জাবালিয়ার মৃত্যুফাঁদে আটকা ইসরায়েল: ৩ দিনে হতাহত ২৪০ জায়োনিস্ট সৈন্য

0
337

গাজায় জায়োনিস্ট আগ্রাসনের ৭ মাস পেরিয়ে ৮ম মাসেও যুদ্ধের উত্তপ্ততা কমে নি একটুও। প্রতিরোধ যোদ্ধারাও থেমে নেই, তারা এখন আগের চাইতে আরও বেশি কৌশলী ও যুদ্ধে পারদর্শী হয়ে উঠেছেন। ফলে যুদ্ধের সময় এবং স্থানও ঠিক করছেন মুজাহিদগণ, যার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত উত্তর গাজার জাবালিয়ার যুদ্ধ ফ্রন্ট।

গাজার উত্তরাঞ্চলে ফিলিস্তিন ভিত্তিক সশস্ত্র দলগুলো পুনর্গঠিত হচ্ছে, এমন তথ্যের ভিত্তিতে গাজার উত্তরাঞ্চলে নতুন করে হামলার পরিকল্পনা শুরু করে ইসরায়েল। আর এটি বাস্তবায়নে গত ১১ মে, উত্তরাঞ্চলের জাবালিয়া শরনার্থী ও এর আশপাশের এলাকাগুলোতে সহিংস আক্রমণ শুরু করে জায়োনিস্ট বাহিনী। বিপরীতে প্রতিরোধ যোদ্ধারাও নতুন এক যুদ্ধ কৌশলে জাবালিয়াতে জায়োনিস্ট বাহিনীর বিরুদ্ধে পাল্টা তীব্র আক্রমণ চালাতে শুরু করেন।

সেই ধারাবাহিকতায়, গাজার সশস্ত্র প্রতিরোধ বাহিনীগুলো গত ১৪-১৬ মে’র মধ্যে জাবালিয়ায় জায়োনিস্ট বাহিনীর বিরুদ্ধে ১০৬টি অভিযান পরিচালনা করেন। এরমধ্যে আল-কাসসাম ও আল-কুদস নামক ২টি প্রতিরোধ বাহিনীর বীর যোদ্ধাদের ৮৭টি পৃথক অভিযানেই অন্তত ২৪০ জায়োনিস্ট সৈন্য হতাহত হয়। হতাহতদের মধ্যে নিহত জায়োনিস্ট সৈন্য রয়েছে ১০৫ জন, আহত আরও ১৩৫ জন। আর ধ্বংস হওয়া সাঁজোয়া যানের মধ্যে রয়েছে ৩০টি ট্যাংক, ৪টি এপিসি, ১৩টি বুলডোজার, ২টি ড্রোন ও ১টি রোবট। এই তিনদিন অঞ্চলটির অন্যান্য প্রতিরোধ যোদ্ধাদের দ্বারা পরিচালিত বাকি ১৯টি অভিযানেও অনেক জায়োনিস্ট সৈন্য হতাহত হয়েছে, ধ্বংস ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অনেক সাঁজোয়া যান ও সামরিক সরঞ্জাম।

জাবালিয়ার যুদ্ধে সবচাইতে বেশি হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটে গত ১৪ মে পরিচালিত প্রতিরোধ যোদ্ধাদের ৪১টি পৃথক অভিযানে। এদিন আল-কাসসাম ব্রিগেডের যোদ্ধাদের ২৯টি অভিযানেই অন্তত ৩২ জায়োনিস্ট সৈন্য নিহত এবং আরও ৬০ সৈন্য হতাহত হয়। আর আল-কুদস ব্রিগেডের যোদ্ধাদের ৭টি অভিযানে নিহত হয় ৬ জায়োনিস্ট সৈন্য, আহত হয় আরও ১৪ সৈন্য। উভয় বাহিনীর প্রতিরোধ যোদ্ধাদের এদিনের অভিযানে জায়োনিস্ট বাহিনীর ১১টি ট্যাংক, ৩টি এপিসি যান, ৪টি বুলডোজার ও ২টি ড্রোন ধ্বংস হয়।

এমনিভাবে গত ১৫ মে বুধবার, জাবালিয়ায় আল-কাসসাম ব্রিগেডের অভিযানে নিহত হয় অন্তত ২৩ জায়োনিস্ট সৈন্য, আহত হয় আরও কয়েক ডজন। এদিন আল-কুদস ব্রিগেডের অভিযানে নিহত হয় অন্তত ১৩ জায়োনিস্ট সৈন্য, হতাহত হয় আরও বহু সংখ্যক। দু’টি প্রতিরোধ বাহিনীর এদিনের অভিযানে ধ্বংস হয় জায়োনিস্ট বাহিনীর ৬টি ট্যাংক ও ৪টি বুলডোজার।

আর গত ১৬ মে বৃহস্পতিবার, ফের জাবালিয়ায় জায়োনিস্ট বাহিনীর বিরুদ্ধে অতর্কিত আক্রমণ সহ বেশ কিছু অ্যাম্বুশ করেন প্রতিরোধ যোদ্ধারা। এদিন শুধু আল-কাসসাম যোদ্ধাদের অভিযানেই নিহত হয় অন্তত ২৪ জায়োনিস্ট সৈন্য, আহত হয় আরও ৬১ এরও বেশি। অপরদিকে আল-কুদস ব্রিগেডের অভিযানেও এদিন অন্তত ৭ জায়োনিস্ট সৈন্য নিহত হয়। আর উভয় প্রতিরোধ বাহিনীর অভিযানে এদিন জায়োনিস্ট বাহিনীর ১৪টি মেরকাভা ট্যাঙ্ক, ৭টি D9 বুলডোজার ও ১টি এপিসি যান ধ্বংস হয়।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, গাজার দক্ষিণের শহর রাফাহ থেকে শত্রুকে বিক্ষিপ্ত করতে প্রতিরোধ যোদ্ধারা জাবালিয়ায় নিজেদের তৈরি ফাঁদে ইসরায়েলি বাহিনীকে ডেকে নিয়েছে। এখন প্রতিরোধ যোদ্ধারা অঞ্চলটির ধ্বংসস্তুপের নিচের বিস্তৃত টানেল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে শত্রুর বিরুদ্ধে সফল অ্যাম্বুশ ও আতর্কিত সব আক্রমণ চালাচ্ছেন। আর আল-ইয়াসিন রকেটের আঘাতে ধ্বংস করেছেন জায়োনিস্ট বাহিনীর অত্যাধুনিক সব সাঁজোয়া যান।

সবমিলিয়ে, গত ৮ মাস ধরে গাজার জনগণের সাহস ও ধৈর্যের সামনে জায়োনিস্ট বাহিনী অসহায় হয়ে পড়েছে। গাজার জনগণের এই সাহসিকতা মুসলিম বিশ্বে বিশেষ করে যুবকদেরকে ইহুদিবাদী আধিপত্য থেকে পৃথিবীকে মুক্তি করতে এবং শরিয়াহ্ প্রতিষ্ঠার সশস্ত্র আন্দোলনে যোগ দিতে অনুপ্রাণিত করবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধফিলিস্তিনের জিহাদ || আপডেট – ১৬ মে, ২০২৪
পরবর্তী নিবন্ধগাজায় ১৫ হাজারের বেশি শিশু নিহত