বুরকিনা ফাসোর কয়েকটি স্থানে ২ দিনের ব্যবধানে সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে ৪টি পৃথক অভিযান পরিচালনা করছে আল-কায়েদা সংশ্লিষ্ট ইসলামি প্রতিরোধ যোদ্ধারা। এতে সামরিক বাহিনীর অন্তত ১৬৬ সৈন্য হতাহত হয়েছে বলে জানা গেছে। ধ্বংস করা হয়েছে ৩০ টিরও বেশি সাঁজোয়া যান।
স্থানীয় সূত্রমতে, ধারাবাহিক অভিযানের অংশ হিসেবে গত ২৬ জুন সোমবার দেশটির সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে ২টি বড়ধরণের অভিযান চালিয়েছে আল-কায়েদা সংশ্লিষ্ট জামা’আত নুসরাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন। এর মধ্যে প্রথম অভিযানটি চালানো হয় কয়েক মাস ধরে আল-কায়েদা যোদ্ধাদের অবরোধে থাকা সানমাতেঙ্গা প্রদেশের জিবো শহরে।
সূত্রমতে, শহরটিতে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের অবরোধের কবলে আটকা পড়া সেনাদের সাহায্যের জন্য আসা বড় একটি সরবরাহ কনভয়ে অতর্কিত এই অভিযানটি পরিচালনা করেন জেএনআইএম যোদ্ধারা। সেখানে উভয় বাহিনীর মাঝে তীব্র লড়াই সংঘটিত হয়েছিল।
আয-যাল্লাকা ও স্থানীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, আল-কায়েদা যোদ্ধাদের এই অভিযানের ফলে বুরকিনান সেনাবাহিনীর অন্তত ১০০ সৈন্য নিহত হয়েছে, আহত এবং নিখোঁজ হয়েছে আরও কয়েক ডজন সৈন্য। এছাড়াও অভিযান চলাকালীন সরবরাহ কনভয়ের ৩০টি গাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছেন প্রতিরোধ যোদ্ধারা। এসময় তাঁরা সামরিক বাহিনী থেকে আরও ১৫টি গাড়ি, ৬৫টি মোটরসাইকেল, ১২টি পিকা, ৭টি আরবিজি, ১৩টি পিস্তল, ৫৩টি ক্লাশিনকোভ, ২৯৮টি বাক্স এবং মর্টার শেলসহ বিপুল সংখ্যক সামরিক সরঞ্জাম জব্দ করেন।
এদিন ‘জেএনআইএম’ যোদ্ধারা তাদের দ্বিতীয় অভিযানটি পরিচালনা করেন রাজ্যটির নোয়াকা এলাকায়। সেখানে সেনাবাহিনীর একটি দলকে টার্গেট করে অতর্কিত অভিযান চালানো হয়। ফলশ্রুতিতে সামরিক বাহিনীর অন্তত ৪৫ সৈন্য নিহত হয়েছে এবং আরও অনেক সৈন্য আহত হয়েছে। সেই সাথে প্রতিরোধ যোদ্ধারা প্রচুর পরিমাণে অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম জব্দ করেছেন।
দেশটির আধাসামরিক বাহিনী ভিডিপির দেওয়া তথ্যমতে, এদিন ‘জেএনআইএম’ যোদ্ধারা পূর্ব কোমন্ডজারি রাজ্যের গায়েরি এলাকায়ও অভিযান চালিয়েছেন। এতে ভিডিপি নামক সশস্ত্র মিলিশিয়া গ্রুপটির ৪ সদস্য নিহত হয়েছে বলে ঘোষণা করা হয়।
এর একদিন পর, অর্থাৎ ২৭ জুন মঙ্গলবার বুরকিনা ফাসোর পশ্চিমে বাউকেল ডু মাউহাউন অঞ্চলে আরও একটি অভিযান পরিচালনা করেছে আল-কায়েদা যোদ্ধারা। এই অভিযানে বুরকিনান সেনাবাহিনীর ৮ সৈন্য নিহত হয়েছে এবং আরও ৯ সৈন্য গুরুতর আহত হয়েছে।
উল্লেখ্য যে, ২০১৩ সালে মালির রাজধানী বামাকো থেকে ইসলামি প্রতিরোধ যোদ্ধাদের হটাতে পশ্চিমাদের সাথে একজোট হয়ে দেশটিতে আগ্রাসন চালায় বুরকিনা ফাসোর সেনাবাহিনীও। এসময় আল-কায়েদা বিভিন্ন বিবৃতিতে বুরকিনা ফাসোকে সতর্ক করে দিয়ে মালি থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে বলে। কিন্তু বুরকিনা ফাসো এবিষয়ে কর্নপাত না করায় ২০১৫ সালে বুরকিনা ফাসোতেও সামরিক অভিযান শুরু করেন ইসলামি প্রতিরোধ যোদ্ধারা। বর্তমানে জেএনআইএম’ যোদ্ধারা বুরকিনা ফাসোর প্রায় ৫০ শতাংশ এলাকায় নিজেদের প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছে।