
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশ নিয়ে প্রায় ৩০০ স্প্লিন্টার শরীরে নিয়ে কীভাবে বেঁচে আছি, কেউ খোঁজ নেয় না। প্রায় সাত মাস হয়ে গেল জীবনটা দুর্বিষহ হয়ে গেছে। চিকিৎসা তো দূরের কথা, খেয়ে না খেয়ে যে পরিবার নিয়ে কোনোমতে দিন পার করছি, দেখার কেউ নেই বলে গণমাধ্যমের কাছে আক্ষেপ করছিলেন জুলাই বিপ্লবের আন্দোলনে অংশ নেওয়া আহত সুজন (৪৪)।
সুজন টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার আকালু গ্রামের মৃত আনছার আলীর ছেলে। সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটি ছিলেন তিনিই। ঢাকায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালাতেন। পাশাপাশি জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বর্তমানে আহত অবস্থায় বিছানায় পড়ে থাকায় পরিবার নিয়ে খুব কষ্টে আছেন তিনি। ঘরে নিয়মিত চুলা জ্বলে না। আত্মীয়দের সাহায্য-সহযোগিতায় খেয়ে না খেয়ে কোনোমতে দিন পার হচ্ছে তার। অর্থাভাবে চিকিৎসাও হচ্ছে না। তার প্যারালাইসড মায়ের অবস্থা আরও শোচনীয়। তিন সন্তানের পড়ালেখাও বন্ধের পথে।
গণমাধ্যমকে সুজন বলেছেন, জুলাই বিপ্লবের আন্দোলনে অন্যদিনের মতো ৫ আগস্ট সকাল ৯টার দিকে বাড্ডা থানা ঘেরাও কর্মসূচিতে অংশ গ্রহণ করি। সকাল ১০টার দিকে পুলিশ আমাদের লক্ষ্য করে একতরফা গুলি বর্ষণ শুরু করে। এক পর্যায়ে পুলিশের ছোঁড়া ২শ ৯৬টি স্প্লিন্টার আমার শরীরে লাগে। আমি অচেতন অবস্থায় দেয়ালের পাশে পড়ে থাকি। পরের দিন সকালে টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আমার জ্ঞান ফিরে। আমার শরীরে এখনও প্রায় ৩শ স্প্লিন্টার রয়েছে। আমি চলাফেরা করতে পারি না। ক্রাচের মাধ্যমে হাঁটলেও ব্যাথা বেড়ে যায়, শরীর ফুলে শক্ত হয়। খেয়ে না খেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছি। কেউ খোঁজ নেয় না।
সুজনের স্ত্রী নূপুর বলেন, ‘আমার স্বামী আহত হওয়ার পর থেকে সংসারে কোনো আয় নেই। বর্তমানে আমার শ্বশুর বাড়ি এলাকায় খেয়ে না খেয়ে জীবন পার করছি। এমনও দিন যাচ্ছে চুলায় আগুন জ্বলে না। আমার ৩ সন্তানের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।’
নূপুর আরও বলেন, ‘আমার স্বামীসহ প্যারালাইসড শাশুড়ির খাবার-ওষুধও যোগাড় করতে পারছি না। সম্পদ বলতে বাড়ির মাত্র ৩ শতাংশ জায়গা। সেখানে জরাজীর্ণ ১৬ হাতের কাঁচা ঘরে শাশুড়ি, আমরা স্বামী-স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে খুব করুণ অবস্থায় থাকি। মেরামতের অভাবে ঘরটিও যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে।’
তথ্যসূত্র:
১. ‘শরীরে ৩০০ স্প্লিন্টার নিয়ে কীভাবে বেঁচে আছি, কেউ খোঁজ নেয় না’
-https://tinyurl.com/swraht42