ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে একাধিক আগ্রাসী পদক্ষেপ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে দখলদার ইসরাইল। সম্প্রতি পশ্চিম তীরে ইসরাইলি দখলদারিত্ব নিয়ে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বিচার আদালত বিশেষজ্ঞ মতামতের আহ্বান জানিয়েছিল সংস্থাটি৷ ৩০ ডিসেম্বর সাধারণ পরিষদের ভোটাভুটিতে ফিলিস্তিনের পক্ষে রায় আসে৷
তবে ভোটাভুটিতে ফিলিস্তিনের পক্ষে রায় এলেও ইসরাইলের বিরুদ্ধে কোন রকম পদক্ষেপ নেয়ার ক্ষমতা নেই সংস্থাটির। আর এমন ধোঁকাপূর্ণ ভোটের মঞ্চ তৈরি করে ফিলিস্তিনের ওপর দখলদার ইসরাইলি আগ্রাসনকে আরও বেপরোয়া করে তুলেছে জাতিসঙ্ঘ নামক দালাল সংস্থাটি। আর এর পরপরই এ রায়ের প্রতিক্রিয়ায় ইসরাইলের নতুন প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এ ঘোষণা দেয়।
দখলদার প্রধানমন্ত্রীর ফেসবুকে পোস্ট করা এক বিবৃতিতে বলা হয়, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ জাতিসংঘে আবেদনের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ‘ইসরাইল রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ও আইনী যুদ্ধে জড়িয়েছে। বর্তমান সরকার এই যুদ্ধের মুখে বসে থাকবে না বরং প্রয়োজনমত ব্যবস্থা নিবে৷’
আর এ ব্যবস্থার অংশ হিসেবে এরইমধ্যে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ যোদ্ধাদের হামলার শিকার ইসরাইলি পরিবারকে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের তহবিল থেকে প্রায় চার কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইসরাইল৷ ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে এই অর্থ কর হিসাবে সংগ্রহ করেছিল দখলদার ইসরাইল৷ দখলকৃত পশ্চিম তীরের ‘এরিয়া সি’তে ফিলিস্তিনের একটি নির্মাণ প্রকল্পকেও নিষেধাজ্ঞায় আওতায় আনা হয়েছে৷ এই অঞ্চলটি পুরোটাই এখন ইসরাইলের নিয়ন্ত্রণে৷
পাশাপাশি ফিলিস্তিনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়ার কথাও উল্লেখ করেছে তারা৷ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইসরাইলের বিরুদ্ধ রাজনৈতিক ও আইনী লড়াই চালানো কোন ভিআইপিকে’ ইসরাইল সরকার কোনো সুযোগ প্রদান করবে না৷’
এছাড়াও উন্মুক্ত স্থানে ফিলিস্তিনের পতাকা প্রদর্শন নিষিদ্ধ করেছে ইসরাইল। ইসরাইলের জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন-গ্যভির পাবলিক স্পেস থেকে ফিলিস্তিনি পতাকা অপসারণের নির্দেশ দিয়েছে।
নতুন সরকার ক্ষমতা নেয়ার পর থেকেই বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে বেশ কয়েকটি ফিলিস্তিনি মালিকানাধীন বাড়ি। হত্যা করা হয়েছে এক ডজন ফিলিস্তিনিকে। ধরপাকড় চালিয়েছে জেরুজালেম ও পশ্চিম তীরে।
উল্লেখ্য, গত ৫ জানুয়ারি শপথ নেয়া নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন জোটকে ইসরাইলের এ যাবৎকালের সবচেয়ে কট্টরপন্থি সরকার হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে৷ গোলান মালভূমি, পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমের বিতর্কিত অঞ্চলে স্থাপনা গড়ে তোলার কাজ সম্প্রসারিত করা হবে বলে জানিয়েছে তারা৷
অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরাইলের স্থাপনা গড়ে তোলাকে আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে বেআইনী হিসেবে দেখে থাকে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত ও জাতিসংঘ; কিন্তু এখন পর্যন্ত ইসরাইলের এসব কাজে বাধা দেয়নি তারা। বরং দখলদারিত্বের প্রথম দিন থেকেই অবৈধ রাষ্ট্রটিকে স্বীকৃতি দানের মাধ্যমে সকল জুলুম-আগ্রাসনকে বৈধতা দিয়ে যাচ্ছে সংস্থাটি।
মুসলিমরা যাতে নববী সুন্নাহ মোতাবেক পদক্ষেপ গ্রহণের দিকে পা না বাড়ায়, এজন্যই মূলত এই দালাল সংস্থাটি কয়েকদিন পর পরই নতুন নতুন কৌশল নিয়ে হাজির হয়। জাতিসংঘ হয় ইসরাইলের নিন্দা জানাচ্ছে নতুবা ইসরাইলের কাজ আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী বৈধ নয় বলে বিবৃতি দিচ্ছে। আর এভাবে বিবৃতি ও নিন্দা জ্ঞাপনের মাধ্যমে দখলদার ইসরাইলের বিরুদ্ধে মুসলিম উম্মাহ যেন কোন পদক্ষেপ নিতে না পারে এ ব্যবস্থা করে যাচ্ছে। আর মুসলিমদের অনেকের মনেই এখনো এই ধারণা বদ্ধমূল হয়ে আছে যে, জাতিসংঘই ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার জন্য কাজ করে যাচ্ছে; যা আদতে কোন দিনও সম্ভব নয় বলেই প্রতীয়মান হয়।
তথ্যসূত্র:
——–
১। জাতিসংঘে ভোটের জেরে ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে ইসরাইলের ব্যবস্থা-
– https://tinyurl.com/yy448585
২। ben gvirs ban on palestinian flag racist behavior-
– https://tinyurl.com/58db56bj