ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলে ছাত্রলীগের ‘গেস্টরুম’ কর্মসূচিতে প্রচণ্ড গরমে অচেতন হয়ে পড়েছিলেন শিক্ষার্থী নিয়ামুল ইসলাম। কিন্তু এ ঘটনা তদন্তে হল কর্তৃপক্ষের গঠিত কমিটির ডাকে তিনি সাড়া দিচ্ছেন না। তার সহপাঠীদের ধারণা, ছাত্রলীগের ‘চাপে’ তিনি মুখ খোলার সাহস পাচ্ছেন না।
নিয়ামুল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র।
তদন্ত কমিটির প্রধান রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ শাহ মিরান প্রথম আলোকে বলেন, ‘নিয়ামুল ইসলামকে আজ তিনবার ফোন করেছি, কিন্তু ফোনে পাইনি। গতকাল বুধবার হল প্রাধ্যক্ষও ফোন করেছিলেন, কিন্তু পাননি। ভুক্তভোগীর বক্তব্য আমাদের শুনতে হবে। কিন্তু তাকে ফোনে পাচ্ছি না। তার পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগও দাখিল করা হয়নি। আমাদের সাত কার্যদিবস সময় দেওয়া হয়েছে, আমরা কাজ করছি।’
নিয়ামুলের এক সহপাঠী নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, নিয়ামুল খুব চাপের মধ্যে আছে। ‘বড় ভাইয়েরা’ তাকে কোথাও কোনো অভিযোগ না করতে বলেছে। ‘বড় ভাইদের’ কথা না শুনলে পরে ঝামেলা হতে পারে, এমন আশঙ্কা থেকে হয়তো সে (নিয়ামুল) কোনো অভিযোগ করার সাহস পাচ্ছে না। একই কারণে তদন্ত কমিটির কাছেও যাচ্ছে না। হল ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণে। ‘বড় ভাইদের’ বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করলে হল প্রশাসন নিয়ামুলের নিরাপত্তা দিতে পারবে না, এটা তো নিশ্চিত।
নিয়ামুলের সঙ্গে কথা বলতে বৃহস্পতিবার বিকেলে মুঠোফোনে দুই দফায় যোগাযোগের চেষ্টা করেন প্রথম আলোর প্রতিবেদক। একবার তার ফোন ব্যস্ত দেখায়, আরেকবার বন্ধ পাওয়া যায়। তবে তিনি ক্যাম্পাসেই আছেন বলে জানিয়েছেন তার সহপাঠীরা।
গত মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে বিজয় একাত্তর হলের টিভিকক্ষে ছাত্রলীগের ‘গেস্টরুম’ কর্মসূচি চলাকালে অতিরিক্ত গরমে অচেতন হয়ে পড়েন নিয়ামুল। সেখানে থাকা তার একাধিক সহপাঠী প্রথম আলোকে বলেন, নিয়ামুল ও তার সহপাঠীদের ‘গেস্টরুমে’ অনেকক্ষণ ধরে দাঁড় করিয়ে রাখে ছাত্রলীগের ‘বড় ভাইয়েরা’। তীব্র গরমে একপর্যায়ে শারীরিক অস্বস্তি অনুভব করেন নিয়ামুল। অস্বস্তির কথা ‘বড় ভাইদের’ বললেও তারা তাতে কর্ণপাত করেনি। একপর্যায়ে নিয়ামুল অচেতন হয়ে পড়ে যান। পরে সহপাঠীরা তাকে ধরাধরি করে তার বিছানায় নিয়ে যান। সহপাঠীরা নিয়ামুলের মাথায় পানি দেন। এ ঘটনা যেন জানাজানি না হয়, সে জন্য তাকে হাসপাতালে নিতে নিষেধ করে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।
বিষয়টি জানাজানি হলে এ ঘটনা তদন্তে গতকাল বুধবার তিন সদস্যের একটি কমিটি করে দেন বিজয় একাত্তর হলের প্রাধ্যক্ষ আবদুল বাছির।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক হলগুলো ছাত্রলীগের বিভিন্ন পক্ষ নিয়ন্ত্রণ করে। প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ছাত্রলীগ-নিয়ন্ত্রিত ‘গণরুমে’ থেকে বাধ্যতামূলকভাবে ছাত্রলীগের দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিতে হয়। ‘অবাধ্য’ শিক্ষার্থীদের ‘বিচার’ ও আদবকায়দা শেখানোর নামে মানসিক নিপীড়ন (কখনো কখনো শারীরিকও) করা হয় হলের টিভিকক্ষে কিংবা অতিথিকক্ষে, যা ছাত্রলীগের ‘গেস্টরুম’ কর্মসূচি নামে পরিচিত।
তথ্যসূত্র:
১. গেস্টরুমে অচেতন ভুক্তভোগী ছাত্র তদন্ত কমিটির কাছে যাচ্ছেন না
– https://tinyurl.com/482d2s2t