#Letter to America – কি ছিল সেই চিঠিতে!

- আব্দুল্লাহ্‌ বিন নজর

4
1908

সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম, বিশেষ ভাবে টিকটকে #LetterToAmerica হ্যশট্যাগটি ভাইরাল হয়েছে। এক জরিপে দেখা গেছে এই হ্যাশ ট্যাগ বর্তমানে প্রায় ঘন্টায় ১০ লক্ষ ভিউ হচ্ছে। এছাড়াও এক্স (টুইটার) এও ভাইরাল হয়েছে এই হ্যাশট্যাগটি। আসুন জেনে নেয়া যাক, কী সেই Letter to America?

প্রয়াত শায়েখ উসামা বিন লাদেন রাহিমাহুল্লাহ ২০০২ সালে ‘আমেরিকার প্রতি বার্তা’ (Letter to America) শিরোনামে একটি চিঠি লিখেন। সেখানে তিনি ৯/১১ হামলার কারণ হিসেবে আমেরিকার গুরুতর অপরাধ সমূহ উল্লেখ করেন এবং আমেরিকার জনগণকে তাদের সরকার কিভাবে প্রতারিত করছে তা উল্লেখ করেন। ৯/১১ এর হামলা কেন যৌক্তিক ছিল তিনি তা তুলে ধরেন এবং শুধু তাই নয়, আমেরিকার জনগণকে এ ব্যাপারে চিন্তা করতেও আহ্বান জানান।

চিঠিটি সেসময় প্রকাশ করেছিল ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দা গার্ডিয়ান। তবে সম্প্রতি চিঠিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে, বিশেষ করে টিকটকে ভাইরাল হয়। বিশেষ করে প্রায় ১২ মিলিয়ন ফলোয়ার সম্বলিত একজন টিকটক ব্যবহারকারী সবাইকে Letter to America পড়ার অনুরোধ করে এবং তাদের মতামত শেয়ার করতে আহ্বান জানায়। এরপর থেকেই অন্যান্য টিকটক একাউন্ট থেকে এই চিঠির ব্যাপারে ভিডিও আপ্লোড হতে থাকে। তারাও অন্যদেরকে লেখাটি পড়ার আহবান জানিয়ে পোস্ট করতে থাকে। অল্প সময়ের মধ্যেই এই চিঠিটি আমেরিকার জনগণের মধ্যে ভাইরাল হয়ে যায়। শুধু তাই নয় আমেরিকানরা অনেকেই তাদের অভিজ্ঞতা এভাবে প্রকাশ করে যে, তাদের সরকার তাদের সাথে এত দিন যে প্রতারণা করে এসেছে তারা এখন-“নিজেদের অস্ত্বিত্বই যেন নতুন ভাবে উপলব্ধি করছে!”

মুলত কি ছিল সেই চিঠিতে?

উসামা বিন লাদেন রাহিমাহুল্লাহ, আমেরিকা ও আমেরিকানদের উদ্দেশ্যে বেশ কয়েকটি চিঠি ও ভিডিও প্রকাশ করেছেন। তবে গার্ডিয়ানের যে বার্তা বা চিঠিটি ভাইরাল হয়েছে সেটিতে তিনি প্রথমেই মুসলিমদের উপর আঘাত আসলে প্রতিঘাত করার দলিল হিসেবে কুরআনের একটি আয়াত উল্লেখ করেন এবং পরিষ্কার করেন যে, ৯/১১ এর এই আঘাত ইসলাম ও মুসলিমদের উপর আমেরিকার জুলুমেরই পাল্টা জবাব মাত্র। এরপরে তিনি আমেরিকার জুলুমের ব্যাপারে আলোকপাত করেন। তার উল্লেখ্য কারণ সমুহের মধ্যে প্রধানতম ছিল যার উপরে তিনি অধিকতর গুরুত্ব আরোপ করেছেন, তা হচ্ছে ফিলিস্তিনের উপরে জায়োনিস্ট ইসরায়েলের জুলুম এবং এর পেছনে আমেরিকার প্রত্যক্ষ মদদ।

ফিলিস্তিনে প্রায় আশি বছর ধরে চলমান জায়নবাদী বর্বরতার পেছনে আমেরিকার ভূমিকা, ফিলিস্তিনের উপর ইহুদিদের অধিকারের মিথ্যা দাবির প্রতি আমেরিকার স্বীকৃতি, দুনিয়ার বিভিন্ন মুসলিম ভুখন্ডগুলোতে আমেরিকার আগ্রাসন, ইরাকে ১৫ লক্ষ্য শিশু হত্যা, চেচনিয়ায় রুশ নৃশংসতা ও কাশ্মীরে ভারতের হাতে মুসলিমদের নির্যাতনের প্রতি আমেরিকার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সমর্থন, – এই সকল বিষয় চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

মুসলিম ভূমিগুলোতে আমেরিকার তাবেদার শাসকদের জুলুম ও ইসলাম নির্মূল মিশনের সমর্থনে যে আমেরিকাই পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ছে, সেটিও চিঠিতে উল্লেখ করেছেন তিনি। সেই সাথে ইতিহাসের স্পষ্টতম প্রতারণা ও চুরির আশ্রয় নিয়ে আমেরিকা যে মুসলিমদের তেল সম্পদ চুরি করে যাচ্ছে, সেটিও উল্লেখ করা হয়েছে চিঠিতে।

এই চিঠির একটি তাৎপর্যপূর্ন বিষয় ছিল –
মূলত, আমেরিকান জনগণই তাদের নেতাদের নির্বাচন করছে, আর নিজেদের ট্যাক্সের টাকা দিয়ে ইহুদি লবিস্ট দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নেতাদেরকে নিজেদের অপরাধ নির্বিঘ্নে চালিয়ে যেতে সহায়তা করছে। যেহেতু তারা দাবি করে থাকে তারা গণতান্ত্রিক ভাবে তাদের ইচ্ছে মতই তাদের সরকার নির্বাচন করে থাকে তাই তাদের উচিৎ এমন খুনি সরকারকে সরিয়ে দেয়া। আর যদি তারা তা করতে ব্যর্থ হয়, তবে তাদের সরকারের লক্ষ লক্ষ মুসলিম হত্যাকান্ডে তারাও দায়ী, এবং সেটিই অধিক যৌক্তিক! তারা নিজেরা তাদের নিজেদের অপরাধের কারণেই মুসলিমদের শত্রুতে পরিণত হবে।

চিঠিটি কেন সরিয়ে নিল গার্ডিয়ান কর্তৃপক্ষ?

চিঠিটি ব্যাপক ভাবে টিকটক ও অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হতে থাকলে আমেরিকান এবং ব্রিটিশ জনগণের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া আসতে থাকে। সাধারণ জনগণের সামনে পশ্চিমা নেতাদের মুখোশ উন্মোচিত হতে থাকে, বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ের ফিলিস্তিন ইস্যু নিয়ে আমেরিকা এবং ব্রিটেনের অবস্থান যেন সেই চিঠির প্রতিটি অক্ষরকে জীবন্ত করে তুলছে!

জনগণ, তাদের নেতাদের প্রতারণা ও নিজেদের অস্তিত্ব সংকট নিয়ে ব্যাপকভাবে আলোচনা করতে থাকে। প্রচুর মানুষ এই লেখাটি গার্ডিয়ানের ওয়েবসাইট থেকে পড়তে থাকে। ফলে সেই ওয়েব পেজের ট্রাফিক অনেক বেড়ে যায়। মানুষের কাছে উসামা রাহিমাহুল্লাহর এই লেখা যেন সরাসরি না পৌছে এজন্য তারা এই লেখাটি সরিয়ে নেয়।

তবে, চিঠিটি তারা সরিয়ে নিয়ে যেন জনগনকে এই বার্তাই দিতে চাইল, – “বুঝলেই তো এই সেই চিঠি, এবার খুঁজে নাও…” এমন মন্তব্য এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় সয়লাব!

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ভাইরাল ট্রেন্ডের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে, এটি চোখে আঙ্গুল দিয়ে পরিষ্কার করে দিচ্ছে- মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে, বিশেষ করে ফিলিস্তিন নিয়ে আমেরিকার অবস্থানের ব্যাপারে আমেরিকানদের মধ্যেই কী পরিমাণ মেরুকরণ হয়ে যাচ্ছে!

উল্লেখ্য, চিঠিটি এমন সময় ভাইরাল হয়েছে, যখন ফিলিস্তিনের মুসলিমদের উপরে ইতিহাসের জঘন্যতম আগ্রাসন ও গণহত্যা চালাচ্ছে জায়নবাদী ইসরায়েল। আর এই আগ্রাসন ও গণহত্যায় নিরঙ্কুশ সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে আমেরিকা ও তার নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা বিশ্ব। ইসরায়েল এবং তার মিত্ররা কেন নিরাপদ থাকবে না, তা প্রায় দুই দশক আগেই পরিষ্কার করে জানিয়েছিলেন উসামা বিন লাদেন রাহিমাহুল্লাহ। আজ সেটিই সবার সামনে স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

4 মন্তব্যসমূহ

  1. ” ইসরায়েল এবং তার মিত্ররা কেন নিরাপদ থাকবে না, তা প্রায় দুই দশক আগেই পরিষ্কার করে জানিয়েছিলেন উসামা বিন লাদেন রাহিমাহুল্লাহ। আজ সেটিই সবার সামনে স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে।”

    আল্লাহ্‌ তায়ালা শাইখের মর্যাদা বুলন্দ করুন। আমীন

  2. সুবহানাল্লাহ!
    শাইখ কত দুরদর্শী ছিলেন। কত আগেই আমেরিকাকে সাপের মাথা, গাড়ির চাকা বলেছিলেন। আজ যেন উম্মাহ তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে।
    রাহিমাহুল্লাহু তায়ালা।

  3. সুবহান’আল্লাহ! ‘তারা তাদের মুখের ফুঁৎকারে আল্লাহর নূরকে নিভিয়ে দিতে চায়, কিন্তু আল্লাহ তাঁর নূরকে পরিপূর্ণ করবেনই যদিও কাফিররা (তা) অপছন্দ করে।’

  4. আমাদের ভাইয়েরা সাপের মাথায় নিয়মিত আঘাত করে যাচ্ছেন,, প্রিয় মুসলিম ভাইয়েরা আপনারাও প্রস্তুতি গ্রহণ করুন। প্রস্তুতি গ্রহণ করুন নিজেকে বাঁচাতে, পরিবারকে বাঁচাতে, দেশ ও ঈমান বাঁচাতে। আসুন আমরা সবাই মিলে প্রস্তুতি গ্রহণ করি। গাজওয়ায়ে হিন্দ আর বেশি দূরে নয়। আমরা যদি ঘুমিয়ে পড়ি তাহলে এই জাতিকে কে রক্ষা করবে?

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধফিলিস্তিনের জিহাদ || আপডেট – ১৬ নভেম্বর, ২০২৩
পরবর্তী নিবন্ধফিলিস্তিনের জিহাদ || আপডেট – ১৭ নভেম্বর, ২০২৩