ভারতে তুচ্ছ ঘটনায় পৃথক জায়গায় ৩ জন মুসলিমকে পিটিয়ে খুন করেছে হিন্দুরা। গত ৭ এপ্রিল রাতে ঝাড়খণ্ডে দুইজন মুসলিম যুবককে খুন করা হয়। তাদের বয়স ছিল ২১ এবং ২৫ বছর। ঘটনার পর একজনকে চোর হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়, অন্যজনকে বালি পাচারকারী হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।
এদের মধ্যে একজন নিহতের নাম ওয়াসিম। তার বাবা মুমতাজ আনসারি জানিয়েছেন, ‘আমার ছেলে ওয়াসিম সাজ্জাদ তার নানির বাড়িতে গিয়েছিল। পরে আমরা পুলিশের কাছ থেকে একটি কল পাই যে, তারা আমাদের ছেলেকে ধরেছে। তারা আমাদেরকে থানায় যেতে বলে।’
মুমতাজ আনসারি একজন স্কুল শিক্ষক, এবং তার ছেলে ওয়াসিম একজন স্নাতক (বিএ) ডিগ্রিধারী। ওয়াসিম মুম্বাইয়ে একটি পাইপলাইন কোম্পানিতে কাজ করতেন এবং সম্প্রতি তার দুই বোনের বিয়ে উপলক্ষে পরিবারের সাথে দেখা করতে এসেছিলেন।
আনসারি আরও বলেন, ‘আমরা যখন থানায় পৌঁছলাম, আমরা দেখলাম যে বোলেরো গাড়ির পিছনের সিটে ওয়াসিমকে পশুর মতো বেঁধে রাখা হয়েছে। প্রথম দিকে, তার সাথে আমাদেরকে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। অবশেষে আমরা তার সাথে কথা বলতে সক্ষম হয়েছিলাম। সে অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার আগে বলেছিল, যখন সে নানির বাড়ি থেকে ফিরছিল পুলিশ ইন্সপেক্টর কৃষাণ কুমার তাকে নির্দয়ভাবে মারধর করেছে।’
তবে পুলিশের দাবি, ‘তিনি [ওয়াসিম] একটি ট্রাক্টর দিয়ে বালি পাচার করছিল। তাঁকে থামতে বলা হলে সে পালানোর চেষ্টা করেন এবং গাড়ি থেকে পড়ে গিয়ে আহত হয়।’
কিন্তু, ওয়াসিমের বাবা এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমাদের একটি ট্রাক্টর পুলিশ জানুয়ারীতেই আটক করেছে। দ্বিতীয় ট্রাক্টরটি বাড়িতে রয়েছে যা অকেজো হয়ে গেছে।’
এদিকে, মধ্যপ্রদেশের খান্ডওয়ার ছাইগাঁও দেবী গ্রামে চুরির সন্দেহে এক মুসলিম যুবককে হিন্দুরা পিটিয়ে খুন করেছে। নিহত শেখ ফিরোজকে গত ৯ এপ্রিল সকালে একটি ড্রেনেজ চ্যানেলে অজ্ঞান অবস্থায় পাওয়া যায়। পরবর্তিতে তাঁকে জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। ফিরোজ খানশাওয়ালি, খান্ডোয়ার বাসিন্দা।
ডিএসপি হেডকোয়ার্টার্স অনিল সিং নিশ্চিত করেছেন যে, ফিরোজের সারা শরীরে একাধিক ছুরিকাঘাতের দাগ রয়েছে। তবে পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেছেন, ৯ এপ্রিল সন্ধ্যা পর্যন্ত তাদের অভিযোগের বিষয়ে জেলা পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
অন্য একটি ঘটনায়, রাজ্যের রাজধানী রাঁচি থেকে মাত্র ৪৫ কিলোমিটার দূরে, ২১ বছর বয়সী ওয়াজিদ আনসারির পরিবার কিছু লোকের কাছ থেকে ফোন পায় যে, পাশের গ্রামে তার ছেলেকে একটি গাছের সাথে বেঁধে মারধর করা হয়েছে।
‘ওয়াজিদ সেহরি করেছিল, তাই আমরা যখন কল পাই তখন আমরা বুঝতে পারিনি যে সে রোজা রেখে কী এমন করেছে যে লোকেরা তাকে মারছে,’ নিহতের বাবা হাফিজুল রেহমান আনসারি বলেন। তিনি আরও বলেন, তারা ওয়াজিদকে এমন নির্দয়ভাবে মারধর করেছে যে, সে অজ্ঞান হয়ে পড়েছিল।
৭০ বছর বয়সী হাফিজুল রেহমান, যিনি তার বার্ধক্যের কারণে কাজের সক্ষমতা হারিয়েছেন, বলেন, ‘আমার ছেলে পরিবারের সবচেয়ে ছোট। সে খুব ভাল ছেলে ছিল। সে বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত ছিল। কিছু সামাজিক সংগঠনের সাথেও যুক্ত ছিল। প্রায় বিশ দিন আগে, একটি দুর্ঘটনায় আমার ছেলে মাথায় মারাত্মকভাবে আঘাত পেয়েছিল। ফলে সে মানসিকভাবে বেশ বিপর্যস্ত ছিল। সে তাদের বাগানে প্রবেশ করেছিল গাছের কিছু ডাল ভাঙার জন্য, এর বেশি কিছু নয়।’
এ কারণে তাকে মারধর করা হয়। পরে পুলিশ এসে তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। ‘আমার ছেলে চোর নয় এবং সে কারো বাড়িতে ঢুকেনি। এলাকাটা আমার বাড়ি থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যেই,’ হাহাকার করে বলেন হাফিজুল।
তিনি আরও অভিযোগ করছেন যে, পুলিশ তার এফআইআর নিচ্ছে না। তাঁর দাবি, তাঁর ছেলেকে কমপক্ষে চৌদ্দ জন হিন্দু পিটিয়ে হত্যা করেছে। কিন্তু পুলিশ এটাকে মব লিঞ্চিং এর মামলা করতে চায় না। ঘটনার সাথে জড়িত হিন্দুরা আরও বেশ কয়েকজনকে মারধরের সাথে জড়িত, কিন্তু তারা কখনও ধরা পড়ে না।
ঝাড়খণ্ডে ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত দুই ডজনেরও বেশি মব লিঞ্চিং এর ঘটনা ঘটেছে। রামগড়ের আলিমুদ্দিন আনসারির ঘটনা খুব আলোড়ন তৈরি করেছিল। পরে তাবরেজ আনসারির ঘটনা জাতিসংঘেও উত্থাপিত হয়েছিল। কিন্তু ভিকটিমরা মুসলিম হওয়ায় সব প্রমাণ থাকার পরেও কোন হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়নি আজও।
তথ্যসূত্র:
——–
1. Muslim youth lynched in Madhya Pradesh over suspected theft (Maktoob)
– https://tinyurl.com/2p8rykdy
2. Black Friday for two Muslim youth in Jharkhand (eNewsroom)
– https://tinyurl.com/yc3kxfu9