বৈশ্বিক ইসলামি প্রতিরোধ বাহিনী আল-কায়েদার পূর্ব আফ্রিকা শাখা হারাকাতুশ শাবাব আল-মুজাহিদিন। দলটি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সোমালিয়ার পাশাপাশি প্রতিবেশি কেনিয়াতে হামলা জোরদার করেছে, নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে দু’টি দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের বিস্তৃর্ণ ভূমি। এতে কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে এই অঞ্চলের ইসলাম বিরোধী সরকারগুলোর।
গত মে মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে এমন উদ্বেগের কথাই জানিয়েছে কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম রুটো। তখন রুটো শাবাবের অগ্রগতি রুখতে এই অঞ্চলে দখলদার শক্তির উপস্থিতি বাড়ানো এবং মার্কিন বাহিনীর হস্তক্ষেপের জোর আবেদন জানিয়েছিল।
রুটোর এই সফরকালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কেনিয়াকে ন্যাটোর অঘোষিত গুরত্বপূর্ণ মিত্র বলে ঘোষণা করেছে। সেই সাথে সামরিকভাবে দেশটিকে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে।
আর তারই ধারাবাহিকতায়, দক্ষিণ সোমালিয়ার সাথে লাগোয়া কেনিয়ার সীমান্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি সামরিক বিমান ঘাঁটির নির্মাণ কাজ দ্রুত গতিতে শুরু করেছে। ঘাঁটিটি মুসলিম ঘনবসতিপূর্ণ কেনিয়ার ওয়াজির রাজ্যে নির্মাণ করা হচ্ছে, যেই রাজ্যের ৪০ শতাংশ এলাকাই হারাকাতুশ শাবাবের নিয়ন্ত্রণাধীন। নতুন নির্মিত মার্কিন ঘাঁটিটি প্রতিরোধ বাহিনী হারাকাতুশ শাবাবের বিরুদ্ধে বিমান ও ড্রোন হামলায় ব্যবহার করা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রমতে, সামরিক এই বেজটির নির্মাণ কাজ ২০২২ সালের গ্রীষ্মের প্রথমদিকে শুরু করা হয়েছিল। বর্তমানে নতুন এই মিলিটারি এয়ারবেজটির নির্মাণ কাজ অনেকাংশে সম্পন্ন হয়েছে। স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা যায়, শাবাবের ইস্তেশহাদী হামলা থেকে ঘাঁটিটি রক্ষার উদ্দেশ্যে বেজের চারপাশে পরিখা খনন করা হয়েছে। নিরাপত্তা জোরদার করতে ঘাঁটির চতুর্পাশে দুই স্তরের দেয়াল নির্মাণ করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রগুলির তথ্য অনুযায়ী, এই অঞ্চলে পাওয়া যায় না এমন নির্মাণ সামগ্রী এখানে বিমানের মাধ্যমে পরিবহন করা হচ্ছে। এই লক্ষ্যে কেনিয়া প্রশাসনও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে একটি বিশাল এলাকা (৫০ একর জমি) বরাদ্দ দিয়েছে। এদিকে পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোতে একের পর এক অভ্যুত্থানের কারণে অনেক দেশ থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এখন নিজেদের হারানো সেই আধিপত্য বিস্তারে পূর্ব আফ্রিকায় একটি স্থায়ী ঘাঁটি তৈরি করতে চায় পশ্চিমা এই দেশটি।
স্থানীয় সূত্রমতে, প্রথম পর্যায়ে বিমান ঘাঁটিটি মূলত সোমালিয়া, কেনিয়া এবং ইথিওপিয়ায় আশ-শাবাবের বিরুদ্ধে ড্রোন হামলার কেন্দ্র হিসাবে ব্যবহার করা হবে। আর যদি আশ-শাবাব তাদের শক্তি বৃদ্ধি করতে থাকে এবং সোমালিয়ায় আবারও ইসলামি শরিয়াহ্ শাসন ফিরিয়ে আনে, তাহলে সোমালিয়ার নিকটবর্তী এই সামরিক ঘাঁটি আশ-শাবাবের বিরুদ্ধে সব ধরনের হামলার কেন্দ্রে পরিণত হবে।