বিশ্বজুড়ে তরতরিয়ে বাড়ছে ধনকুবেরদের সম্পদ। শুধু ২০২৪ সালেই তাদের সম্পদের মোট পরিমাণ বেড়েছে দুই লাখ কোটি মার্কিন ডলার। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ৫৭০ কোটি ডলার করে। শুধু বিলিয়নিয়ার বা শতকোটিপতিদের সম্পদের পরিমাণ আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে তিন গুণ দ্রুত হারে। সংখ্যাও বেড়েছে শতকোটিপতিদের।
২০ জানুয়ারি, সোমবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য দিয়েছে অক্সফাম। মাত্রাতিরিক্ত সম্পদের মালিক এসব ধনীরা কোথা থেকে এত সম্পদ পেয়েছে বা পাচ্ছে, তারও ব্যাখ্যা দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
বলা হয়েছে, এসব ধনী, বিশেষ করে ইউরোপের ধনীদের একটি বড় অংশ এই সম্পদ পেয়েছেন পরিবার থেকে, উত্তরাধিকার সূত্রে। আর তাদের সেই সম্পদের একটি অংশ এসেছে উপনিবেশিক আমলে। সেসময় আফ্রিকা, ভারতীয় উপমহাদেশ এবং দক্ষিণের দেশগুলো থেকে শোষণের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ সম্পদ চলে আসে পশ্চিমা দেশগুলোর ধনীদের হতে।
আজও একইভাবে চলছে সম্পদের সেই শোষণ, বিশ্লেষণ অক্সফামের।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২০২৩ সালে বিশ্বে শত কোটিপতি ছিলেন ২ হাজার ৫৬৫ জন। গত বছর বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ৭৬৯ জন। অর্থাৎ গত বছর প্রতি সপ্তাহে প্রায় চারজন করে যুক্ত হয়েছেন শত কোটিপতিদের দলে। আর গত এক বছরে শত কোটিপতিদের মোট সম্পদ ১৩ লাখ কোটি ডলার থেকে বেড়ে ১৫ লাখ কোটি ডলার হয়েছে।
ফ্রান্সের ‘মিডিয়া মোগল’ ভিনসেন্ট বোলোরের উদাহরণ দিয়ে অক্সফাম দেখিয়েছে, তার সম্পদের বড় একটি অংশ এসেছে উপনিবেশিক আমলে আফ্রিকায় তার নানার কোম্পানির আয় থেকে।
আজও শোষণের মাধ্যমেই পৃথিবীর দক্ষিণাঞ্চলের দেশগুলো থেকে বিশাল অঙ্কের অর্থ এখনও পৃথিবীর পশ্চিম ও উত্তরের দেশে তাদের কিছু নাগরিকদের হাতে চলে যাচ্ছে।
অক্সফাম একে আধুনিক সময়ের ‘উপনিবেশবাদ’ বলে বর্ণনা করেছে। তাদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, আধুনিক উপনিবেশবাদে এ শোষণ চলে নিয়ন্ত্রিত আর্থিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে।
অক্সফাম হিসেব করেছে, এই আর্থিক ব্যবস্থার মাধ্যমেই ২০২৩ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের মতো উত্তরের দেশগুলোর ১ শতাংশ ধনী দক্ষিণের দেশগুলো থেকে প্রতি ঘণ্টায় তিন কোটি মার্কিন ডলার নিয়ে যাচ্ছে।
বিশ্বের মোট সম্পদের ৬৯ শতাংশের নিয়ন্ত্রণ এই উত্তরের দেশগুলোর হাতে। বিশ্বে যতো শত কোটিপতি আছেন, তাদের ৬৮ শতাংশই সেখানকার। বিশ্বের মোট সম্পদের ৭৭ শতাংশই তাদের হাতে। অথচ বিশ্বের মোট জনসংখ্যার মাত্র ২১ শতাংশের বসবাস এই দেশগুলোতে।
অক্সফাম তাদের ‘টেকার্স নট মেকার্স’ শিরোনামে এই প্রতিবেদনে উপনিবেশিক আমলে ধনী দেশগুলো কীভাবে তাদের উপনিবেশ থেকে সম্পদ শোষণ করেছে, তার উদাহরণও দিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যের ১০ শতাংশ ধনকুবের উপনিবেশিক আমলে তাদের সম্পদের অর্ধেক পেয়েছেন ভারত থেকে। এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে ভারত ব্রিটিশ উপনিবেশ ছিল। সেই সময়ে ব্রিটিশরা ৬৪ লাখ ৮২ হাজার কোটি ডলার মূল্যের সম্পদ ভারত থেকে নিজেদের দেশে নিয়ে যায়।
ওই সম্পদের মধ্যে ৩৩ লাখ ৮ হাজার কোটি ডলার অর্থ গেছে যুক্তরাজ্যের ওই ১০ শতাংশ ধনীর হাতে। এই অর্থ যদি ৫০ পাউন্ডে ভাঙানো হয়, তবে সেই নোট দিয়ে পুরো লন্ডন প্রায় চারবার ঢেকে ফেলা যাবে।
পৃথিবী শত কোটিপতি দেখলেও এখনও লাখ কোটিপতি পায়নি। তবে সেদিন আর বেশি দূরে নয়, যখন একজন মানুষের সম্পদ বেড়ে লাখ কোটিপতির ঘর ছুঁয়ে ফেলবে। অক্সফামের প্রতিবেদনে সে পূর্বাভাসই দেয়া হয়েছে।
অক্সফামের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী এক দশকে বিশ্ব অন্তত পাঁচজন লাখো কোটি ডলারের মালিককে দেখতে পাবে। ২০২৩ সালে সংস্থাটি আগামী এক দশকে একজন লাখ কোটিপতি দেখতে পাওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছিল।
তথ্যসূত্র:
1. Takers not Makers: The unjust poverty and unearned wealth from colonialism
– https://tinyurl.com/2syeczts
2. Takers Not Makers: The unjust poverty and unearned wealth of colonialism
– https://tinyurl.com/4nb74u27