হরিয়ানায় পুলিশ হেফাজতে সদ্য বিবাহিত মুসলিম যুবকের মৃত্যু

আবু আব্দুল্লাহ্‌

0
274
পুলিশি নির্যাতনে নিহত যুবক সাইকুল খান

হরিয়ানার ফরিদাবাদে নববিবাহিত এক মুসলিম যুবককে গত ২৩ জুলাই রবিবার পুলিশ তুলে নিয়ে যায়। পরে পুলিশ হেফাজতে থাকাকালিন মারা যান সাইকুল খান নামের ২৭ বছর বয়সী ঐ যুবক। তার পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, পুলিশি নির্যাতনে মৃত্যু হয়েছে সাইকুল খানের। নিহতের শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল বলেও জানা যায়।

জনাব সাইকুল খান রাজস্থানের আলওয়ারের টিকরি গ্রামের বাসিন্দা। তিন মাস আগে বিয়ের পর তিনি বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।

আলওয়ারের মুসলিম সম্প্রদায়ের একজন নেতা শের মোহম্মদ ক্ল্যারিওন ইন্ডিয়াকে বলেছেন যে, খানের পরিবারের সদস্য, কিছু স্থানীয় মুসলিম এবং তার গ্রামের সামাজিক কর্মীরা ফরিদাবাদে বিক্ষোভ করার পরে সোমবার দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে হত্যার জন্য একটি এফআইআর নথিভুক্ত করা হয়েছে।

জনাব মোহাম্মদের মতে, খানের গ্রেপ্তার ভুল পরিচয়ের একটি মামলায়। ফরিদাবাদ পুলিশ সাইবার জালিয়াতির মামলায় একজন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করতে চেয়েছিল, কিন্তু তারা ভুলভাবে খানকে হেফাজতে নিয়েছিল এবং তাকে মারধর করেছিল।
তিনি বলেছেন, “পুলিশ হেফাজতে মারধরের পর খান মারা যান।”

সাইকুল খানের মৃত্যুর বিষয়ে জনাব মোহাম্মদ ফরিদাবাদ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে দেখা করেছিলেন। তবে, খানের পরিবার এবং অন্যরা অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবি করেছিলেন। কিন্তু পুলিশ দাবি করছে যে গ্রেপ্তারে আইনি বাধা রয়েছে। পরিবারের সদস্যরা বলেছেন, “ভুলকারী পুলিশ অফিসারকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে তবে আমি মনে করি না যে বরখাস্ত কোন শাস্তি।”

আর লাশের বর্ণনা দিয়ে জনাব মোহাম্মাদ স্থানীয় মিডিয়াকে বলেছেন, “আমি লাশ দেখেছি। সারা শরীরে গুরুতর আঘাতের চিহ্ন ছিল। তার নাক দিয়ে প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। কারো নাক থেকে রক্ত দুটি অবস্থায় বের হয়: হয় বিষ খাওয়ার পর অথবা মারধরের পর। এটা বিষ নয়; তাকে মারাত্মকভাবে মারধর করা হয়েছিল।”

এক আত্মীয় জানান, খানকে যখন পুলিশ তুলে নিয়ে যায়, তখন তার পরিবারের সদস্যদের জানানো হয়নি। খান নিখোঁজ হওয়ার আঠারো ঘণ্টা পর তার পরিবারের সদস্যদের ফরিদাবাদ পুলিশের সাইবার ক্রাইম সেল ফোন করে তাদের গ্রেপ্তারের কথা জানায়।

খানের ঐ আত্মীয় স্থানীয় মিডিয়াকে বলেছেন, “পরিবারের সদস্যরা খানের সাথে দেখা করতে যান এবং তার সাথে কথা বলেন। খানকে অনেক নির্যাতন করা হয়। তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। যারা তাকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন আমি তাদের একজন। এরপর তাকে তিন দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। সে সময় খান ভালো ছিলেন এবং কথা বলতে পারতেন। যত দ্রুত সম্ভব তাকে জেল থেকে ছাড়ার জন্য পরিবারের সদস্যদের অনুরোধ করেন তিনি। আজ, আমাদের পুলিশ ফোন করেছিল যে খানের অবস্থার অবনতি হয়েছে। আমরা যখন হাসপাতালে পৌঁছলাম, আমরা দেখতে পেলাম যে তিনি মারা গেছেন।”

সাম্প্রতিক সময়ে ভারতে মুসলিমদের সন্দেহমূলক গ্রেফতার এবং পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে গেছে। সাইকুল খানের গ্রেফতার ও পুলিশি নির্যাতনে মৃত্যু এই তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন।



 

তথ্যসূত্র:
1. Haryana: Newly-Wed Muslim Youth Dies in Police Custody, Family Alleges Torture
https://tinyurl.com/5n8nw3z2
https://tinyurl.com/bdc7vrmk

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধইউরোপে দফায় দফায় পবিত্র কুরআন পুড়িয়ে ইসলাম অবমাননা
পরবর্তী নিবন্ধজ্বলছে মনিপুর: উত্তর-পূর্ব ভারত কেন্দ্রিক যুদ্ধ কি তবে শুরু?