সম্প্রতি ইমারতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের রাজনৈতিক উপ-প্রধানমন্ত্রী জনাব মৌলভী আব্দুল কবির হাফিযাহুল্লাহ দেশটির শিক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ সম্পর্কিত একটি জাতীয় সম্মেলনে যোগদান করেছিলেন। উক্ত অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে তিনি আফগানিস্তানকে নিয়ে পশ্চিমা বিশ্ব ও কথিত আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর দ্বিমুখী আচরণ ও ভণ্ডামি স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন।
উক্ত বক্তব্যটি ইমারতে ইসলামিয়ার অফিসিয়াল ওয়েব সাইটে এক প্রতিবেদনে তুলে ধরেছেন ঐ ওয়েব সাইটের লেখক- মোহাম্মদ দাউদ ইশাকজাহী (ইউসুফি)। প্রতিবেদনটি আমরা আল-ফিরদাউসের সম্মানিত পাঠকদের জন্য তুলে ধরেছি-
বক্তব্যের শুরুতে ইমারতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের রাজনৈতিক উপ-প্রধানমন্ত্রী জনাব মৌলভী আব্দুল কবির হাফিযাহুল্লাহ উল্লেখ্য করেছেন, অর্থনীতিমুখী পররাষ্ট্রনীতির ভিত্তিতে আফগানিস্তান সরকার বিশ্বের সব দেশের সঙ্গে ইতিবাচক মিথস্ক্রিয়া ও ভারসাম্যপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এবং বর্তমানে প্রায় ২০টি দেশের সাথে আফগানিস্তানের কার্যক্রম সক্রিয় রয়েছে।
বর্তমানে আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে, দেশে জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে অর্থনৈতিক প্রকল্প গড়ে তোলা। দেশ-বিদেশে আফগান নাগরিকদের অধিকার নিশ্চিত করা। দেশে মাদক ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই এবং সামাজিক নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা নিশ্চিত করা।
এটি স্পষ্ট যে, ইমারতে ইসলামিয়ার কর্মকর্তারা জনগণকে শান্তিপূর্ণ ও সুরক্ষিত পরিবেশ প্রদানের লক্ষ্যে চব্বিশ ঘণ্টা অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন। কিন্তু কিছু আন্তর্জাতিক সংস্থা যারা নিজেদের সুনির্দিষ্ট এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করে থাকে, তারা বিভিন্ন অজুহাতে আফগানের শান্তি নষ্ট করার চেষ্টা করছে। তারা যদি একদিন সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষার দাবি করে তো পরের দিন নারী, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অধিকার এবং সরকার বিরোধীদের সুরক্ষার পক্ষে কথা বলে। এই ধরনের হস্তক্ষেপ আমাদের জাতির স্বাচ্ছন্দ্য ও শান্তি নষ্ট করছে।
আমরা যদি বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে আফগানিস্তানের তুলনা করি, তবে আমরা দেখতে পাব একই ধরণের ঘটনা ঐসব দেশে প্রতিদিনই ঘটছে। কিন্তু ঐসব বিষয় সেসব দেশের সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। তবে অন্যসব দেশে এসব ঘটনা তেমন প্রচারণা না পেলেও, আফগানিস্তানে ব্যাপারে সবাই সতর্ক ও ভুল ধরার চেষ্টা করছে।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, মানবাধিকারের পক্ষে কথা বলা অনেক পশ্চিমা দেশ মুসলিমদের ওপর হিজাব পরিধান নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে! কিন্তু তাদেরকে যখন হিজাব নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়, তখন তারা নিজেদের ইচ্ছামতো দাবি করে যে, এতে নাকি তাদের দেশের নিরাপত্তা এবং শান্তি নিশ্চিত হয়। এ ক্ষেত্রে তারা বর্ণবাদ নির্মূল এবং তাদের নিজস্ব নাগরিকদের সমান অধিকার নিশ্চিত করার দায়িত্ব এড়িয়ে যায়!
কিন্তু আফগানিস্তানের সরকার যখন দেশের শান্তি ও জনগণের কল্যাণে শরিয়াহ আইন অনুযায়ী হিজাব বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, তখন একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের প্রতি সম্মান না দেখিয়ে সবার চোখ শুধুমাত্র আফগানিস্তানের দিকে নিবদ্ধ থাকে। তারা তাদের দেশের সমস্যা বাদ দিয়ে দিনের পর দিন আফগানিস্তান নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ করে। এবং তারা আফগান সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করে।
বক্তব্যের এক পর্যায়ে মৌলভী আব্দুল কবির হাফিযাহুল্লাহ প্রশ্ন রেখে বলেন, ইউরোপের দেশগুলোতে মিথ্যা অজুহাতে মসজিদ ও ইসলামি প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া কি মানবাধিকারের লঙ্ঘন নয়? তারা কেন ঐসব লজ্জাজনক সংকট মোকাবেলা করছে না! তারা কেন ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষায় পদক্ষেপ নিচ্ছে না!
এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, আফগানিস্তান একটি মুসলিম দেশ। এখানে সকল প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাকে বাধ্যতামূলক শরিয়া ও ইসলামি আইন মেনে চলতে হবে। ইসলামি আইনের প্রতি সবার আনুগত্য করা মানেই আফগান জনগণের ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা।
উপ-প্রধানমন্ত্রী মৌলভী আব্দুল কবির হাফিযাহুল্লাহ আরও প্রশ্ন রেখে বলেন, কোন দেশ বা আন্তর্জাতিক সংস্থা কী অন্যকে তার প্রতিষ্ঠানে বা দেশে বসে তাদের বিরুদ্ধে কাজ করার অনুমতি দেয়?
ফিলিস্তিনি মুক্তি আন্দোলনের নেতা ইয়াসির আরাফাতকে ১৯৮৮ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে আমন্ত্রণ করা হয়। কিন্তু মার্কিন সরকার তাকে ভিসা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। ১৯৭৩ সালে নিউ ইয়র্ক শহরে জাতিসংঘের নিয়ম-নীতির ওপর সংস্থাটি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র “সদর দফতর চুক্তি” তে স্বাক্ষর করে। এই চুক্তি অনুসারে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কোনও ব্যতিক্রম ছাড়াই সব দেশের প্রতিনিধিদের জাতিসংঘের সদর দফতরে প্রবেশের সুবিধার্থে বিনামূল্যে যত দ্রুত সম্ভব ভিসা প্রদান করবে।
এই চুক্তির ১২ নং অনুচ্ছেদে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই সব দেশের প্রতিনিধিদের প্রবেশের অনুমতি দিতে হবে। অন্যভাবে বললে, যদি কোন দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয় তবুও নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দফতরে সেই দেশের প্রতিনিধিদের বাধা দেয়া যাবে না।
কিন্তু, ২০১০ সালে আমেরিকান কংগ্রেস (সংসদ) “বৈদেশিক সম্পর্ক লাইসেন্স” নামে একটি আইন অনুমোদন করে। এবং দেশটির রাষ্ট্রপতিকে “সদর দফতর চুক্তির” সাথে সাংঘর্ষিক ক্ষমতা প্রদান করে। এই আইন অনুযায়ী, যেসব ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তিতে জড়িত বা দেশটির জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে তাদেরকে রাষ্ট্রপতি জাতিসংঘের সদর দপ্তরে প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে পারবে।
এখন আমাদের জাতির কাছে প্রশ্ন, কোন দেশ যখন নিজের স্বার্থ রক্ষার্থে অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক প্রতিক্রিয়া বিবেচনা না করেই কাজ করতে পারে, তখন মিডিয়ায় অপপ্রচার এবং মানসিক চাপ শুধুমাত্র আফগানিস্তানকেই কেন দেয়া হচ্ছে, ঐসব দেশকে কেন দেয়া হচ্ছে না?
পশ্চিমাদের এই দ্বিমুখী আচরণ কেবল তাদের ডাবল স্ট্যান্ডার্ড নীতিকেই নির্দেশ করে। এবং বলা যায়, তারা নিজের দোষে অন্ধ এবং অন্যের প্রতি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিসম্পন্ন।
তথ্যসূত্র:
——-
1. The Dual Standards of Foreign Governments Towards Afghanistan
– http://tinyurl.com/yv6v5exr