পূর্ব আফ্রিকায় কেনিয়া ও সোমালিয়ার আন্তঃসীমান্ত অঞ্চলে আশ-শাবাব মুজাহিদিনের হামলা তীব্র আকার ধারণ করছে। হামলায় বহু কেনিয়ান সৈন্য হতাহত হচ্ছে, সেই সাথে ধ্বংস করা হচ্ছে শত্রুদের সামরিক যান।
গত সপ্তাহেও এ ধরনের ৭টি সফল হামলা চালিয়েছেন হারাকাতুশ শাবাব যোদ্ধারা। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আল-কায়েদা সংশ্লিষ্ট ইসলামি প্রতিরোধ বাহিনী হারাকাতুশ শাবাব আল-মুজাহিদিন গত ১৭ জানুয়ারি কেনিয়ায় ব্যাপক হামলা চালিয়েছেন।
প্রথম হামলাটি চালানো হয় কেনিয়ার উপকূলীয় লামু রাজ্যের ইগারী শহরে, কেনিয়ান বাহিনীর একটি সামরিক কনভয় লক্ষ্য করে। এতে ক্রুসেডার কেনিয়ান বাহিনীর ৯টি সামরিক গাড়ি ধ্বংস হয়ে যায়। সেই সাথে বহু সংখ্যক সৈন্য হতাহত হয়।
শাবাব মুজাহিদিন এদিন তাদের দ্বিতীয় হামলাটি চালান “আলগিস-মালহাডন” এলাকায়। স্থানীয় গণমাধ্যম সূত্র জানায়, অতর্কিত এই হামলাটি চীনা প্রকৌশলীদের একটি দলকে টার্গেট করে চালানো হয়েছিল। হামলার ফলস্বরূপ প্রকৌশলীদের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ২ কেনিয়ান সেনা নিহত এবং অন্য ৪ জন আহত হয়। সেই সাথে ১টি জ্বালানি ট্যাঙ্কার, ১টি ডাম্প ট্রাক এবং অন্য একটি ছোট ট্রাক ধ্বংস হয়।
কেনিয়ান পুলিশ জানায়, এক সপ্তাহে প্রকৌশলীদের উপর এটি শাবাব মুজাহিদিনের দ্বিতীয় হামলা। এর আগের হামলাটি বোরার ল্যাপসেট রোডে একটি বিস্ফোরক দ্বারা চালানো হয়েছিল, যেটি আগে থেকেই পুঁতে রাখা হয়। ঐ হামলায় কেনিয়া ন্যাশনাল হাইওয়েজ অথরিটির (কেনহা) চার প্রকৌশলী নিহত হয় এবং বাকিরা আহত হয়। পরিস্থিতি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় আহতদের একটি সামরিক ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয় তখন।
১৮ জানুয়ারি বুধবারেও কেনিয়ার হালুকা শহরে কেনিয়ান বাহিনীকে টার্গেট করে আরও একটি অতর্কিত হামলা চালান মুজাহিদগণ। সেখানে মুজাহিদদের বোমা হামলায় কেনিয়ান বাহিনীর একটি সামরিক ট্রাক সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায় এবং তাতে থাকা সমস্ত সৈন্য নিহত হয়।
একই দিন বুধবারেই গারিসা রাজ্যের রোকি গ্রামে কেনিয়ান বাহিনীর একটি টহলরত দলকে টার্গেট করে হামলা চালান আশ-শাবাবের প্রতিরোধ যোদ্ধারা। ঐ হামলাতেও বহু সংখ্যক কেনিয়ান সৈন্য হতাহত হয়; তবে হতাহতের সুনির্দিষ্ট সংখ্যা জানা যায়নি।
এর আগে গত ১৬ জানুয়ারি সোমবারেও কেনিয়ার ওয়াজির রাজ্যের গারসু এলাকায় পরপর দুটি সফল হামলা চালিয়েছিলেন মুজাহিদগণ। হামলা দুটি কেনিয়ান বাহিনীর ২টি পৃথক সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে চালানো হয়। এতে ক্রুসেডার বাহিনীর মাঝে হতাহতের ঘটনা ঘটে, তবে এই হামলাতেও ক্ষয়ক্ষতির সুনির্দিষ্ট সংখ্যা জানা যায়নি।
সর্বশেষ গত সপ্তাহের রবিবারেও মান্দিরা রাজ্যের দামাসি এবং জাবি এলাকার ২টি সামরিক ঘাঁটিতে অতর্কিত হামলা চালান মুজাহিদগণ। এতে শত্রু শিবিরে হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটে। তবে এলাকাগুলোও শত্রু নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে হওয়ায় হতাহতের সুনির্দিষ্ট সংখ্যা এক্ষেত্রেও জানা যায়নি।
উল্লেখ্য যে, হারাকাতুশ শাবাব আল-মুজাহিদিন সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কেনিয়ায় তাদের সামরিক উপস্থিত বাড়িয়েছে। কেনিয়ান সরকার, সেনা বাহিনীর কেন্দ্র, যোগাযোগ লাইন এবং লজিস্টিক রুটকে লক্ষ্য করে মুজাহিদগণ তাদের এসকল হামলা পরিচালনা করছেন। একই সাথে তাঁরা কেনিয়াতে অবস্থিত পশ্চিমা-কেন্দ্র এবং মার্কিন ঘাঁটিগুলিকেও লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছেন। এছাড়াও প্রায়শই চীনা প্রকল্পগুলিকেও লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছেন তাঁরা।
২০২১ সালের জানুয়ারিতে, কেনিয়ার মান্দেরা রাজ্যের গভর্নর আলি রোবা বলেছিল যে, হারাকাতুশ শাবাব আল-মুজাহিদিন উত্তর কেনিয়ার অর্ধেকেরও বেশি এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে।
প্রতিবেদক : ত্বহা আলী আদনান