে ইসলামিয়া প্রশাসন। জানা যায় যে, এই ১৮০টি প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে বনায়ন, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ, রাস্তা নির্মাণ ও সম্প্রসারণের মতো অনেকগুলো প্রকল্প। এগুলোর মোট ব্যয় ৯০ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে বলে জানা গেছে।
এই প্রকল্পগুলোর মধ্যে আরও রয়েছে, বিভিন্ন ভিলার চারপাশের উঁচু প্রাচীরগুলো ভেঙে ফেলার কাজ। এগুলো মার্কিন সমর্থিত কাবুল প্রশাসনের যুদ্ধবাজ নেতারা দখল করে রেখেছিল। ইতিমধ্যে এসব দেয়াল ভেঙ্গে শহরের অনেক রাস্তাই বেসামরিক যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়েছে।
কাবুলের লোকেরা জানিয়েছেন যে, ইমারাতে ইসলামিয়া প্রশাসন সম্প্রতি এমন কিছু রাস্তা ও জায়গা জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছেন, যেগুলো তারা গত দুই দশকেও দেখেননি।
৪৯ বছর বয়সী কাবুলের বাসিন্দা ফাহাদ বলেন, “ক্ষমতাশালী লোকেরা আগে এসব জায়গায় বাস করত। তারা এই সমস্ত সম্পত্তি ও সড়কগুলো বেআইনিভাবে দখল করে রেখেছিল।”
সরকারি প্রকল্পের সম্পত্তিগুলো যারা দখল করে এতদিন মালিক বনে বসেছিল, তাদের থেকে এসব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হচ্ছে। সেই সাথে সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস ও ক্ষতির জন্য তাদের কাছ থেকে জরিমানা আদায় করা হচ্ছে।
৬৮ বছর বয়সী কাবুলের বাসিন্দা শাহরুদ্দিন বলেন, “আমরা দীর্ঘদিন ধরে এর জন্য অপেক্ষা করছিলাম। তালিবানরা পুরানো সরকারের চেয়ে অনেক বেশি সৎ। তাই আমরা তাদেরকে আমাদের অর্থ প্রদানের জন্য বিশ্বস্ত মনে করি।”
এদিকে কাবুলের পুনর্গঠন প্রকল্পের মুখপাত্র নেয়ামতুল্লাহ বারাকজাই বলেছেন যে, এসব প্রকল্পের জন্য তাদের বিদেশী সাহায্যের প্রয়োজন নেই। “আমরা এখন নিজেদের সমস্যা সমাধান করতে এবং কাবুলকে আরও ভালো জায়গায় নিয়ে যেতে সক্ষম, আলহামদুলিল্লাহ।”
বারাকজাই আগের সরকের সময় থেকেই দীর্ঘদিন ধরে কাবুলের পৌরসভায় কাজ করছেন। তিনি আরও বলেন যে, “নতুন প্রশাসনের সাথে কাজ করে আমি খুবই আনন্দিত। এখন আর ক্ষমতাধর লোকেরা সরকারি প্রকল্পগুলো আটকাতে পারছে না। এর ফলে পরিকল্পনাগুলো সহজেই বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে।”
কাবুলে বসবাসকারী ৫৫ বছর বয়সী ব্যবসায়ী আবিদও নতুন প্রশাসনের প্রকল্পগুলোকে সমর্থন করেন। বাজেয়াপ্ত প্রক্রিয়ার কারণে তার বাড়ির কিছু অংশ ধ্বংস করা হলেও, তিনি তালিবান প্রশাসনের পদক্ষেপগুলোর প্রশংসা করেছেন।
আবিদ বলেন, “অতীতে দুর্নীতি এবং ঘুষ, গ্যাংদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছিল শহর। কিন্তু এখন এসবের কিছুই এখানে নেই। আমরা শান্তিতে থাকতে পারছি। আমি নতুন প্রশানকে বিশ্বাস করি, কেননা এই প্রশাসন সৎ। তাঁরা সামরিক এবং রাজনৈতিক উভয় দৃশ্যপটেই এখন দেশের অমূল পরিবর্তন আনছেন।”
এদিকে যুদ্ধবাজ রশিদ দোস্তমের প্রাসাদটি এই প্রকল্পের অধীনে পড়েছে। ফলে প্রাসাদের দেয়ালগুলো জোনিং প্রকল্পের অংশ হিসাবে ভেঙে ফেলা হয়েছে এবং সরকারি সম্পত্তি হিসাবে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
দোস্তমের প্রাসাদের কারণে দীর্ঘদিন ধরে রাস্তা অবরোধ হয়ে থাকা এবং এবং শহরে যানজট সৃষ্টি হবার অভিযোগ ছিল। এখন এর দেয়ালগুলো ভেঙ্গে ফেলায় বেসামরিক লোকজন এই রাস্তা ব্যবহার করতে পারছেন এবং এই এলাকার যানজট দূর হয়েছে বলে জানা গেছে।
এই প্রকল্পের অধীনে রাস্তার মোড়ে মোড়ে দাঁড় করিয়ে রাখা মূর্তিও ধ্বংস করা হচ্ছে। আহমদ শাহ মাসুদের মতো বিভিন্ন যুদ্ধবাজ ও নেতাদের মূর্তিগুলো ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। সেগুলোর পরিবর্তে কিছু জায়গায় সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য বেশ কিছু স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে।
এছাড়াও, এই প্রকল্পের অধীনে শহরের দরিদ্র এলাকায় পুরনো ভবন ভেঙে নতুন ভবন নির্মাণ এবং রাস্তা নির্মাণের কাজ অব্যাহত রয়েছে। তালিবান সরকার কাবুলের বস্তিগুলো পুনর্নবীকরণের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সড়কগুলোর সাথেও সংযোগ সড়ক গড়ে তুলছেন।
কাবুলের বাসিন্দা ৩০ বছর বয়সী মুহম্মদ মুহসিন বলেন, “এই রাস্তা ও বস্তি পুনর্নির্মাণ আমাদের জন্য অনেক প্রয়োজন ছিল।”
এভাবেই আল্লাহ তা’আলার ইচ্ছায় আফগানিস্তানের জনগণ শরিয়াহ শাসনের সুফল ভোগ করতে শুরু করেছেন, আলহামদুলিল্লাহ।
লিখেছেন : আলী হাসনাত
Alhamdulillah
الحمد لله. اللهم وفقنا لما تحب وترضى. آمين
সুবাহান আল্লাহ