ভালোবাসা দিবস আমাদের যা দিয়েছে

    0
    1008

    ভালোবাসা—শব্দটি শুনতে মধুর। কিন্তু, ‘ভালোবাসা দিবস’ এর ভালোবাসা শব্দটিতে যেন সেই মধুরতা নেই। এই ভালোবাসায় লুকিয়ে আছে কামোন্মোত্ততা, লোলুপতা, কারও কারও আবার আছে ব্যবসায়িক স্বার্থ। ভালোবাসা দিবসকে কেন্দ্র করে কথিত ভালোবাসার দাবিদার প্রেমিক-প্রেমিকাদের মধ্যে কামোত্তেজনার জোয়ার আসে। সেই জোয়ারে ভেসে যায় নীতি-নৈতিকতা, ধর্ষণের শিকার হয় নারী; আর সৃষ্টি হয় সামাজিক বিশৃঙ্খলা।

    ভালোবাসা দিবসকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে নানা আয়োজন-উৎসব চলে। এদেশে আগে এমন হতো না, এখানে এই দিবস আমদানি করেছে পাশ্চাত্য আদর্শের অনুসারীরা। ভোগবাদী পশ্চিমা সমাজ এই দিনকে কেন্দ্র করে আরও বেশি উন্মাদে পরিণত হয়, ‘ভালোবাসা’ এর বহিঃপ্রকাশ ঘটায় যৌন হামলার মাধ্যমে।

    দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ কম্বোডিয়ায় বছরের সবচেয়ে ভয়ানক দিন হিসেবে অভিহিত করা হয় এই ‘ভালোবাসা দিবস’-কে। পশ্চিমাদের অনুসারীরা বাংলাদেশে সেই ভয়ানক দিনকেই মহিমান্বিত রূপে তুলে ধরতে চেষ্টা করে মিডিয়ার মাধ্যমে। ক্লোজআপ যুবক-যুবতীদের শোনায় ‘দ্বিধা ভেঙ্গে কাছে আসার গল্প’। কিন্তু এই ‘ভালোবাসা দিবস’ আমাদের কী দিয়েছে?

    প্রতি বছর এই দিনে দেশজুড়ে বহু নারী ধর্ষণের শিকার হন, অনেকে আবার স্বেচ্ছায় নিজের সম্ভ্রম তুলে দেয় দুশ্চরিত্র লোকের হাতে। যার ফলশ্রুতিতে নর্দমার নালা কিংবা ডাস্টবিনে পাওয়া যায় নবজাতকের লাশ।

    এ বছরও ভালোবাসা দিবসে হবিগঞ্জ শহরের একটি ড্রেন থেকে অজ্ঞাত পরিচয়ের এক নবজাতকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, ১৪ই ফেব্রুয়ারি দুপুরে শহরের কালিগাছতলা মন্দিরের পাশের একটি ড্রেনে কয়েকটি কুকুর একটি নবজাতকের মরদেহকে ঘিরে থাকে। এ দৃশ্য দেখে পথচারীরা পুলিশকে খবর দেন। এভাবে এক ভালোবাসা দিবসে নারী সম্ভ্রম বিলিয়ে দেয়, আরেক ভালোবাসা দিবসে কুকুরের মুখ থেকে উদ্ধার করা হয় নবজাতকের লাশ।

    আর প্রতিবারের মতো এ বছরও ভালোবাসা দিবসে ঘটেছে ধর্ষণের ঘটনা। নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে বিউটি পার্লারে কর্মরত এক নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। মঙ্গলবার ভালোবাসা দিবসে বাড়িতে একা পেয়ে তাকে ধর্ষণ করে ফরহাদ ওরফে সোহান খান নামে এক যুবক। ক্লোজআপের ভাষায় একে বলা যায়, ফরহাদ দ্বিধা ভেঙ্গে ঐ নারীর কাছে গিয়েছে।

    এছাড়া, বিভিন্নভাবে যৌন হয়রানির ঘটনার খবরও শোনা গেছে। মাদারীপুরের কালকিনিতে ভালোবাসা দিবসের দিন প্রাইভেট শেষে বাড়ি ফেরার পথে একই সঙ্গে দুই স্কুলছাত্রীকে যৌন হয়রানি করেছে ইমন সরদার (২১) ও মাসুদ ইসলাম (১৯) নামে দুই বখাটে। মঙ্গলবার সন্ধ্যার পরে এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানা যায়।

    এমন কত ঘটনা যে ঘটেছে এই ভালোবাসা দিবসে, তার সঠিক পরিসংখ্যান আসলে জানা সম্ভব নয়। কারণ সব তথ্য তো মিডিয়ায় আসে না। তবে আশপাশে তাকালেই বুঝা যায়, কতটা ভয়ানক অবস্থার জন্ম দেয় কথিত ভালোবাসা দিবস!

    এই ভালোবাসার নামে কথিত প্রেমিকরা কী করে তার কিছু নমুনা তুলে ধরছি, যেন আপনাদের ঘুম ভাঙ্গে-

    প্রেমিকাকে বেড়াতে নিয়ে ধর্ষণ! https://tinyurl.com/yuhp4arr
    প্রেমিকাকে ধর্ষণ করে প্রেমিক, ভিডিও করে বন্ধুরা https://tinyurl.com/nabvfcy2
    বিয়ের আশ্বাসে প্রেমিকাকে ধর্ষণ, কলেজছাত্র কারাগারে https://tinyurl.com/2csfhd2z
    থার্টি ফাস্ট নাইটে প্রেমিকাকে ধর্ষণ করল প্রেমিক https://tinyurl.com/3t3rbkp2
    ফেসবুকে প্রেম, মায়ের সঙ্গে দেখা করাতে নিয়ে প্রেমিকাকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ https://tinyurl.com/2p8c9fej
    প্রেমিকাকে ডেকে বন্ধুদের নিয়ে রাতভর ধর্ষণ https://tinyurl.com/7rmsrym3
    ভালোবাসা পালনের নামে প্রেমিকাকে ধর্ষণ, প্রেমিক গ্রেপ্তার https://tinyurl.com/yfxjcbsm
    প্রেমিকাকে ধর্ষণের পর তিনজনের কাছে ছেড়ে দিল প্রেমিক https://tinyurl.com/4jue9jdv
    মোবাইলে প্রেমের সম্পর্ক, বেড়াতে নিয়ে প্রেমিকাকে ধর্ষণ! https://tinyurl.com/msyartkc
    ভালোবাসা দিবসে প্রেমিকাকে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ, কথিত প্রেমিক গ্রেফতার https://tinyurl.com/2p8pv332

    আর এই ভালোবাসাকেই এতো মহিমান্বিত করে আমাদের যুব সমাজের সামনে উপস্থাপন করা হচ্ছে। এই বেহায়াপনাকেই সমাজে স্বাভাবিক করা হয়েছে। এই ভালোবাসার পরিণাম হচ্ছে দিহান-আনুশকা। এই ভালোবাসার পরিণাম হচ্ছে ডাস্টবিনে পরে থাকা নবজাতকের কান্না। এই ভালোবাসার পরিণাম হচ্ছে কুকুরের হিংস্রতায় ছিন্ন-ভিন্ন নবজাতকের লাশ। এই ভালোবাসার পরিণাম হচ্ছে হাজারো যুবক-যুবতীর ব্যাভিচার। এই ভালোবাসার পরিণাম হচ্ছে শত শত যুবক-যুবতীর আত্মহত্যা। এই ভালোবাসার পরিণাম হচ্ছে হাজারো যুবতীর ধর্ষণ।

    অথচ যুবক-যুবতীর যৌবনের এই তাড়নাকে ইসলাম হালালভাবে পূরণ করার ব্যবস্হা করেছে বিয়ের মাধ্যমে। ইসলাম বিয়েকে সহজ করেছে। বিয়ের মাধ্যমে একই সাথে যেমন যৌবনের তাড়না মিটে, তেমনি ভাবে জুড়ে দেয়া হয় দায়িত্ববোধ।

    অথচ আজ সমাজে বিয়েকে কঠিন করা হয়েছে নানা ভাবে – ১৮ এর আগে বিয়ে করা যাবে না, পড়ালেখা শেষ না করে বিয়ে করা যাবে না,চাকরি না পেলে বিয়ে করা যাবে না,সমাজের বেঁধে দেয়া মানদন্ড অনুযায়ী “প্রতিষ্ঠিত” না হলে বিয়ে করা যাবে না, মোটা যৌতুক না হলে বিয়ে হয় না – এমন আরও কত শত বাধা।

    উপরন্তু হারাম ভালোবাসাকে, বেহায়াপনাকে, জেনা-ব্যাভিচারকে অত্যন্ত আকর্ষণীয়, অত্যন্ত মহিমান্বিত এবং ‘স্বর্গীয়’ হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। এই ভালোবাসা দিবস আপনাকে, আমাকে, আমাদের যুবক-যুবতীদেরকে, আমাদের পুরো সমাজকে কী দিয়েছে তা কি বুঝতে পারছেন এখনও? ঘুম ভেঙ্গেছে কি? এর জন্য আপনাকে খুব বেশি কষ্ট করতে হবেনা, শুধু সেক্যুলারিজমের চশমাটি চোখ থেকে খুলে রাখলেই সবকিছু দিবালোকের মতো স্পষ্ট হয়ে যাবে।



    লিখেছেন : সাইফুল ইসলাম

    মন্তব্য করুন

    দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
    দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

    পূর্ববর্তী নিবন্ধআফগানে শরিয়া শাসন: কাস্টমস রাজস্ব আদায়ে রেকর্ড!
    পরবর্তী নিবন্ধইরিত্রিয়ান বাহিনীর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ২৯ সৈন্য শাবাব মুজাহিদিনের হাতে নিহত