মুমিনের ব্যাপারে সুধারণা রাখা, মন্দ ধারণা থেকে বিরত থাকা

1
253

মুমিন মুমিনের ভাই। ভাইয়ের প্রতি ভাইয়ের সুধারণা পোষণ করতে হবে। সুধারণা সমাজে কল্যাণ বয়ে আনে, ভ্রাতৃত্ববোধ অটুট রাখে। প্রত্যেক বিবেকবান মানুষেরই সুধারণামূলক মনোভাব থাকা আবশ্যক। অকাট্য তথ্য প্রমাণ ব্যতিত কারো প্রতি মন্দ ধারণা কিংবা অনুমান করে কথা বলা ঠিক নয়।

আল্লাহ তাআলা বলেন-
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اجۡتَنِبُوۡا کَثِیۡرًا مِّنَ الظَّنِّ ۫ اِنَّ بَعۡضَ الظَّنِّ اِثۡمٌ وَّ لَا تَجَسَّسُوۡا وَ لَا یَغۡتَبۡ بَّعۡضُکُمۡ بَعۡضًا ؕ اَیُحِبُّ اَحَدُکُمۡ اَنۡ یَّاۡکُلَ لَحۡمَ اَخِیۡهِ مَیۡتًا فَکَرِهۡتُمُوۡهُ ؕ وَ اتَّقُوا اللّٰهَ ؕ اِنَّ اللّٰهَ تَوَّابٌ رَّحِیۡمٌ

‘হে মুমিনগণ! তোমরা অনেক ধারণা (করে কথা বলা) থেকে বেঁচে থাক। নিশ্চয়ই কতক ধারণা গোনাহ। এবং গোপনীয় বিষয় অনুসন্ধান করো না। তোমাদের কেউ যেন কারও পেছনে নিন্দা না করে। তোমাদের কেউ কি তারা মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ করবে? বস্তুতঃ তোমরা তো একে ঘৃণাই করো। আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু।’ (সুরা হুজরাত : আয়াত ১২)

অপর দিকে মন্দ ধারণা পোষণকারী ব্যক্তি হিংসা-বিদ্বেষ, দ্বন্দ-কলহে ইন্ধন যোগায়। নানান অন্যায়-অসার কথাবার্তার বিস্তার ঘটায়। মন্দ ধারণার বশবর্তী হয়ে মনে অসন্তোষের দানা বাঁধতে শুরু করে। মন্দ ধারণার মধ্য দিয়ে মানুষের ভ্রাতৃত্ববোধে চিড় ধরে। ফলে একতার বন্ধন ভেঙ্গে টুকরা টুকরা হয়ে যায়।

মন্দ ধারণা ও অতিরিক্ত ধারণা থেকেই হিংসা-বিদ্বেষের সৃষ্টি। আর হিংসা-বিদ্বেষ থেকে অন্যায়ের জন্ম। অনেক ক্ষেত্রে আমরা সুধারণার পরিবর্তে কুধারণাকে প্রাধান্য দিতে পছন্দ করি। অপর মুসলিম ভাইয়ের মানহানি করি। তার মানমর্যাদা নিয়ে টানাহেঁচড়া করি। অথচ এগুলো নিষিদ্ধ কাজ। হাদিসে সংশয়-সন্দেহ থেকে দূরে থেকে পরস্পরের প্রতি সুধারণা পোষণ করতে বলা হয়েছে। মিথ্যা ও অনুমান ভিত্তিক কথা বলতে নিষেধ করা হয়েছে।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
إِيَّاكُمْ وَ الظَّنَّ، فَإِنَّ الظَّنَّ أَكْذَبُ الْحَدِيثِ، لاَ تَجَسَّسُوا، وَلاَ تَحَسَّسُوا، وَلاَ تَبَاغَضُوا، وَكُونُوا عِبَادَ اللهِ إِخْوَانًا

‘তোমরা ধারণা থেকে বেঁচে থাক। কারণ, ধারণা ভিত্তিক কথাই হল সবচেয়ে বড় মিথ্যাকথা। তোমরা একে অপরের দোষ অনুসন্ধান কর না। পরস্পর হিংসা-বিদ্বেষ কর না এবং পরস্পর দুশমনি কর না বরং তোমরা পরস্পর ভাই ভাই হয়ে যাও হে আল্লাহর বান্দারা’।[বুখারী হাদিস/৪৮৪৯, ৫১৪৩।]

তাই কেউ কোন বার্তা দিলে কিংবা কিছু প্রচার করলে ঘটনার সত্যতা যাচাই করতে হবে। আল্লাহ কুরআনে এটির নির্দেশ দিয়েছেন। বিশেষ করে তথ্যের উৎস সম্পর্কে নিশ্চিত বিশ্বাস না থাকলে অথবা তথ্যদাতা অমুসলিম বা ফাসেক-ফাজের হলে তাদের সংবাদ যাচাই করতে হবে। তাই কারো বিষয়ে কোনো মন্দ কথা শুনলে অথবা কোন বিরূপ মন্তব্য শুনলে চুপ থাকতে হবে এবং বিষয়টি যাচাই করতে হবে। সঠিকভাবে যাচাইয়ের পূর্ব পর্যন্ত কোন মন্তব্য করা যাবেনা এবং ধারণা খারাপ করা যাবে না। বরং সুধারণা পোষণ করতে হবে।

মহান আল্লাহ বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنْ جَاءَكُمْ فَاسِقٌ بِنَبَإٍ فَتَبَيَّنُوا أَنْ تُصِيبُوْا قَوْمًا بِجَهَالَةٍ فَتُصْبِحُوْا عَلَى مَا فَعَلْتُمْ نَادِمِيْنَ-
‘হে মুমিনগণ! কোন ফাসিক যদি তোমাদের নিকট কোন বার্তা নিয়ে আসে তোমরা তা পরীক্ষা করে দেখবে, যাতে অজ্ঞতাবশতঃ কোন সম্প্রদায়কে তোমরা কষ্ট না দাও অতঃপর তোমাদের কৃতকর্মের জন্যে লজ্জিত হয়ে যাও’ (হুজুরাত ৪৯/৬)।

মুমিনের প্রতি সুধারণা পোষণ করার একটি নমুনা আশরাফ আলী থানভী রহিমাহুল্লাহ আলোচনা করেছেন। তিনি বলেন, ধরুন এক ব্যক্তি মসজিদে নামাজ পড়তে আসলো এবং তার প্রথম রাকাত ছুটে গেল। তো সেই ব্যক্তি ইমাম সাহেবের সাথেই সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করে ফেললেন। ছুটে যাওয়া রাকাতটি ওই মুসল্লী আদায় করেননি। তো এই যে মুসল্লী এক রাকাত নামাজ আদায় না করেই ইমাম সাহেবের সাথে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করে ফেললেন; তার ব্যাপারে আমাদের মন্দ ধারণা করা ঠিক হবে না। বরং তার প্রতি সুধারণা রাখতে হবে। আমরা এমনটি ভাববো যে, তিনি প্রতিদিন তাকবীরে উলার সাথে নামাজ আদায়ে অভ্যস্ত ছিলেন এবং কখনো তার জামাতের সাথে, ইমামের পিছনে, তাকবীরে উলা ছুটেনি। তাই সবসময়ের অভ্যাস অনুযায়ী উনি ইমামের সাথেই সালাম ফিরিয়ে নামজ শেষ করে ফেলেছেন।

এভাবে মন্দ ধারণা থেকে নিজেদেরকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে এবং মুমিনের প্রতি সুধারণা রাখতে হবে। দৈনন্দিন আমাদের আচরণে এবং উচ্চারণে এই অভ্যাস ফুটিয়ে তুলতে হবে। সুধারণা রাখার অনুশীলন করতে হবে।

আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে মুমিনের প্রতি সুধারণা রাখার এবং মন্দ ধারণা থেকে বিরত থাকার তৌফিক দান করুন। আমীন।

১টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধফিলিস্তিনের জিহাদ || আপডেট – ২৮ মে, ২০২৪
পরবর্তী নিবন্ধইমারতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানে সামরিক প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করল আরও ১২৬ জন সদস্য