সোমালিয়ার রাজধানী মোগাদিশুর বৃহত্তর বিদেশি সামরিক প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে অভিযান চালিয়েছে দেশটির ইসলামি প্রতিরোধ বাহিনী। এতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ৯ প্রশিক্ষক সহ অন্তত ১৭ জন সামরিক অফিসার নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে।
শাহাদাহ এজেন্সির তথ্যমতে, গত ১০ ফেব্রুয়ারি শনিবার রাতে, রাজধানী মোগাদিশুতে সংযুক্ত আরব-আমিরাত (UAE) দ্বারা পরিচালিত একটি সামরিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র লক্ষ্য করে বিধ্বংসী উক্ত অভিযানটি চালানো হয়েছে। অভিযানটি এমন এক সময় চালানো হয়েছে, যখন ক্যাম্পের ভিতরে সংযুক্ত আরব-আমিরাত, বাহরাইন এবং সোমালিয়া সহ কয়েকটি দেশের শীর্ষ সামরিক প্রশিক্ষকরা একটি মিটিংয়ে অংশ নিয়েছিল।
অভিযানটি চালিয়েছেন সোমালি স্পেশাল ফোর্সের সাথে যুক্ত একজন সৈনিক, যিনি সম্প্রতি “UAE” এর উক্ত সামরিক ঘাঁটি থেকে প্রশিক্ষণ শেষ করেছিলেন। পরে তিনি এই ক্যাম্পটিতে বিশেষ ইউনিটের হয়ে কাজের দায়িত্ব পান। আর তিনি এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ভারী মেশিনগান নিয়ে অফিসারদের মিটিং রুমে পর্যন্ত পৌঁছান, এবং মিটিংয়ে অংশ নেওয়া অফিসারদের টার্গেট করে গুলি চালাতে শুরু করেন। অভিযানের সময় ঐ কক্ষে আমিরাত ও বাহরাইনের ২০ কর্মকর্তা সহ অন্তত ৩০ জন সেনা অফিসার অবস্থান করছিল। অভিযানে শীর্ষ এই সামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে ১৮ জনই নিহত হয় এবং বাকিরা জীবিত বেঁচে ফিরলেও কয়েকজন গুরুতর আহত হয়।
এসময় অন্য সেনা সদস্যরা অফিসারদের রক্ষা করতে এগিয়ে আসলে তাদের সাথেও তীব্র লড়াইয়ে অবতীর্ণ হন ঐ সৈনিক। এতে সোমালি স্পেশাল ফোর্সের কয়েক ডজন সৈন্যও হতাহত হয়।
স্থানীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, অভিযানে নিহত সেনা অফিসারদের মধ্যে ৯ জনই “UAE” সামরিক প্রশিক্ষক এবং ২ জন বাহরাইনের। এই অফিসাররা সোমালিয়ায় ইসলামি শরিয়াহ্ শাসিত অঞ্চলের প্রতিরোধ যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে পশ্চিমা সমর্থিত মোগাদিশু সরকারি বাহিনীকে সামরিক প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিয়ে আসছিল। এছাড়াও নিহত অফিসারদের এই তালিকায় সোমালিয়ার অন্তত ৬ সামরিক কর্মকর্তাও রয়েছে।
সূত্রমতে, নিহত আমিরাতের সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছে সোমালিয়ায় সংযুক্ত আরব আমিরাতের সামরিক অভিযানের নেতৃত্বদানকারী কমান্ডার কর্নেল মোহাম্মদ মুবারক। সে দীর্ঘদিন ধরে আমিরাতের সামরিক গোয়েন্দা বিভাগের সাথে জড়িত ছিল এবং ইয়েমেনের যুদ্ধে দক্ষিণী ভাড়াটে বাহিনীর হয়ে নিরপরাধ বেসামরিক নাগরিকদের হত্যায় অংশ নিয়েছিল। আমিরাতের শীর্ষ সেনা অফিসারদের এই তালিকায় রয়েছে, সামরিক ঘাঁটির প্রধান কর্নেল মোহাম্মদ আল-মানসুরি, প্রশিক্ষক প্রধান মোহাম্মদ আল-শামসি, আন্ডার সেক্রেটারি খলিফা আল বালুশি, কর্পোরাল সুলেমান আল শেহি এবং বাহরাইনের প্রতিরক্ষা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তা মেজর আবদুল্লাহ বিন রশিদ আল নুয়াইমি।
এদিকে দেশটির জনপ্রিয় ইসলামি প্রতিরোধ বাহিনী হারাকাতুশ শাবাব আল-মুজাহিদিন এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই অভিযানের ঘোষণা দেন। প্রতিরোধ বাহিনীর মুখপাত্র আলী ধেরের একটি অডিও বার্তা থেকে জানা যায়, শনিবারের ঐ অভিযানটি হারাকাতুশ শাবাবের সামরিক বিভাগের দিকনির্দেশনায় ২৭ বছর বয়সী সৈনিক মুস্তফা মুখতার নামক একজন প্রতিরোধ যোদ্ধা একাই পরিচালনা করছেন। তাতে ৫০ এরও বেশি সামরিক কর্মকর্তা হতাহত হয়েছে।
মুখপাত্র বলেন, ইসলাম ও মুসলিমদের সমর্থনে সংযুক্ত আরব-আমিরাতের সামরিক বাহিনীকে টার্গেট করা আমাদের জন্য একটি বৈধ অধিকার। কেননা আমিরাত হচ্ছে ইহুদিবাদী-ক্রুসেডার জোটের ডান হাত। মুসলিমরা যেই বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তার পিছনের বিষাক্ত ছোরা হচ্ছে এই দেশটি। এটি এমন এক রাষ্ট্র, যা সর্বত্র ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত কাফের সেনাবাহিনীর সমর্থনে কাজ করে যাচ্ছে।