গাজা শহরের জেইতুন পাড়ার সাহাবা মেডিকেল সেন্টারের কোণে অবস্থিত চার তলা বিশিষ্ট একটি ভবনে বসবাসকারী একই পরিবারের আত্মীয়-স্বজন মিলে প্রায় ১০৩ জন সদস্য নিহত হয়েছে। চলমান ইসরাইলি সহিংসতায় নিহত ঐ পরিবারের একজন জীবিত সদস্য আহমেদ আল-গুফেরি জানান ইসরাইলি বোমার আঘাতে তার স্ত্রী এবং তিন কন্যাসহ এই ১০৩ জন আত্মীয় নিহত হয়েছেন।
আহমেদ বলেন,”আমার মেয়েরা আমার কাছে ছোট পাখি, আমার মনে হচ্ছে আমি স্বপ্নের মধ্যে আছি। আমি এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না যে আমাদের কী হয়েছে।… কোন অপরাধে আমি আমার মা, আমার স্ত্রী, আমার সন্তান এবং আমার ভাইদের থেকে বঞ্চিত হয়েছি, তারা সবাই তো বেসামরিক ছিল?।”
‘কে আমায় বাবা বলে ডাকবে? কে বলবে প্রিয়তম? গাজায় আমার সব স্বপ্ন ভেঙে গেছে? কার জন্য সেখানে ফিরে যাব?’
আহমেদ আল-গুফেরির জীবিত আত্মীয়দের অপর একজন হামিদ আল-গুফেরি বিবিসিকে বলেছেন যে, একটি ক্ষেপণাস্ত্র প্রথমে তার পরিবারের বাড়ির প্রবেশপথে আঘাত করেছিল। তারা দ্রুত বেরিয়ে পাশে মামার বাড়িতে গেলে “পনের মিনিট পরে একটি যুদ্ধবিমান ওই বাড়িতেও আঘাত হানে। এতে আহমেদের মা, তার চার ভাই এবং তাদের পরিবার, তার কয়েক ডজন খালা, চাচা এবং চাচাত ভায়েরাও নিহত হয়। সব মিলিয়ে মৃতের সংখ্যা শতাধিক।
হামিদ আল-গুফেরি বলেন যখন হামলা শুরু হয়েছিল তখন যারা পাহাড়ে পালিয়ে গিয়েছিল তারা বেঁচে গিয়েছিল এবং যারা বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিল তারা নিহত হয়েছিল।
তিনি আরো বলেন,”আমাদের পাশের চারটি বাড়িতে হামলা হয়েছে। প্রতি ১০ মিনিটে তারা একটি বাড়িতে আঘাত করছে। ঘুফেরি পরিবারের ১১০ জন লোক সেখানে ছিল, তাদের মধ্যে গুটিকয়েক ব্যতীত সবাইকে হত্যা করা হয়েছে।”
জীবিতরা বলছেন, সবচেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ ছিলেন একজন ৯৮ বছর বয়সী দাদী এবং সবচেয়ে ছোট ছিল মাত্র নয় দিন আগে জন্ম নেওয়া একটি শিশু ছেলে। দুই মাস পার হয়ে গেলেও ধ্বংসস্তূপের নিচে তাদের কিছু লাশ আটকে আছে।
হামিদ বলেন, ধ্বংসস্তূপ থেকে মৃতদেহ উদ্ধারের জন্য জীবিতরা ভোররাত পর্যন্ত কাজ করেছে।
আড়াই মাস পর তারা এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে থাকা কিছু লাশের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে। আহমেদ বিবিসিকে বলেন, “আমরা আজ চারটি মৃতদেহ উদ্ধার করেছি, যার মধ্যে আমার ভাইয়ের স্ত্রী এবং আমার ভাগ্নে মোহাম্মদ রয়েছে, যাদেরকে টুকরো টুকরো করে বের করা হয়েছিল। তারা ৭৫ দিন ধরে ধ্বংসস্তূপের নিচে ছিল।”
তথ্যসূত্র:
1. ‘Who will call me Dad?’ Tears of Gaza father who lost 103 relatives
– http://tinyurl.com/3tp2w43y