দিল্লির বাসিন্দা পর্দানশীল একজন মুসলিম নারী রেশমা শফিকউদ্দিন দিল্লি হাইকোর্টে একটি পিটিশন দায়ের করেছেন। পিটিশনে তিনি অভিযোগ করেছেন যে, দিল্লি পুলিশ কর্মকর্তারা উনাকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছাড়াই জোর করে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে হয়রানি করেছে।
আটকের ঘটনাটি ঘটেছে ৬ নভেম্বর ভোর রাতে। রেশমা পুরোনো দিল্লিতে ভোর ৩ টার দিকে তার নিচতলার ফ্ল্যাটের সামনের গেটে অস্বাভাবিক আওয়াজ শুনতে পান। তিনি দেখেন যে, অনেক পুলিশ আবাসিক ভবনে প্রবেশের চেষ্টা করছে। পুলিশ তার বাড়িতে ঢুকে তল্লাশি চালাতে চাইলে রেশমা রাজি হননি। তিনি তাদের জানিয়েছিলেন যে, বাড়িতে একা থাকায় তিনি অনিরাপদ বোধ করছেন। আর তিনি একজন পর্দানশীল মহিলা, তাই কোন গায়রে মাহরাম কাউকে ঘরে প্রবেশের অনুমতি দিবেন না।
রেশমা ১১ই নভেম্বর দিল্লি পুলিশের কমিশনারকে ইমেইল করে জানিয়েছেন যে, পুলিশ কর্মকর্তারা কীভাবে তার ভাই রেহান এবং ইরফান ওরফে লালার সন্ধান করছিল। তার দুই ভাই একটি অজ্ঞাত মামলায় ওয়ান্টেড। বারবার তার বাড়ি থেকে ভাইদের অনুপস্থিতির বিষয়ে পুলিশকে জানানোর পরেও পুলিশ রেশমার বাড়িতে জোর করে প্রবেশ করে এবং বেআইনিভাবে তল্লাশি চালায়। সেই সাথে তারা রেশমাকে হুমকি দেয় এবং গালিগালাজ করে।
রেশমা শফিকউদ্দিন অভিযোগে আরো উল্লেখ করেছেন যে তাকে ছেড়ে দেওয়ার সময় পুলিশ হুমকি দিয়েছে কাউকে কিছু না জানাতে।
আবেদনকারীর পক্ষে আইনজীবী এম সুফিয়ান সিদ্দিকী যুক্তি দেন, পুলিশ কর্মকর্তাদের কর্মকাণ্ড পিটিশনারের মৌলিক অধিকার এবং সার্বজনীন মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে।
সুফিয়ান সিদ্দিক দ্য অবজারভার পোস্টকে বলেছেন, “রিট পিটিশনে আমরা একাধিক বিষয় চেয়েছি, এক নম্বর হল একটি স্বাধীন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত যা একজন সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তার সরাসরি তত্ত্বাবধানে করা হবে। দ্বিতীয়ত, ঘটনার সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া। এবং তৃতীয়ত, তার মৌলিক ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য ক্ষতিপূরণ।”
আবেদনে বলা হয়েছে, একজন “পর্দানশীল” নারীর “জীবনের অধিকার” এর অধীনে পোশাক পরিধান ও নির্বাচনের অধিকার রয়েছে। সুতরাং তাকে পর্দা ছাড়া পরপুরুষের মুখোমুখি হতে বাধ্য করা যাবে না। এছাড়া পুলিশ কর্মকর্তাদের আচরণ তার ‘গোপনীয়তার অধিকার’, ‘মর্যাদার সাথে বাঁচার অধিকার’ এবং ‘রাইট টু রেপুটেশন’-এর একটি জঘন্য লঙ্ঘন।
আবেদনে আরও বলা হয়েছে যে পুলিশের পদক্ষেপগুলি “তার সম্মতি ছাড়াই জোরপূর্বক তার বাসভবনে প্রবেশ করে তার মর্যাদা এবং আত্মসম্মানের উপর একটি অমার্জনীয় কলঙ্ক” রেখেছিল, তাও যখন সে একা ছিল। অবৈধভাবে বাড়ি তল্লাশি চালায়, তাকে তার পর্দা ছাড়া তার বাসভবন থেকে টেনে নিয়ে যায়। থানায় বোরকা পরে তাকে প্রায় ১৩ ঘন্টা বেআইনিভাবে আটকে রেখে রাতের বেলা তার সাথে অমানবিক ও অপমানজনক আচরণ করা হয়।”
৩০ নভেম্বর গৃহীত একটি আদেশে বিচারপতি ব্যানার্জি পুলিশ সদর দফতরের ভিতরে এবং আশেপাশে স্থাপিত সমস্ত ক্যামেরার সিসিটিভি ফুটেজ এবং নগর কর্তৃপক্ষ ও ঘটনার এলাকায় ব্যক্তিগত সমস্ত ক্যামেরার সিসিটিভি ফুটেজ সংরক্ষণ করার নির্দেশ দেয়।
কোন নারীকে আটক বিষয়ে আইনজীবী সংক্ষেপে বলেছে, আইন অনুসারে সূর্যাস্তের পরে এবং সূর্যোদয়ের আগে কোনও মহিলাকে গ্রেপ্তার করার ক্ষমতা পুলিশের নেই। শুধুমাত্র ব্যতিক্রমী পরিস্থিতিতে, আপনি রাতের বেলা একজন মহিলাকে গ্রেপ্তার করতে পারেন, তাও ওই এলাকার বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের কাছ থেকে ওয়ারেন্ট আকারে লিখিত অনুমতি পাওয়ার পরে। গ্রেপ্তারের সময় পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে একজন নারী পুলিশ কর্মকর্তাকেও থাকতে হয়। কোনও ওয়ারেন্ট ছিল না, কোনও মহিলা পুলিশ অফিসার ছিল না, এটি ছিল সম্পূর্ণ বেআইনী কাজ।”