মানব সমাজে খাঁটি মুমিনদের পাশাপাশি আরো বহু শ্রেণীর মানুষ বাস করে। যারা মুসলিম সমাজে বসবাস করলেও মুমিনদের প্রতি তাদের রয়েছে চরম ঘৃণা। তাই বিদ্বেষের কারণে মুমিনদের ব্যাপারে অনেক মিথ্যাচার করে থাকে। মন্দ বিষয় প্রচার করে। যেন মুমিনদেরকে অপমানিত করা যায়। তাই কোন মুমিনের ব্যাপারে মন্দ বিষয় প্রচার হলে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে।
এ বিষয়ে উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রাযি: এর জীবনে ঘটে যাওয়া ইফকের ঘটনা থেকে উত্তম শিক্ষা পাওয়া যায়। যা ছিল মুনাফিকদের পক্ষ থেকে জিনার অপবাদমূলক মিথ্যাচার। যা সিরাতের কিতাবে ইফকের ঘটনা নামে পরিচিত।
ইফকের ঘটনা
ঘটনাটি ঘটে পঞ্চম হিজরীর শাবান মাসে। বনু মুসতালিকের যুদ্ধে। এ যুদ্ধে আগে থেকেই বুঝা যাচ্ছিলো যে, তেমন কোন রক্তপাত ঘটবে না। মুসলিমরা বিনা প্রতিদ্বন্দীতায় জিতবে। তাই মদিনার বিপুল সংখ্যক মুনাফিকরা এ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলো। ইবনে সা’দ বর্ণনা করেন- “এই অভিযানে অসংখ্য মুনাফিক অংশগ্রহণ করে যা অন্য কোনো অভিযানে আগে দেখা যায়নি।”
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোনো সফরে বের হতেন, তখন স্ত্রী নির্বাচনের জন্য লটারী করতেন। বনু মুসতালিকের যুদ্ধে অভিযানে সফরসঙ্গী হিসেবে লটারীতে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা-এর নাম আসে। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা যাত্রাকালে প্রিয় ভগ্নী আসমা রাদিয়াল্লাহু আনহা-এর একটি হার ধার নেন। হারটির আংটা এতো দুর্বল ছিলো যে বারবার খুলে যাচ্ছিলো। সফরে আয়েশারাদিয়াল্লাহু আনহা নিজ হাওদাতে আরোহণ করতেন। এরপর হাওদার দায়িত্বে থাকা সাহাবিগণ হাউদা উঠের পিঠে উঠাতেন। তখন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা-এর বয়স ছিল কেবল চৌদ্দ বছর। তিনি এতো হালকা গড়নের ছিলেন যে, হাউদা-বাহক সাহাবিগণ সাধারণত বুঝতে পারতেন না যে, ভিতরে কেউ আছে কি নেই!
সফরকালে রাতের বেলায় এক অপরিচিত জায়গায় যাত্রা বিরতি হয়। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে দূরে চলে গেলেন। ফেরার সময় হঠাৎ গলায় হাত দিয়ে দেখলেন ধার করা হারটি নেই। তিনি প্রচণ্ড ঘাবড়ে গেলেন। প্রথমত, তার বয়স ছিল কম আর তার উপরে হারটি ছিল ধার করা। হতভম্ব হয়ে তিনি হারটি খুঁজতে লাগলেন। তিনি ভেবেছিলেন যাত্রা আবার শুরু হবার আগেই তিনি হারটি খুঁজে পাবেন, আর সময়মতো হাওদাতে পৌঁছে যাবেন। তাই তিনি হার হারিয়ে যাওয়ার কথা কাউকে জানান নাই। এমনকি উনার জন্য অপেক্ষা করার কথাও বলেন নাই।
খুঁজতে খুঁজতে কিছুক্ষণ পর তিনি হারটি পেয়ে গেলেন । কিন্তু ততক্ষণে কাফেলা রওনা হয়ে গেছে। তারা ভেবেছিলেন, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হাওদার মধ্যেই রয়েছেন। এদিকে আয়েশারাদিয়াল্লাহু আনহা কাফেলার স্থানে এসে কাউকে পেলেন না। তিনি চাদর মুড়ি দিয়ে সেখানেই শুয়ে রইলেন। ভাবলেন, যখন কাফেলা বুঝতে পারবে তখন আবার এখানে ফিরে আসবে।
সে সফরে সাকাহ হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন সফওয়ান রাদিয়াল্লাহু আনহু। সাকাহ বলতে কাফেলার রক্ষণাবেক্ষণকারীদের বুঝানো হয়। তাদের কাজ ছিলো কাফেলাকে কিছু দূর থেকে অনুসরণ করা। কেউ পিছিয়ে পড়লে কিংবা কোনো কিছু হারিয়ে গেলে তা কাফেলাকে পৌঁছে দেয়া। সফওয়ান রাদিয়াল্লাহু আনহু ছিলেন খুব বড়ো মাপের সাহাবী। তিনি পথ চলতে চলতে অস্পষ্ট অবয়ব দেখতে পেয়ে সামনে এগিয়ে গেলেন। আর চাদর মুড়ি দেয়া অবস্থাতেও আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা-কে চিনতে পারলেন। কারণ, পর্দার বিধান নাযিল হবার পূর্বে তিনি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা-কে দেখেছিলেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা তখন ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। তাকে সজাগ করার জন্য সফওয়ান রাদিয়াল্লাহু আনহু জোরে- “ইন্না-লিল্লাহ” বলে আওয়াজ দিলেন। বললেন, “এ যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিণী! আল্লাহ আপনার উপরে রহম করুন! কি করে আপনি পিছনে রয়ে গেলেন?”
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা কোনো কথার জবাব দিলেন না। সফওয়ান রাদিয়াল্লাহু আনহু একটি উট এনে তাতে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা-কে আরোহণ করতে বললেন এবং নিজে দূরে সরে দাঁড়ালেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা উটের পিঠে আরোহণ করলে তিনি উটের লাগাম ধরে সামনে পথ চলতে থাকেন। অনেক চেষ্টা করেও ভোরের আগে তারা কাফেলাকে ধরতে পারলেন না।
ঘটনাটি এতোটুকুই। এবং যে কোনো সফরে এমনটা ঘটা একদম স্বাভাবিক। কিন্তু যাদের হৃদয়ে বক্রতা আছে তারা ঘটনাটিকে লুফে নিলো। কুৎসা রটাতে লাগলো। তবে যাদের হৃদয় পবিত্র তারা এসব শোনামাত্রই কানে আঙ্গুল দিয়ে বলতেনঃ আল্লাহ মহাপবিত্র! এটা সুস্পষ্ট অপবাদ ছাড়া কিছুই না।
এ ঘটনা সব জায়গায় ছড়ানোর মূল হোতা ছিলো আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই। মুনাফিকদের সর্দার। ঘটনাক্রমে আরো তিনজন সম্মানিত সাহাবী এই কুচক্রে জড়িয়ে পড়েন। হাসসান ইবনে সাবিত রাদিয়াল্লাহু আনহু, হামনা বিনতে জাহশ রাদিয়াল্লাহু আনহা আর মিসতাহ ইবনে আসাসাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু।
এদিকে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা মদিনা পৌঁছানোর পর ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাই তিনি ঘটনাটি সম্পর্কে কিছুই জানতেন না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আর আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে কিছুই জানালেন না। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মধ্যে খুবই উষ্ণ সম্পর্ক ছিলো সবসময়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা-কে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতেন। এক সাথে দৌড় খেলতেন, ইচ্ছা করে হেরে যেতেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা পাত্রের যে দিক দিয়ে পান করতেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেদিক দিয়ে পানি পান করতেন।
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা অসুস্থ হলে তিনি দয়া আর কোমলতা প্রদর্শন করতেন। কিন্তু এবারের অসুস্থতায় আগের মতো কোমলতা প্রদর্শন করলেন না। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা লক্ষ্য করলেন রাসূলসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আর আগের মতো তার সাথে প্রাণ খুলে কথা বলেন না।
পুরো ব্যাপারটায় তিনি খুব কষ্ট পেলেন। তাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুমতি নিয়ে পিতৃগৃহে চলে গেলেন। তখনো তিনি আসল ঘটনাটি জানতেন না। পরবর্তীতে, একদিন রাতের বেলা প্রাকৃতিক প্রয়োজনে বাইরে বের হলে মিসতাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর মা তাকে পুরো ঘটনাটি জানান। নিজের ছেলেকে মা হয়ে অভিশাপ দেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা-এর কাছে তখন সবকিছু পরিষ্কার হয়ে গেলো। তার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। তিনি রাত-দিন অবিরত কাঁদতে থাকলেন।
এদিকে তার বিরুদ্ধে অপবাদকারীরা আরো জোরে শোরে তাদের কুৎসা রটাতে থাকে। প্রায় ১ মাস হয়ে যায়। কোনো মীমাংসা হয় না। মুনাফিক আর গুটিকয়েক ব্যক্তি ছাড়া সবাই বিশ্বাস করতো আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা নির্দোষ ছিলেন। তারপরেও স্বচ্ছতার স্বার্থে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘটনার তদন্ত করলেন। তিনি উসামা রাদিয়াল্লাহু আনহু আর আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর সাথে পরামর্শ করলেন। উসামা রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, “হে আল্লাহর রাসূল! আপনার পরিবার সম্পর্কে আমরা ভালো ভিন্ন আর কিছুই জানি না।” আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু ঘটনার আরো সুষ্ঠু তদন্তের জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ঘরের দাসীদের জিজ্ঞেস করতে বললেন। দাসীকে জিজ্ঞেস করা হলে সে বললো, “তার মধ্যে আমি দোষের কিছুই দেখি না। কেবল এতোটুকুই যে, তিনি আটার খামিরা করা অবস্থায় ঘুমিয়ে পড়েন, আর বকরী এসে সব সাবাড় করে যায়।” এ কথার মাধ্যমে তিনি আয়েশা রা: এর সরলতাকেই বুঝিয়েছেন।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরপর আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর গৃহে আগমন করেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা-কে উদ্দেশ্য করে বললেন, “হে আয়েশা! লোকেরা কি বলাবলি করছে তা তো তোমার জানা হয়ে গেছে। তুমি আল্লাহকে ভয় করো। আর লোকেরা যেসব বলাবলি করছে তাতে লিপ্ত হয়ে থাকলে তুমি আল্লাহর নিকট তওবা করো। আল্লাহ তো বান্দার তওবা কবুল করে থাকেন।”
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা সে কষ্টের অভিজ্ঞতার কথা সম্পর্কে বলেন, “আল্লাহর কসম! তিনি আমাকে লক্ষ্য করে একথাগুলো বলার পর আমার চোখের অশ্রু সম্পূর্ণ শুকিয়ে যায়। আমার সম্পর্কে কুরআন নাযিল হবে! আমার নিজেকে নিজের কাছে তার চাইতে তুচ্ছ মনে হয়েছে। তখন আমি বললামঃ আমার সম্পর্কে যেসব কথা বলা হচ্ছে সে ব্যাপারে আমি কখনোই তওবা করবো না। আমি যদি তা স্বীকার করি- তবে আল্লাহ জানেন যে আমি নির্দোষ- আর যা ঘটেনি তা স্বীকার করা হয়ে যাবে। আমি ইয়াকুব আলাইহিস সালাম-এর নাম স্মরণ করতে চাইলাম। কিন্তু মনে করতে পারলাম না। তাই আমি বললাম- ইউসুফ আলাইহিস সালাম এর পিতা যা বলেছিলেন, তেমন কথাই আমি উচ্চারণ করবোঃ
فَصَبْرٌ جَمِيلٌ ۖ وَاللَّهُ الْمُسْتَعَانُ عَلَىٰ مَا تَصِفُونَ ﴿١٨﴾
সুতরাং এখন ছবর করাই শ্রেয়। তোমরা যা বর্ণনা করছ, সে বিষয়ে একমাত্র আল্লাহই আমার সাহায্য স্থল। (সূরা ইউসুফঃ১৮)
এক পর্যায়ে আল্লাহর পক্ষ থেকে ওহী নাযিল হলো আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা পবিত্রতা সম্পর্কে । সূরা নূরের ১১ থেকে ১৬ নং আয়াতে এই ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
إِنَّ ٱلَّذِينَ جَآءُو بِٱلْإِفْكِ عُصْبَةٌۭ مِّنكُمْ ۚ لَا تَحْسَبُوهُ شَرًّۭا لَّكُم ۖ بَلْ هُوَ خَيْرٌۭ لَّكُمْ ۚ لِكُلِّ ٱمْرِئٍۢ مِّنْهُم مَّا ٱكْتَسَبَ مِنَ ٱلْإِثْمِ ۚ وَٱلَّذِى تَوَلَّىٰ كِبْرَهُۥ مِنْهُمْ لَهُۥ عَذَابٌ عَظِيمٌۭ ١١ لَّوْلَآ إِذْ سَمِعْتُمُوهُ ظَنَّ ٱلْمُؤْمِنُونَ وَٱلْمُؤْمِنَـٰتُ بِأَنفُسِهِمْ خَيْرًۭا وَقَالُوا۟ هَـٰذَآ إِفْكٌۭ مُّبِينٌۭ ١٢ لَّوْلَا جَآءُو عَلَيْهِ بِأَرْبَعَةِ شُهَدَآءَ ۚ فَإِذْ لَمْ يَأْتُوا۟ بِٱلشُّهَدَآءِ فَأُو۟لَـٰٓئِكَ عِندَ ٱللَّهِ هُمُ ٱلْكَـٰذِبُونَ ١٣ وَلَوْلَا فَضْلُ ٱللَّهِ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَتُهُۥ فِى ٱلدُّنْيَا وَٱلْـَٔاخِرَةِ لَمَسَّكُمْ فِى مَآ أَفَضْتُمْ فِيهِ عَذَابٌ عَظِيمٌ ١٤ إِذْ تَلَقَّوْنَهُۥ بِأَلْسِنَتِكُمْ وَتَقُولُونَ بِأَفْوَاهِكُم مَّا لَيْسَ لَكُم بِهِۦ عِلْمٌۭ وَتَحْسَبُونَهُۥ هَيِّنًۭا وَهُوَ عِندَ ٱللَّهِ عَظِيمٌۭ ١٥ وَلَوْلَآ إِذْ سَمِعْتُمُوهُ قُلْتُم مَّا يَكُونُ لَنَآ أَن نَّتَكَلَّمَ بِهَـٰذَا سُبْحَـٰنَكَ هَـٰذَا بُهْتَـٰنٌ عَظِيمٌۭ ١٦
’যারা মিথ্যা অপবাদ রটনা করেছে, তারা তোমাদেরই একটি দল। তোমরা একে নিজেদের জন্যে খারাপ মনে করো না; বরং এটা তোমাদের জন্যে মঙ্গলজনক। তাদের প্রত্যেকের জন্যে ততটুকু আছে যতটুকু সে গোনাহ করেছে এবং তাদের মধ্যে যে এ ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে, তার জন্যে রয়েছে বিরাট শাস্তি। (১১) তোমরা যখন একথা শুনলে, তখন ঈমানদার পুরুষ ও নারীগণ কেন নিজেদের লোক সম্পর্কে উত্তম ধারণা করনি এবং বলনি যে, এটা তো নির্জলা অপবাদ? (১২) তারা কেন এ ব্যাপারে চার জন সাক্ষী উপস্থিত করেনি; অতঃপর যখন তারা সাক্ষী উপস্থিত করেনি, তখন তারাই আল্লাহর কাছে মিথ্যাবাদী। (১৩) যদি ইহকালে ও পরকালে তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া না থাকত, তবে তোমরা যা চর্চা করছিলে, তজ্জন্যে তোমাদেরকে গুরুতর আযাব স্পর্শ করত। (১৪) যখন তোমরা একে মুখে মুখে ছড়াচ্ছিলে এবং মুখে এমন বিষয় উচ্চারণ করছিলে, যার কোন জ্ঞান তোমাদের ছিল না। তোমরা একে তুচ্ছ মনে করছিলে, অথচ এটা আল্লাহর কাছে গুরুতর ব্যাপার ছিল। (১৫) তোমরা যখন এ কথা শুনলে তখন কেন বললে না যে, এ বিষয়ে কথা বলা আমাদের উচিত নয়। আল্লাহ তো পবিত্র, মহান। এটা তো এক গুরুতর অপবাদ। (১৬)’ (সূরা নূরঃ ১১,১৬)
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর আমার বিষয়ে ওহী নাযিল হওয়ার পর তিনি হাসিমুখে প্রথমে যে কথাটি বললেন, তা হল, হে আয়েশা ! আল্লাহ তোমার পবিত্রতা জাহির করে দিয়েছেন।
এ ঘটনা থেকে যে শিক্ষাগুলো পাওয়া যায় তা হলো,
১। মুসলিমদের প্রতি সর্বাবস্থায় ভাল ধারণা করা। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা-এর উপর যখন অপবাদ আরোপ করা হ’ল, তখন মুমিনদের উচিৎ ছিল মুনাফিকদের খপ্পরে না পড়ে উক্ত অপবাদ শ্রবণের প্রথম ধাপেই তাঁদের উপর সুধারণা পোষণ করা। আল্লাহ বলেন,
لَوْلَا إِذْ سَمِعْتُمُوهُ ظَنَّ الْمُؤْمِنُونَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بِأَنْفُسِهِمْ خَيْرًا وَقَالُوا هَذَا إِفْكٌ مُبِينٌ
‘যখন তোমরা একথা শুনলে তখন মুমিন পুরুষ ও মুমিনা নারীগণ নিজেদের বিষয়ে কেন ভাল ধারণা করনি এবং বলনি এটা সুস্পষ্ট অপবাদ?’ (সূরা নূর ২৪/১২)।
وَلَوْلَا إِذْ سَمِعْتُمُوهُ قُلْتُمْ مَا يَكُونُ لَنَا أَنْ نَتَكَلَّمَ بِهَٰذَا سُبْحَانَكَ هَٰذَا بُهْتَانٌ عَظِيمٌ
তোমরা যখন এ কথা শুনলে তখন কেন বললে না যে, এ বিষয়ে কথা বলা আমাদের উচিত নয়। আল্লাহ তো পবিত্র, মহান। এটা তো এক গুরুতর অপবাদ। (সূরা নূর ২৪/১৫)।
২। মন্দ বিষয় বলার কুফল সম্পর্কে সর্বদা সজাগ থাকা, এটাকে হালকা মনে না করা।
إِذْ تَلَقَّوْنَهُ بِأَلْسِنَتِكُمْ وَتَقُولُونَ بِأَفْوَاهِكُمْ مَا لَيْسَ لَكُمْ بِهِ عِلْمٌ وَتَحْسَبُونَهُ هَيِّنًا وَهُوَ عِنْدَ اللَّهِ عَظِيمٌ
যখন তোমরা একে মুখে মুখে ছড়াচ্ছিলে এবং মুখে এমন বিষয় উচ্চারণ করছিলে, যার কোন জ্ঞান তোমাদের ছিল না। তোমরা একে তুচ্ছ মনে করছিলে, অথচ এটা আল্লাহর কাছে গুরুতর ব্যাপার ছিল। (নূর ২৪/১৪)।
৩। ঘটনার বিষয়ে অভিজ্ঞ লোকদের দিয়ে তদন্ত করা। ইফকের ঘটনায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তদন্ত করেছেন। তিনি উসামা রাদিয়াল্লাহু আনহু আর আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর সাথে পরামর্শ করেছেন। ঘরের খাদেমাকে জিজ্ঞেস করেছেন। রাসূল সা:এর স্ত্রী যায়নাব রাযি.জিজ্ঞেস করেছেন। কারণ তারা আয়েশা রাযি: এর ব্যাপারে খুব ভাল জানতেন।
৪। যার ব্যাপারে মন্দ বিষয় প্রচার হয়েছে, প্রমাণিত হওয়ার আগেই সম্পর্ক বিচ্ছেদ না করা। তবে আচরণে কিছুটা পরিবর্তন আনা। উত্তম নসিহা করা। অপরাধ করে থাকলে আল্লাহ তায়ালার কাছে তওবা করতে বলা।
আল্লাহতালা আমাদেরকে মন্দ ধারণার খারাপ প্রভাব থেকে রক্ষা করুন এবং মন্দ বিষয় প্রচার করা থেকে হেফাজত করুন। আমীন।