পশ্চিম আফ্রিকার দেশ মালিতে আল-কায়েদা সংশ্লিষ্ট প্রতিরোধ বাহিনী ‘জেএনআইএম’ এর হামলা অব্যাহত রয়েছে। চলতি বছরের মার্চ মাসেও দেশটির জান্তা বাহিনী ও ভাড়াটে ওয়াগনার বাহিনীর বিরুদ্ধে অন্তত ১৭টি পৃথক অভিযান পরিচালনা করছেন দলটির মুজাহিদগণ। এতে অনেক শত্রু সৈন্য হতাহতের পাশাপাশি জান্তা বাহিনীর হাতছাড়া হয়েছে অনেক সামরিক ঘাঁটি ও এলাকা।
আল-কায়দা সংশ্লিষ্ট জামা’আত নুসরাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন (জেএনআইএম) এর সাথে যুক্ত আয-যাল্লাকা মিডিয়া সূত্রে জানা যায়, মুজাহিদগণ এমাসে তাদের প্রথম ২টি অপারেশন পরিচালনা করেন ১ মার্চ শুক্রবার সকালে। প্রথমটি সেগু রাজ্যের ওরিউবোকি সেতুর কাছে জান্তা বাহিনীর একটি গাড়ি লক্ষ্য করে বিস্ফোরক ডিভাইস দ্বারা চালানো হয়। এতে গাড়িটি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায় এবং এর সমস্ত আরোহী সৈন্য নিহত হয়।
দ্বিতীয় অভিযানটি চালানো হয় মোপ্তি রাজ্যের সেভারী শহরে। অভিযানটি ‘জেএনআইএম’ এর একজন গেরিলা যোদ্ধা হাতে বহনকারী একটি অস্ত্র দ্বারা শহরের কেন্দ্রে একজন সেনা অফিসারকে লক্ষ্য করে পরিচালনা করেন। এতে উক্ত সেনা অফিসার ঘটনাস্থলেই নিহত হয়, পরে নিহত সেনার অস্ত্রটি জব্দ করেন গেরিলা মুজাহিদ।
এদিকে গত ৫ মার্চ সন্ধ্যায় মালির সেগু রাজ্যে ২টি পৃথক অভিযান চালান মুজাহিদগণ। প্রথম অভিযানটি একটি বিস্ফোরক ডিভাইস দ্বারা চালানো হয়। এতে মালিয়ান সেনাবাহিনীর একটি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং তার আরোহী সৈন্যরা হতাহত হয়। মুজাহিদগণ তাদের দ্বিতীয় অভিযানটি পরিচালনা করেন রাজ্যটির কোয়াম গ্রামে। এই এলাকায় জান্তা বাহিনীর একটি টহল দলকে বিস্ফোরক ডিভাইস ও মাঝারি অস্ত্র দ্বারা লক্ষ্যবস্তু বানান মুজাহিদগণ। ফলে জান্তা বাহিনীর একটি সামরিক যান সম্পূর্ণ ধ্বংস এবং অন্য কয়েকটি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে জান্তা বাহিনীর কতক সৈন্য হতাহত হয়। পরে হতাহত এই সেনাদের ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে নিতে একটি হেলিকপ্টার ঘটনাস্থলে অবতরণ করে।
এমনিভাবে গত ৯ মার্চ কিদাল রাজ্যের সলিত অঞ্চলে জান্তা ও ওয়াগনার বাহিনীকে টার্গেট করে একটি সফল অভিযান চালান মুজাহিদগণ। অভিযানের শুরুতেই মুজাহিদগণ বিস্ফোরক ডিভাইস দ্বারা হামলা চালান, এরপর মাঝারি অস্ত্র ব্যবহার করেন। ফলে অসংখ্য জান্তা সৈন্য এবং ওয়াগনার ভাড়াটে সৈন্য হতাহত হয়। পরে শত্রু সৈন্যরা এই অঞ্চলের ইগারঘর উপত্যকা ছেড়ে পালিয়ে যায়।
এর কয়েকদিন পর অর্থাৎ ১৩ মার্চ সন্ধ্যায়, সেগু রাজ্যের ফাকো গ্রামে অতর্কিত একটি আক্রমণ চালান মুজাহিদগণ। আক্রমণটি এই এলাকায় জান্তা বাহিনীর একটি সামরিক চেকপোস্ট লক্ষ্য করে চালানো হয়। ফলশ্রুতিতে বেশ কিছু সৈন্য আহত হয়ে এবং বাকিরা চেকপোস্ট ছেড়ে পালিয়ে যায়। তখন মুজাহিদগণ সামরিক চেকপোস্টের নিয়ন্ত্রণ নেন এবং বেশ কিছু অস্ত্র গনিমত লাভ করেন।
এদিকে গত ১৬ মার্চ সিকাসো রাজ্যের দুন্দ্রিস এলাকায় একটি বড় ধরনের সামরিক অপারেশন চালান মুজাহিদগণ। অভিযানটি জান্তা বাহিনীর একটি সামরিক ব্যারাক লক্ষ্য করে চালানো হয়। এতে জান্তা বাহিনীর ৪টি সামরিক যান ধ্বংস এবং অন্তত ১০ সৈন্য নিহত হয়। এছাড়াও অন্যান্য অসংখ্য সৈন্য আহত হয়, যারা জীবন বাঁচাতে পালিয়ে যায়। সেনাদের এই পলায়নের পর মুজাহিদগণ সামরিক ব্যারাক ও দুন্দ্রিস এলাকার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেন। এসময় মুজাহিদগণ ব্যারাক থেকে ৫টি সামরিক যান, ২টি মোটরসাইকেল, ১২টি দুশকা, ৫টি পিকা, ২৭টি ক্লাশিনকোভ, ১টি আরপিজি, ৬টি পিস্তল, ৬৮টি বুলেট বাক্স, ২১টি গোলাবারুদ ভর্তি বাক্স সহ অসংখ্য সামরিক সরঞ্জাম গনিমত হিসাবে অর্জন করেন।
‘জেএনআইএম’ মুজাহিদগণ গত ১৭, ১৮ এবং ১৯ মার্চ, মালির কিদাল, গাও, মোপ্তি এবং টিম্বুকটো রাজ্যের গুরত্বপূর্ণ সামরিক অবস্থানগুলো লক্ষ্য করে কয়েক ডজন আর্টিলারি ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালান। মুজাহিদদের এসকল হামলার প্রধান টার্গেটে পরিণত হয় টিম্বুকটো ও মোপ্তি রাজ্যের সামরিক বিমানবন্দর এবং কিদাল ও গাও রাজ্যে অবস্থিত একাধিক সামরিক ঘাঁটি। মুজাহিদদের এসকল আর্টিলারি হামলার ফলে বিমানবন্দর ও সামরিক ঘাঁটিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি জান্তা বাহিনী ও ওয়াগনারের অনেক সৈন্য হতাহত হয়।
এদিকে গত ২৪ ও ২৫ মার্চ, মোপ্তি রাজ্যের কেন্দ্রস্থলে ও তিনেনকৌ শহরে ২টি পৃথক অভিযান চালান মুজাহিদগণ। অভিযান ২টি একটি সামরিক চৌকি ও একটি টহল দলকে টার্গেট করে চালানো হয়। ফলে বেশ কিছু জান্তা সৈন্য হতাহত হয়।
এদিন সকালে মোপ্তি রাজ্যের কেন্দ্রীয় শহরে একটি পুলিশ ফাড়িতে হামলা চালান মুজাহিদগণ। এতে ৩ পুলিশ সদস্য নিহত এবং আরও কতক সদস্য আহত হয়। অভিযান শেষে মুজাহিদগণ ঘটনাস্থল থেকে ২টি মোটরসাইকেল ও ২টি পিস্তল জব্দ করেন। আর ফিরার পথে পুলিশ ফাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে দেন।
গত ২৯ মার্চে মালির জাবালি শহরে একটি সামরিক যান লক্ষ্য করে আইইডি বিস্ফোরণ ঘটান মুজাহিদগণ। বিস্ফোরণে সামরিক যানটি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয় এবং আরোহী সমস্ত সৈন্য নিহত হয়।
বিদ্রঃ প্রকাশিত বিভিন্ন নিউজ ও জেএনআইএম এর প্রকাশিত বিভিন্ন তথ্য থেকে অভিযানের সংখ্যা ও বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। অপ্রকাশিত অভিযান আরো থাকতে পারে, আল্লাহু ‘আলাম।