পূর্ব-তুর্কিস্তানের উইঘুর মুসলিমদের উপর নাস্তিক চীনের পরিকল্পিত গণহত্যা এখন বিশ্ববাসীর সামনে প্রকাশ্য। সেখানে কথিত পুনঃশিক্ষা ও সন্ত্রাস দমনের নামে লাখ লাখ মুসলিমকে কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে বন্দী করে অমানবিক নির্যাতন চালাচ্ছে দখলদার হান চাইনিজরা। ক্যাম্পগুলোতে অবাধে চলছে মুসলিম নর-নারীদের হত্যা ও ধর্ষণ, জোরপূর্বক অঙ্গ-অপসারণ, বন্ধ্যাকরণ, কিংবা নানান বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা চালিয়ে মুসলিমদের পঙ্গু করে দেওয়ার ঘটনা। মানব ইতিহাসে কোন জাতির উপর এমন পরিকল্পিত বিপর্যয় ও গণহত্যা হয়তো আর নেমে আসেনি কখনো।
আর দশকের পর দশক ধরে দখলদার অপশক্তি চীনের হাতে পাশবিক নির্যাতনের শিকার তুর্কিস্তানের উইঘুর মুসলিমদের মুক্তির পয়গামবাহী এক ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন তুর্কিস্তান ইসলামিক পার্টি (টিআইপি)। মুসলিম অধ্যুষিত পূর্ব-তুর্কিস্তানকে দখলদার হান চাইনিজরা “জিনজিয়াং উইঘুর স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চল” (Xīnjiāng Uyghur Autonomous Region (XUAR) নামে অভিহিত করে। এই অঞ্চলটিকে চীনের কবল থেকে উদ্ধার করে স্বাধীন ইসলামি রাষ্ট্র “পূর্ব তুর্কিস্তান” প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে আশির দশক থেকে সীসাঢালা প্রাচীরের ন্যায় সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন টিআইপির বীর সৈনিকেরা।
টিআইপি উইঘুর মুসলিমদের উপর অমানবিক নির্যাতনের প্রতিবাদে অনেকবার হামলা চালিয়েছে চীনের ভূখন্ডের অভ্যন্তরে এবং মধ্য এশিয়ার বিভিন্ন দেশে অবস্থিত চীনা স্থাপনাসমূহে। দলটির কিছু মুজাহিদ জিহাদি কার্যক্রম পরিচালনার কারণে পশ্চিমাদের হাতে বন্দী হয়ে কুখ্যাত গুয়ানতানামো বে কারাগারে অসহায়ভাবে দিনাতিপাত করছেন।
এ সবকিছু ছাপিয়ে মুসলিমদের জন্য আশার প্রদীপ হয়ে জ্বলছে টিআইপি, আর সেই প্রদীপের পূর্ণ উদ্ভাসের ব্যাপারে অত্যন্ত আশাবাদী হক্কপন্থী মুসলিমগণ।
টিআইপির সূচনা: ক্ষুদ্র স্ফুলিঙ্গ হতে উত্তপ্ত অগ্নিশিখা
টিআইপি মূলত ১৯৪০ সালে চীনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতাকামী কতিপয় প্রভাবশালী মুসলিম ও উলামায়ে কেরামের সমন্বয়ে গঠিত গেরিলা বাহিনী “ইসলামিক পার্টি অফ তুর্কিস্তান” বা আইপিটি’এর উত্তরসূরি। আইপিটি গঠিত হয় শায়েখ আব্দুল আযিয মাখদুম, শায়েখ আব্দুল হাকিম এবং শায়েখ আব্দুল হামিদ সহ আরো কতিপয় উলামায়ে কেরামের সম্মিলিত উদ্যোগে। ১৯৪০ থেকে ’৫০ এর দশক পর্যন্ত সময়ে আইপিটি চীনা সেনাদের সাথে অনেকবার যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল।
বর্তমান তুর্কিস্তান ইসলামিক পার্টির সূচনা হয় শায়খ আব্দুল হাকিম এর হাত ধরে। ১৯৪০-’৫০ এর দশকে আইপিটির সাথে যখন তিনি যুক্ত ছিলেন, তখন তিনি বেশ কয়েকবার চাইনিজদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ সংঘটিত করেন। ফলে সেসময় তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।
দীর্ঘ সময় কারাবরণের পর ১৯৭৯ সালে তিনি কারাগার থেকে মুক্তিলাভ করেন এবং সরাসরি সামরিক অভিযানে যুক্ত না হয়ে কারঘালিক অঞ্চলে বেশ কিছু স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। এসব স্কুল ছিল মুসলিম শিশুদের ইসলামি হুকুমত প্রতিষ্ঠার স্বপ্নদ্রষ্টা এবং ইসলামি রাষ্ট্র পূর্ব তুর্কিস্তান প্রতিষ্ঠার জন্য আত্মোৎসর্গকারী ভবিষ্যৎ মুজাহিদ তৈরির সূতিকাগার।
টিআইপির পরবর্তী আমীর হাসান মাহসুম বাল্যকালে এরকম একটি স্কুলেই পড়ালেখা করেছিলেন। এই স্কুলগুলোর প্রভাবে ১৯৮০র দশকে চীনে অগণিত উইঘুর একটিভিস্ট তৈরি হয়, যারা চীনা সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে এবং উইঘুরদের ইসলামি সংস্কৃতি ও ধর্মীয় স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করেন। এরমধ্যে ১৯৮৫ ও ১৯৮৮র জিনজিয়াং ইউনিভার্সিটির আন্দোলন এবং উরুমচি শহরে সংঘটিত ১৯৮৯ সালের আন্দোলন উল্লেখযোগ্য।
উইঘুরদের উপর চীন যে ক্রমাগত অনৈসলামিক, কমিউনিস্ট ও নাস্তিক্যবাদী ভাবধারার অপসংস্কৃতি চাপিয়ে দিচ্ছিল, এর বিরুদ্ধে গিয়ে ইসলামি স্কুল ও মাসজিদ কেন্দ্রিক এসব আন্দোলন করা হয়েছিল, যার মূল উদ্দেশ্য ছিল উইঘুরদের নিজস্ব ইসলাম-কেন্দ্রিক সংস্কৃতি ও কৃষ্টি-কালচার ফিরিয়ে আনা।
এসব আন্দোলনগুলো ছিল নিরস্ত্র, অনেকটা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ সমাবেশ ধরণের। তবে আন্দোলনগুলোতে পূর্ব তুর্কিস্তানের স্বাধীনতাকামী চেতনা ফিরে আসে সোভিয়েত ইউনিয়েনের পতনের পরপরই। ষাটের দশকের আইপিটি, যা চীনা সশস্ত্র বাহিনীর প্রচন্ড দমন-পীড়নের পর নিষ্ক্রিয় হয়ে গিয়েছিল, সেটি পুনরায় তুর্কিস্তান ইসলামিক পার্টি নামে সংগঠিত হয় জিয়া উদ দ্বীন নামের এক উইঘুর নেতার হাত ধরে।
১৯৯০ সালে জিনজিয়াং এর আকতো প্রদেশের বারিন শহরে প্রায় ২০০ জন বিক্ষোভকারী স্থানীয় চীনা সরকারি অফিসের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন। বিক্ষোভকারীদের সাথে প্রায় ৩ সপ্তাহ যাবত চীনা পুলিশ ও সেনা সদস্যদের সশস্ত্র সংঘর্ষ চলতে থাকে। যালিম চীন অত্যন্ত বর্বরভাবে বিক্ষোভকারীদের কতককে শহীদ ও কতককে গ্রেফতার করে এই বিদ্রোহ দমন করে।
বারিন শহরের বিদ্রোহের পর তুর্কিস্তান ইসলামিক পার্টির বহু নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তি কারাবন্দী হন, কিন্তু টিআইপি থেমে যায়নি। ১৯৯২ সালে একযোগে অনেকগুলো জায়গায় বাসে বোমা হামলা চালায় তারা। তারা জিনজিয়াং এর লোপ-নোর এলাকায় চীনের পারমাণবিক বোমার পরীক্ষার বিরুদ্ধে এক বিশাল বিক্ষোভের নেতৃত্ব দেয়। এই বিক্ষোভের সময় সংঘর্ষে চীনের বহুমূল্যের সামরিক সরঞ্জামাদি ধ্বংস হয়ে যায়। ১৯৯৩ সালে জিনজিয়াং জুড়ে চাইনিজ স্থাপনায় বোমা হামলা চালানো হয়।
চীনা হায়েনাদের আগ্রাসন, টিআইপি যেন নিভু নিভু প্রদীপ!
১৯৯৩ সালে ইন্তেকাল করেন উইঘুরদের স্বাধীনতাকামী চেতনার বীজ বপনকারী ইসলামিক স্কুল এবং ইসলামিক পার্টি অফ তুর্কিস্তান ও তুর্কিস্তান ইসলামিক পার্টির প্রতিষ্ঠাতা শায়েখ আব্দুল হাকিম (রহ.)।
একদিকে তাঁর মতো দক্ষ নেতার ইন্তেকাল, অপরদিকে চীনের ব্যাপক ধরপাকড় এবং ক্র্যাকডাউনে টিআইপির অবস্থা তখন সংকটাপন্ন। তখন দলটির নেতৃত্বের হাল ধরেন আবদুর রাহমান এবং মুহাম্মাদ তাওহীদ। কিন্তু তারা দলটিকে গুছিয়ে আনতে পারেননি।
টিআইপির হাল ধরার মত যোগ্য নেতা ছিলেন শায়েখ আব্দুল হাকিম এর ছাত্র হাসান মাহসুম। কিন্তু তিনিও ১৯৯০-১৯৯১, ১৯৯৩-১৯৯৬ এবং ১৯৯৬-১৯৯৭ পর্যন্ত বারবার কারাবরণ করেন। মূলত ১৯৯৩ সালে আব্দুল হাকিমের ইন্তেকালের পর টিআইপির কার্যক্রম প্রকারান্তরে বন্ধই হয়ে গিয়েছিল।
চলবে, ইনশাআল্লাহ্…
লিখেছেন : ত্বহা আলী আদনান
আমি মুজাহিদ হতে চাই কিন্তু কোনো সাস্তা পাচ্ছি না , আপনারা চাইলে আমাকে পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করতে পারেন
কীভাবে অনলাইনে জিহাদি সংগঠনে যুক্ত হবেন?
https://dawahilallah.com/showthread.php?13785
https://justpaste.it/3ul45
বিঃদ্রঃ অনলাইনে আল কায়দা উপমহাদেশ শাখা সাথি রিক্রট করে না । অফলাইনের দাওয়াত পাওয়ার অপেক্ষা থাকুন ও সেই পর্যন্ত দোআ করতে থাকুন ইনশাআল্লাহ। শারিরিক ও মানসিক প্রস্তুতি গ্রহন করুন ইনশাআল্লাহ।