রাষ্ট্রীয় জমি পুনরুদ্ধার ও নিবন্ধন: আফগানিস্তানের টেকসই উন্নয়নে তালিবান সরকারের পদক্ষেপ

0
57

আফগানিস্তানে সরকারিভাবে ভূমি নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল ১৯৬০ এর দশকে। সেই সময় এক দশকের মধ্যে প্রায় ৩৪ শতাংশ কৃষিজমি জরিপ ও নথিভুক্ত হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, সংঘাত ও নিরাপত্তাহীনতার দরুন উদ্যোগটির বাস্তবায়ন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়, ফলে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন জমি নিবন্ধন ও ব্যবস্থাপনায় ধীরে ধীরে অবহেলা দেখা দেয়।

রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ভূমি ব্যবস্থাপনা কার্যকরভাবে তদারকি করতে আফগানিস্তানের পূর্ববর্তী প্রশাসনগুলো ব্যর্থ হয়েছিল। ফলে দুটি প্রধান সমস্যার জন্ম হয়েছে।

* প্রথমত, দেশের স্বার্থান্বেষী প্রভাবশালী শ্রেণী ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে অবৈধভাবে সরকারি জমি দখল করে রেখেছে।

* দ্বিতীয়ত, সরকারি অবকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যাপক বাধা, ফলস্বরূপ জাতীয় উন্নয়ন ব্যাহত হয়েছে। পাশাপাশি তা নাগরিকদের আর্থ-সামাজিক কল্যাণে বিরূপ প্রভাব তৈরি করেছে।

প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, সারাদেশে প্রায় ৪০ লাখ জেরিব রাষ্ট্রীয় জমি অবৈধ দখলে রয়েছে। বিগত ২ দশকে, পূর্ববর্তী প্রশাসন এই সকল জমির কার্যকর ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে নানাবিধ উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল, কিন্তু উদ্যোগসমূহ যথাযথভাবে বাস্তবায়ন না হওয়ায় ভূমি সংশ্লিষ্ট বিরোধ ও অবৈধ দখলের মাত্রা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল।

তালিবান সরকার উক্ত সমস্যা সমাধান করাকে জাতীয় অগ্রাধিকারপূর্ণ বিষয় হিসেবে বিবেচনা করে এসেছে। তাই দীর্ঘদিনের অবহেলিত ভূমি প্রশাসন ব্যবস্থার আইনি ও প্রযুক্তিগত সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণ করেছে ইমারতে ইসলামিয়া। তালিবান শাসনামলে ভূমি আইন সংক্রান্ত একটি কাঠামোগত পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়েছে।

সরকারি তথ্যানুযায়ী, বিগত ২ বছরে ২.৫ কোটি জেরিবের অধিক রাষ্ট্রীয় জমি চিহ্নিত করেছে ইমারতে ইসলামিয়া প্রশাসন। সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে ২০ লাখ জেরিবের অধিক জমি সফলভাবে অবৈধ দখলমুক্ত করা হয়েছে। উল্লেখ্য যে, ১ জেরিব সমান প্রায় ০.৪৯ একর।

জাতীয় সম্পদ রক্ষার জন্য উদ্যোগটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একইসাথে টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও জনকল্যাণে রাষ্ট্রীয় জমির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে এটি মৌলিক ভূমিকা পালন করছে।

ইমারতে ইসলামিয়া’র প্রবর্তিত মৌলিক আরও একটি সংস্কার কার্যক্রম হল সরকারি জমির নিয়মতান্ত্রিক নিবন্ধন। এই উদ্যোগের লক্ষ্য হল রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন জমির একটি সঠিক ও বিস্তারিত ডাটাবেস গঠন করা। পাশাপাশি দীর্ঘস্থায়ী সম্পত্তি বিরোধ নিষ্পত্তি করা ও অবৈধ জমি দখল মুক্ত করা।

সরকারি জমি সঠিকভাবে নথিভুক্ত হলে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়। এতে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন সহজতর হয়। এর মাধ্যমে নিবন্ধিত জমি কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক উভয় পর্যায় থেকে প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়।

জাতীয় উন্নয়নের ভিত্তি হিসেবে ভূমি আইনকে শক্তিশালী করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ইমারতে ইসলামিয়া। ভূমি নিবন্ধন ত্বরান্বিত করণ ও সরকারি সম্পদের কৌশলগত ব্যবহার নিশ্চিত করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে তালিবান প্রশাসন। এর মাধ্যমে জনকল্যাণমূলক প্রকল্প বাস্তবায়ন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান এবং সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক অবস্থা ক্রমেই উন্নতির দিকে ধাবিত হচ্ছে।


তথ্যসূত্র:
1. Safeguarding State-owned Land: A Path to Sustainable Development
– https://tinyurl.com/98esk6uf

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন ছাত্রলীগের হামলা; দুই সমন্বয়ক সহ আহত ০৪
পরবর্তী নিবন্ধক্যালিফোর্নিয়ায় এখনো জ্বলছে একাধিক দাবানল