নীতিমালার তোয়াক্কা না করে ৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা ১২৫ কিলোমিটার মিটারগেজ রেলপথ মাত্র ৮ বছরেই তুলে ফেলা হচ্ছে। বিষয়টিকে জেনেশুনে জনগণের অর্থ অপচয় বলছেন যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা। আর সাফাই গেয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে উন্নয়নের স্বার্থেই করা হচ্ছে সব।
জানা যায়, গাজীপুরের টঙ্গী থেকে কিশোরগঞ্জের ভৈরব পর্যন্ত শতবর্ষী মিটারগেজ রেললাইনের পাশে ২০১৬ সালে নির্মাণ করা হয় ৬১ কিলোমিটারের আরেকটি মিটারগেজ রেললাইন। এতে সিঙ্গেল লাইন থেকে ডাবল লাইন মিটারগেজে উন্নীত হয় সেকশনটি। প্রকল্পে খরচ হয় ২ হাজার ২১৬ কোটি টাকা।
একই সময়ে কুমিল্লার লাকসাম থেকে চিনকি আস্তানা পর্যন্ত বিদ্যমান মিটারগেজ রেললাইনের পাশে তৈরি করা হয় ৬৪ কিলোমিটারের আরেকটি মিটারগেজ পথ। এ প্রকল্পে খরচ হয় প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা। সব মিলিয়ে ৪ হাজার কোটি টাকায় বানানো হয় ১২৫ কিলোমিটার নতুন রেলপথ। এতে গতি আসে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলরুটে।
রেললাইনের মেয়াদ ৩০-৩৫ বছর হলেও মাত্র ৮ বছরের মাথায় চার হাজার কোটি টাকার ১২৫ কিলোমিটার রেলপথ তুলে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলওয়ে।
প্রকল্পের অর্থের সংস্থান না হলেও রেল কর্মকর্তারা বলছে, মিটারগেজ রেলপথকে ব্রডগেজে রূপান্তরের দুটি প্রকল্প নেয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্যই এমন সিদ্ধান্ত।
প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থায়ন নিয়ে সমস্যা হবে না জানিয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অবকাঠামো) মো. আরিফুজ্জামান বলে, অর্থায়ন নিয়ে কথাবার্তা চলছে। আশা করি সমস্যা হবে না। ফাইন্ডিং ফাইনালাইজিং হতে তো সময় লাগে। আলোচনা হচ্ছে।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রেলের উন্নয়ন নীতিমালা উপেক্ষা করেই মিটারগেজ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে, যা পরিকল্পনাহীন উন্নয়নের উদাহরণ।
রেল বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. হাদিউজ্জামান বলেন, মাস্টার প্ল্যানে যেখানে সুস্পষ্টভাবে বলা আছে যে অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা হিসেবে ব্রডগেজের সংস্থান রাখতে হবে, সেখানে মিটারগেজ করা মানে একটা অপরিপক্ব পরিকল্পনা। এটা বিনিয়োগের একটা নিদারুণ অপচয়।
সবকিছুই হচ্ছে উন্নয়নের স্বার্থে দাবি করে অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অবকাঠামো) মো. আরিফুজ্জামান বলে, ‘মোটেই অপচয় মনে করি না। কারণ, এটা উন্নয়নশীল দেশের একটা ক্যারেক্টার। আপনার অবস্থা দিন দিন যখন ভালো হবে তখন এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় ট্রান্সফার করবেন। সেটাই স্বাভাবিক।’
প্রকল্পের সমীক্ষা যাচাই শেষ। চলতি বছরই ব্রডগেজ রেললাইন নির্মাণের কাজ শুরু করতে চায় রেলওয়ে।
তথ্যসূত্র:
১. রেলের ‘ভুলে’ জলে যাচ্ছে ৪ হাজার কোটি টাকা! – https://tinyurl.com/svurpnva