![cocacola-advertisement](https://alfirdaws.org/wp-content/uploads/2024/06/cocacola-advertisement-696x392.jpg)
বহু দশক ধরে জায়োনিস্ট ইসরায়েলের পৃষ্ঠপোষক একটি পানীয় কোম্পানি কোকা-কোলা। সম্প্রতি ফিলিস্তিনি মুসলিমদের উপর জায়োনিস্ট ইসরায়েলের গণহত্যার পর আমেরিকান এই কোম্পানিকে বিশ্বব্যাপী বয়কটের ডাক ওঠে। বাংলাদেশের মুসলিমরাও নিজেদের দায়িত্ববোধের অংশ হিসেবে এই কোম্পানিকে বয়কট করেন। সম্প্রতি কোকা-কোলার বাংলাদেশ শাখা একটি বিজ্ঞাপন প্রচার করে। সেই বিজ্ঞাপনকে ঘিরে এবার বাংলাদেশে কোকা-কোলা বয়কটের ডাক আরও তীব্রতা লাভ করেছে।
কী ছিল সেই বিজ্ঞাপনে?
বিজ্ঞাপনে দেখানো হয়—কোককে সবাই যে দেশের পণ্য মনে করছে, আসলে সেই দেশের পণ্য নয় কোকাকোলা। মানুষ সঠিক তথ্য না জেনেই কোকাকোলা বয়কটের ডাক দিয়েছে। এমনকি ফিলিস্তিনে কোকাকোলার ফ্যাক্টরি রয়েছে! তাই গুগলে সার্চ দিয়ে নিশ্চিত হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে বিজ্ঞাপনটিতে।
জনগণের প্রতিক্রিয়া
কোকাকোলার বিজ্ঞাপনে বাংলাদেশের মানুষকে তাচ্ছিল্য করাসহ আরও যেসব দাবি করা হয়েছে, তার খণ্ডন করেছেন বাংলাদেশের সচেতন জনগণ। কোকাকোলার বিজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের মানুষ কোকা-কোলাকে ইসরায়েলি পণ্য গণ্য করে এটিকে বয়কট করছে। আসলে কোকাকোলা ইসরায়েলি পণ্য নয়। কিন্তু বয়কটকারীগণ বলছেন, তারা কোকাকোলা বয়কট করছেন এটিকে ইসরায়েলি পণ্য বলে নয়, বরং কোকাকোলা ফিলিস্তিনিদের উপর চালানো আগ্রাসনে ইসরায়েলের পৃষ্ঠপোষক এই কারণে। কোকাকোলা যে দেশেরই হোক না কেন তাদেরকে বয়কট করছেন জনগণ।
ফিলিস্তিনে কোকাকোলার ফ্যাক্টরি রয়েছে বলে ঐ বিজ্ঞাপনে যে বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়েছে, সেটির জবাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জনগণ বলছেন, মূলত ইসরায়েলের দখল করা ভূমিতে ফ্যাক্টরি বানিয়েছে কোকাকোলা। এ কারণে ১৯৬৭ থেকে ১৯৯১ পর্যন্ত আরব লীগ আনুষ্ঠানিকভাবে কোকাকোলা বয়কট করেছিল। এমনকি ইসরায়েলি দখলদারিত্ব ও অবৈধ স্থাপনা থেকে মুনাফা করার কারণে কোকাকোলা-কে কালো তালিকাভুক্ত করেছিলো খোদ জাতিসংঘ।
এছাড়া, কোকাকোলার সবচেয়ে বড় শেয়ারহোল্ডার ওয়ারেন বাফেট। পৃথিবীর সবচেয়ে প্রভাবশালী জায়োনিস্টদের অন্যতম। নিজের বিপুল অর্থ ব্যবহার করে সে নানাভাবে ইসরায়েলকে সমর্থন দিয়ে আসছে। ১৯৬৬ সাল থেকে টানা কয়েক দশক অর্থনৈতিকভাবে ইসরায়েলকে সমর্থন যুগিয়ে আসার কারণে ১৯৯৭ সালে জায়োনিস্ট সরকার এর ইকোনমিক মিশন কোকাকোলা-কে সম্মাননা প্রদান করে। আমেরিকান-ইসরায়েলি চেম্বার অফ কমার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠান, ইসরায়েলি অর্থনীতিতে সর্বাধিক অবদান রাখা কোম্পানিগুলিকে সম্মানিত ও পুরস্কৃত করে। এসব পুরস্কারের অর্থায়নও করে কোকাকোলা।
সর্বোপরি, কোকাকোলা অর্থনৈতিকভাবে ইসরায়েলকে সহায়তা করে আসছে, অ্যাইপ্যাকের পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে রাজনৈতিকভাবে জায়োনিস্টদেরকে শক্তিশালী করছে, এবং ফিলিস্তিনের উপর ইসরায়েলি সামরিক আগ্রাসনকে পুরস্কৃত করছে। তাই কোকাকোলা যে-দেশী পানীয়ই হোক না কেন, এটিকে বয়কট করা জরুরি বলে মনে করেন দেশের জনগণ। সেজন্য দেশজুড়ে ব্যাপক বয়কটের মুখে এ বছর দেশে কোকাকোলার বিক্রি ৬০% কমে গেছে বলে জানা গেছে।
বিজ্ঞাপনের নেপথ্যে কারা?
কোকাকোলার বিজ্ঞাপনটিতে মডেল হিসেবে অভিনয় করেছে শরাফ আহমেদ জীবন, শিমুল শর্মা, আব্দুল্লাহ আল সেন্টুসহ আরও কয়েকজন। তবে খোঁজ নিয়ে যুগান্তর জানিয়েছে, অভিনয়ের পাশাপাশি বিজ্ঞাপনটি নির্মাণের পেছনেও রয়েছে শরাফ আহমেদ জীবন। এই অভিনেতারা বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষকে কটাক্ষ করেছে বলে অভিযোগ সাধারণ মানুষের। তাছাড়া, তারা বাংলাদেশের মুসলিম সমাজে অশ্লীলতা-পাপাচারের বিস্তার ঘটাতেও বিভিন্ন ধরনের অভিনয় কাজের সাথে জড়িত।
গাজা এবং দখলীকৃত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি মুসলিমদের উপর এক নজীরবিহীন গণহত্যা চালাচ্ছে জায়োনিস্ট ইসরায়েল। আল-জাজিরার তথ্যমতে, জায়োনিস্ট হামলায় এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন অন্তত ৩৭,২৩২ জন ফিলিস্তিনি। ফিলিস্তিনি মুসলিমদের উপর সন্ত্রাসবাদী ইসরায়েলের এমন গণহত্যার বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী মুসলিম এবং সচেতন অমুসলিমরাও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। কিন্তু কোকাকোলার মতো কিছু কোম্পানি বিভিন্নভাবে জায়োনিস্টদের পক্ষপাতিত্ব করে আসছে। তাই এসব প্রতিষ্ঠানকে বয়কট করে ফিলিস্তিনিদের প্রতি নিজেদের সংহতির জানান দিচ্ছেন মুসলিমরা।
তথ্যসূত্র:
১. বয়কট কোকাকোলা
– https://tinyurl.com/mrt98tfy
২. কোকাকোলা কি আসলেই “ওই জায়গার” ?
– https://tinyurl.com/4e59d7h6