ড. আফিয়া সিদ্দিকি: মুসলিম উম্মাহর হৃদয়ে এক গভীর ক্ষতের নাম

-ইউসুফ আল-হাসান

1
1383

এক নারীর আর্তনাদে পুরো সেনাবাহিনী নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়া মুসলিম উম্মাহর গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস আজ মলীন হয়ে গেছে। হাজারো নারীর আর্তনাদে আজ পৃথিবী দূষিত হয়ে গেছে।

মুসলিম উম্মাহ হৃদয়ে তেমনই এক দগদগে বেদনার নাম ড. আফিয়া সিদ্দিকি। গত ২০ বছর ধরে তিনি বন্দী রয়েছেন আমেরিকার কারাপ্রকোষ্ঠে। এর মধ্যে ৫ বছর তিনি বন্দী ছিলেন আফগানিস্তানের কুখ্যাত মার্কিন সামরিক ঘাঁটি বাগরামে। সেখানে তার ওপর চালানো হয় অকথ্য শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। বাগরাম ফেরত সাবেক বন্দীদের অনেকেই তার উপর চালানো পৈশাচিক নির্যাতনের প্রত্যক্ষ সাক্ষী।

ড. আফিয়া সিদ্দিকির উপর চালানো নির্যাতনের প্রত্যক্ষ সাক্ষীদের একজন হচ্ছেন আহমাদ রাব্বানী। তিনি পাকিস্তানের নাগরিক। গত দুই দশক ধরে মার্কিন জেলে বন্দী থাকার পর সম্প্রতি মুক্তি পেয়ে দেশে ফিরেছেন তিনি। ড. আফিয়া সিদ্দিকি বাগরাম কারাগারে বন্দী থাকার সময় আহমাদ রাব্বানীও সেখানে বন্দী ছিলেন।

আফিয়া সিদ্দিকি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি জানান, “বাগরাম কারাগারে আমি আর আফিয়া সিদ্দিকি একই ভবনে ছিলাম। তিনি ছিলেন আমার ঠিক দুই রুম পর। দিনরাত সন্তানদের নাম ধরে কান্নাকাটি করতেন তিনি। আমার রুমের জানালা দিয়ে স্পষ্ট তার কান্নার আওয়াজ শুনতে পেতাম।”

আফিয়া সিদ্দিকির ওপর চালানো মার্কিন নির্যাতন সম্পর্কে তিনি বলেন, “এই লোকগুলো (মার্কিনিরা) খুবই অমানবিক। আমাদের ভবনের বন্দীদের জন্য মাত্র একটি টয়লেট রুম ছিল। এটিতে একসাথে ৪ জনের টয়লেট করার ব্যবস্থা ছিল। টয়লেটগুলোর মধ্যে কোন পর্দা বা দেয়াল ছিল না, পুরোপুরি খোলা ও একত্রে ছিল সবগুলি।”

আহমাদ রাব্বানী তার সাক্ষাৎকার নেয়া সাংবাদিককে প্রশ্ন রেখে বলেন, “আপনি কি আমার সামনাসামনি বসে টয়লেট করতে পারবেন?” এতে না সূচক জবাব দেন সেই সাংবাদিক। এরপর আহমাদ রাব্বানী বলেন, “টয়লেটে যাবার জন্য বন্দীরা লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে হতো। আফিয়া সিদ্দিকি যখন টয়লেটে যেতে চাইতেন ভিতরে তখন আরও ৩ জন পুরুষ থাকতো। সে সময় তাঁকে পুরুষদের সাথেই টয়লেটে যেতে বাধ্য করতো কারারক্ষীরা।”

বন্দি অবস্থায় তাঁর ওপর আরও অমানবিক নির্যাতন চালিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। নির্যাতনের মাত্রা এতই ভয়াবহ ছিল যে, তার চিৎকার শুনে পাশের বন্দীরা নির্যাতন বন্ধের দাবিতে কারাগারে অনশন করেছিলেন।

ড. আফিয়া সিদ্দিকির ওপর চালানো নির্যাতনের মাত্রা বুঝার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সর্বশেষ যখন তাকে আদালতে উঠানো হয়েছিল, বিচারক জানতে চেয়েছিলেন তার কিছু বলার আছে কিনা। জবাবে ড. আফিয়া সিদ্দিকি বলেছিলেন, “আপনি তাদের ক্ষমতা দিয়েছেন আমাকে রেপ করার, উলঙ্গ করে সার্চ করার। আপনার কাছে কিছুই বলার নেই আমার, আমি আমার আল্লাহর কাছে গিয়েই যা বলার বলবো। আমি তো সেদিনই মরে গিয়েছি যেদিন আমাকে প্রথম ধর্ষণ করা হয়েছিল। আমাকে ছেড়ে দিন, আমাকে আমার দেশে যেতে দিন।”

উল্লেখ্য যে, আল-কায়েদার সাথে যুক্ত থাকার অভিযোগে সন্দেহভাজন হিসেবে ২০০৩ সালে করাচির একটি রাস্তা থেকে তিন সন্তানসহ তাকে অপহরণ করে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই। পরবর্তীতে পাকিস্তান সরকার সন্তানসহ ডা. আফিয়াকে তুলে দেয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে। মার্কিনিরা তাকে আফগানিস্তানের বাগরাম সামরিক ঘাঁটিতে ৫ বছর বন্দী রাখে। পরবর্তীতে তার নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করে এবং কথিত বিচারের নামে প্রহসন করে ৮৬ বছরের কারাদন্ড প্রদান করে।

তিনি ছিলেন একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মুসলিম স্নায়ুবিজ্ঞানী, কুরআনের হাফেযা, সংগঠক এবং নারী স্কলার। পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত এই মুসলিম নারী আমেরিকার ম্যাসাচুসেট্‌স ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি) বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করে ব্রান্ডিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পি.এইচ.ডি লাভ করেন।

স্বভাবে তিনি ছিলেন অত্যন্ত নম্র, ভদ্র ও ধার্মিক মানুষ। অসহায় মানুষের জন্য তিনি ছিলেন নিবেদিত প্রাণ। নির্যাতিত বসনিয়ার মুসলিম নারী ও শিশুদের জন্য ফান্ড তৈরি করেছিলেন তিনি। বৃদ্ধাশ্রমে গিয়ে বয়স্কদের সেবা ও প্রতিবন্ধীদের সাহায্য করতেন। আমেরিকার জনগণের মাঝে ইসলাম ছড়িয়ে দিতে বিভিন্ন কার্যক্রমেও নিয়োজিত ছিলেন তিনি।

আল্লাহ তা’আলা কারাগার থেকে ডা. আফিয়া সিদ্দিকির মুক্তি ত্বরান্বিত করুন। আমীন ইয়া রাব্বাল আলামীন।


তথ্যসূত্র:
——
1. Dr Aafia Siddiqui Forced To Use Toilet With Men
https://tinyurl.com/4w27ybu2
2. আফিয়া সিদ্দিকী
https://tinyurl.com/2p8zh8uh

১টি মন্তব্য

  1. AFN Lecture চ্যানেলটি অনেক মিস করছি, চ্যানেলের আলোচনাগুলো ছিলো গোছালো ও দিক নির্দেশনা মূলক। কিন্তু চ্যানেলটি রক্ষা পেলনা তাগুতের হাত থেকে। অনেক দিন পর আজ ইউটিউবে AFN Lecture এর একটি ভিডিও পেলাম, শুনেছি, খুব ভালো লেগেছে।

    আল-ফিরদাউস কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করছি,, আপনারা AFN Lecture এর কার্যক্রম আবারো শুরু করুন ইনশা আল্লাহ। ইউটিউবে সমস্যা হলে, আল-ফেরদাউসে AFN Lecture এর জন্য এটি এলবাম তৈরি করে কার্যক্রম চালিয়ে যান। AFN Lecture এর ভিডিওগুলো অনেক উপকারী।

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধইন্তেকাল করেছেন কুরআনের পাখি মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী
পরবর্তী নিবন্ধইমারতে ইসলামিয়া আফগানিস্তান পুনঃপ্রতিষ্ঠার দুই বছর