আওয়ামী আমলে ধর্ষণের শিকার ১ লক্ষ ৩৭ হাজার নারী-শিশু

0
16

পতিত স্বৈরাচার সরকারের সময়ে ছাত্রাবাস থেকে শুরু করে রাজপথে কোথাও বাকি ছিল না ধর্ষণের মচ্ছব। শেষ ছয় বছরেই ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৭ হাজার শিশুসহ প্রায় ৪৩ হাজারের বেশি নারী। এই সময়ে নির্যাতন শিকার হয়েছে ১ লাখ ৩৭ হাজার নারী। অপহরণের শিকার হয়েছে ২৮ হাজার ৪৮ নারী ও শিশু।

ফ্যাসিস্ট হাসিনার আমলে ধানের শীষে ভোট দেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী দ্বারা নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। কিন্তু নারীবাদী নেত্রী এবং মহিলা পরিষদসহ এমন ঘৃণ্য ঘটনায় প্রতিবাদ দূরের কথা, বিভিন্ন সংগঠনের উদ্বেগ ধামাচাপা দিয়েছে বছরের পর বছর। তাদের এমন নীরবতায় হাইকোর্ট ডিভিশন পর্যন্ত শাসিয়েছে।

জুলাই গণবিপ্লবের সময়ে আন্দোলনরত নারী শিক্ষার্থীদের ওপর সংঘটিত নির্যাতন নিয়ে ১৩ ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘ প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, সরকারি বাহিনী এবং নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কর্মীরা নারীদের আন্দোলনে অংশগ্রহণে বাধা দিতে যৌন নিপীড়ন ও শারীরিক নির্যাতন চালিয়েছে। কয়েকটি ঘটনায় নারী আন্দোলনকারীদের বেআইনিভাবে আটক করা হয়েছে এবং তাদের শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। প্রতিবেদনে জাতিসংঘ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক সমাজের প্রতি ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানায়।

পুলিশের তথ্যে ধর্ষণের সংখ্যা

পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পাওয়া তথ্যানুসারে, গত পাঁচ বছরে দেশে ধর্ষণের ঘটনাগুলো ছিল উদ্বেগজনক। ২০১৯ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে সারাদেশে তিন মাসে ধর্ষণের ঘটনায় ৩৪ হাজার ৪৭০টি মামলা করা হয়েছে। এ সময় থানায় করা মামলার মধ্যে পুলিশ ৬ হাজার ১০০ ধর্ষণের মামলা তদন্ত শেষে ৯ হাজার ২ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট জমা দিয়েছে। আরো অনেক মামলার তদন্ত প্রক্রিয়াধীন আছে।

পুলিশ সূত্র জানায়, শুধু ২০১৯ সালে সারাদেশে ধর্ষণের ঘটনায় থানায় ৬ হাজার ১১৪টি মামলা করা হয়েছে। ২০২০ সালে ৭ হাজার ১৯৪টি, ২০২১ সালে ৬ হাজার ৯৮৬টি, ২০২২ সালে ৭ হাজার ১২টি, ২০২৩ সালে ৬ হাজার ২৩২টি এবং সর্বশেষ ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ৩০৮টি, ফেব্রুয়ারিতে ৩৫১টি ও মার্চ মাসে ৩৭৩টি মামলা করা হয়েছে।

২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত (বিগত ৬ বছরে) ৪৩ হাজার ৪৭২টি ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। এ সময় নারী নির্যাতনের ঘটনায় মামলা হয়েছে ১৭ হাজার ৫৭১টি। যৌতুক না পেয়ে ও ধর্ষণের পর হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন ১৫৯ জন নারী। শুধু ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ধর্ষণের অভিযোগ আসে ৪ হাজার ৩৩১টি, নারী নির্যাতনের ঘটনায় মামলা হয়েছে ১২ হাজার ৭৬৯টি। এ সময়ে যৌতুক না পেয়ে ও ধর্ষণের পর হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন ১৫৯ জন নারী। থানায় ‘পুলিশ শূন্য সময়’ আগস্টে সবচেয়ে কম মামলা হয়েছে।

পুলিশের সঙ্গে মহিলা পরিষদের তথ্যে বিস্তর পার্থক্য

পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্যানুযায়ী, নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনায় থানাগুলোতে ২০১৯ সালে ২১ হাজার ৭৬৪টি মামলা হয়েছে, ২০২০ সালে হয়েছে ২২ হাজার ৫১৭টি, ২০২১ সালে ২২ হাজার ১৩৬টি, ২০২২ সালে ২১ হাজার ৭৬৬টি এবং ২০২৩ সালে ১৮ হাজার ৯৪১টি মামলা হয়েছে। ২০২৪ সালে জুলাই বিপ্লবের কারণে থানাগুলোতে পুলিশের অনুপস্থিতির ফলে কিছু নির্যাতনের ঘটনায় মামলা হয়নি।

অন্যদিকে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের তথ্যমতে, ২০১৮ সালে ১ হাজার ৭ জন নারী যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে। ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ১ হাজার ৭৮৪ জন নারী, ২০২১ সালে ৩ হাজার ৭০৩ নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে। ২০২২ সালে ৯৮৭ জন ধর্ষণের শিকার হয়েছে পরে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে ৩৮ জন। ২০২৩ সালে জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ২ হাজার ৯৩৭টি নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৬৩৯ জন।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় লিগ্যাল অ্যাইড উপপরিষদে সংরক্ষিত ১৩টি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।

গত ছয় বছরে নারী ও শিশুদের ওপর সংঘটিত অন্য অপরাধের মধ্যে ১ হাজার ১৫২ জন নারী ও শিশু হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন এবং অ্যাসিড নিক্ষেপেরে ঘটনা ঘটেছে ১৭৯ জন নারী ও শিশুর ওপর।

নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের হাতে ধর্ষণ

গত বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) বহিরাগত এক দম্পতিকে ডেকে এনে স্বামীকে আটকে রেখে তার স্ত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। অভিযুক্তরা হল বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মোস্তাফিজুর রহমান ও বহিরাগত যুবক মামুন (৪৫)। তাদের মধ্যে মোস্তাফিজ মীর মশাররফ হোসেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক।

সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে স্বামীকে বেঁধে তার সম্মুখেই স্ত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। আর নৃশংস এ ঘটনায় জড়িত ছিল ছাত্রলীগের সক্রিয় ছয় কর্মী। ২০২০ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর এ ঘটনা ঘটে। এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে গৃহবধূ ধর্ষণের ঘটনায় হাইকোর্ট নারী নেত্রীদের নীরব ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল।


তথ্যসূত্র:
১. ধর্ষণের শিকার ৪৩ হাজার নারী-শিশু
– https://tinyurl.com/mttmbucd

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধপাকিস্তানে সামরিক বাহিনীকে লক্ষ্য করে টিটিপির ৩৩টি অভিযান: হতাহত ৯৫ শত্রু সেনা
পরবর্তী নিবন্ধগাজায় দখলদার ইসরায়েলের ভয়াবহ বিমান হামলায় নিহত অন্তত ৩০৮