হত্যা মামলার আসামি ছাত্রলীগ নেতা থেকে প্রশাসন ক্যাডার; অবৈধভাবে ০৫ কোটি টাকার জমি দখল

0
48

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) আলোচিত জুবায়ের হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি নাজমুল হুসেইন প্লাবন রাজনৈতিক বিবেচনায় হয়েছিল বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা।

ঢাকার ডেমরা সার্কেলের এসিল্যান্ডের লোভনীয় পদেও ছিল দেড় বছর। বর্তমানে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের বাজেট শাখায় সিনিয়র সহকারী সচিব পদে কর্মরত আছে সে।

গাইবান্ধার আওয়ামী লীগ নেতার ছেলে নাজমুল ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্ত্রী ও শাশুড়িকে সঙ্গে নিয়ে খিলগাঁও ত্রিমোহনী এলাকায় পাঁচ কোটি টাকা মূল্যের ১৮ শতাংশ জমি দখল করেছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। এ সম্পত্তি দখলে নিতে শাশুড়িসহ পিতা-মাতা, স্ত্রী ও নিকটাত্মীয়ের নামে একাধিক দলিল তৈরি করতে গিয়েও নাজমুল প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেবলে তারা দাবি করেন।

আওয়ামী শাসনে যেসব হত্যাকাণ্ড দেশবাসীর মনে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল তার মধ্যে জাবির মেধাবী ছাত্র জুবায়ের হত্যার ঘটনা অন্যতম। নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগ নেতারা ২০১২ সালের ৯ জানুয়ারি ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করে জুবায়েরকে। দেশের আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর এ হত্যার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার এজাহারভুক্ত আসামি ছিল ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মো. নাজমুল হুসেইন প্লাবন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তদন্ত ও অনুসন্ধান শেষে প্লাবনসহ ছাত্রলীগের ১৩ নেতাকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দেয়।

আদালত সূত্র জানায়, শুনানি ও যুক্তিতর্ক গ্রহণ শেষে ২০১৫ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল রায় ঘোষণা করেন। রায়ে পাঁচ আসামির মৃত্যুদণ্ড এবং ছয় আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেয়। রায়ে মামলার অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত নাজমুল হুসেইন প্লাবনসহ দুই আসামি খালাস পেয়ে যায়। প্লাবনের খালাস পাওয়ার খবরে ওই সময় জাবিতে ব্যাপক বিক্ষোভ হয় বলে ওই সময়ের শিক্ষার্থীরা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।

জমি দখলে জামাই-শাশুড়ির তেলেসমাতি

২০২০ সালের ৬ জানুয়ারি ঢাকার ডেমরা সার্কেলের এসিল্যান্ড হিসেবে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার সরকার নাজমুলকে পদায়ন করে। এলাকাবাসীর দাবি, দায়িত্ব নিয়ে ডেমরার দামি সম্পত্তির দিকে নজর দেয় প্লাবন। ভুয়া ও জাল দলিল এবং প্রতারণার মাধ্যমে শাশুড়ি শারমিন পারভীন যোগসাজশ করে প্রায় কোটি টাকার জমি নিজেদের নামে সাব কবলা দলিল করে নেয়।

তাদের এ দলিলের চাঞ্চল্যকর কাহিনি ও এলাকার লোকজনের মুখে মুখে। জমির দলিল ও জামাই-শাশুড়ির প্রতারণা নিয়ে রাজধানীর সবুজবাগ থানার উত্তর বাসাবো এলাকার বাসিন্দা আজগর আলীর পুত্র মো. কামাল উদ্দিন প্রতিকার চেয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর একটি আবেদন দিলে মন্ত্রণালয় গত ২২ এপ্রিল তা গ্রহণ করে তদন্তের উদ্যোগ নেয়।

নাজমুলের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ তুলে ধরে আবেদনে বলা হয়েছে, কামাল উদ্দিনের পিতা আজগর আলী ও মাতা পিয়ার বানু ১৯৭৮ সালে জনৈক একেএম শামসুদ্দিনের কাছ থেকে ঢাকা জেলার খিলগাঁও থানার নন্দীপাড়া মৌজার সিএস ৭৪ নম্বর খতিয়ানের ১০৪ নম্বর এসএ ও আরএস ৬৪০ নম্বর খতিয়ানভুক্ত ১৮ শতাংশ জমি কেনেন। যার সিএস ও এসএ দাগ নম্বর ৮৪৯ ও আরএস দাগ নম্বর ১৪০৫ এবং মহানগর ৮৪২১, ৮৪২২ ও ৮৪২৩ নম্বর দাগের অংশ বিশেষ। কামাল উদ্দিনের বাবা-মা ১৯৮১ সাল পর্যন্ত এ জমির খাজনা পরিশোধ করেন বলে আবেদনে উল্লেখ করেন তিনি।

কামাল উদ্দিনের আইনজীবী মোহাম্মদ শরীফ উদ্দিন গণমাধ্যমকে জানিয়েছে, নাজমুল হোসেইন প্রথমে তার নিকটাত্মীয় সানোয়ার হোসেনের নামে সাব কবলা করার ব্যবস্থা করে। কিছুদিনের মধ্যে সানোয়ার আরেকটি সাব কবলা দলিলের মাধ্যমে নাজমুল হোসেইনের শাশুড়ি শারমিন পারভীনের নামে রেজিস্ট্রি করে দেয়।

রাজধানীর খিলগাঁও সাব রেজিস্ট্রি অফিস সূত্র জানিয়েছে, শারমিন পারভীন গত বছর ২ ডিসেম্বর আরেকটি দলিলের মাধ্যমে নাজমুল হোসেইন প্লাবন, প্লাবনের স্ত্রী মেহের জারীন চৌধুরী (দলিল দাতার মেয়ে), নাজমুলের পিতা এম হান্নান প্রধান ও নাজমুলের মা নাছিমা খাতুনের নামে জমিটি রেজিস্ট্রি করে দেয়।

নাজমুলের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগ তুলে ধরে কামাল উদ্দিন বলেন, আমাদের কোটি টাকার সম্পত্তি দখল করতে সে কোনো অপরাধই বাকি রাখেনি। আমাদের পুরো পরিবারটি আজ বিপর্যস্ত। আমি নিজেও অসুস্থ হয়ে পড়েছি। কামাল উদ্দিন বলেন, নাজমুল হোসেইন নিজেও ছাত্রলীগ নেতা ছিল। পিতা এম হান্নান প্রধানও গাইবান্ধা জেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা থাকায় বিগত সরকারের সময় আমরা বহু চেষ্টা করেও সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারিনি।

হত্যা মামলার আসামি থেকে বিসিএস কর্মকর্তা

জাবি ছাত্র জুবায়ের নিহত হন ২০১২ সালের ৯ জানুয়ারি। নির্মম এ হত্যা মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত ছিলেন প্লাবন। জাবি শিক্ষার্থীদের দাবি, বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার আগে এ মামলায় চার্জশিটভুক্ত আসামি ছিল সে। ২০১৫ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল রায় দেয়। রায়ে প্লাবন খালাস পেয়ে ২০১৬ সালের ১ জুন প্রশাসন ক্যাডারে নিয়োগ লাভ কর।

জাবির ওই সময়ের একাধিক শিক্ষার্থী গণমাধ্যমকে জানিয়েছে, আসামি প্লাবন জুবায়ের হত্যা মামলার অন্যতম চার্জশিটভুক্ত আসামি। সে এ মামলায় খালাস পেয়েছেন রাজনৈতিক বিবেচনায়।

জুবায়ের হত্যায় প্লাবনের বিষয়ে দেওয়া বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের উচ্চ আদালতে আপিল করার যথেষ্ট উপাদান ছিল। কিন্তু দলীয় বিবেচনা থেকেই ওই সময় রাষ্ট্রপক্ষ তার খালাস আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করা থেকে বিরত থাকে।


তথ্যসূত্র:
১. পাঁচ কোটি টাকার জমি দখলের অভিযোগ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে
– https://tinyurl.com/mu82xx6k

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিগত ১০ মাসে ২১৩টি সামরিক যান সংস্কার করেছে ইমারতে ইসলামিয়ার আল-ফারুক সামরিক কোর
পরবর্তী নিবন্ধছাত্র জনতার উপর গুলির নির্দেশদাতা ৩৯ ম্যাজিস্ট্রেট বহাল তবিয়তে; বেশিরভাগই হিন্দু