
মিয়ানমারের রাখাইন (আরাকান) রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর ভয়াবহ সহিংসতা চালিয়েছে বৌদ্ধ সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। মাত্র একদিনেই তারা ৬০০-এর বেশি মুসলিম নারী, শিশু, বৃদ্ধ, এমনকি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকেও হত্যা করেছে।
গত ১০ আগস্ট আল জাজিরা এক বিশেষ ভিডিও প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালের ২ মে বুদিডং টাউনশিপের ছয়াচেরি ও পাশ্ববর্তী এলাকায় গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে, যেখানে সারি সারি লাশের সারি দেখা গেছে, অনেকের শরীরে নির্যাতনের স্পষ্ট চিহ্ন রয়েছে।
প্রতিবেদনে ১৮ বছর বয়সী নুর সালমা নামের এক রোহিঙ্গা তরুণীর সাক্ষাৎকার তুলে ধরা হয়। তিনি জানান, ‘আমার বাবা-মাকে আমি চোখের সামনে গুলি খেতে দেখেছি। তারা আমাদের রাত ৯টার মধ্যে গ্রাম ছাড়তে বলেছিল। কিন্তু তার আগেই তারা এসে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে।’ নুর সালমা আরও জানান, তার ছয় ভাইবোন এখনো নিখোঁজ।
প্রতিবেদনে এ ঘটনার জন্য আরাকান আর্মিকেই দায়ী করা হয়েছে, যারা নিজেদের একটি জাতিগত প্রতিরোধ বাহিনী হিসেবে দাবি করলেও রোহিঙ্গাদের ওপর তারা মিয়ানমার জান্তা বাহিনীর মতোই নিপীড়ন ও হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে বেআইনি আটক, নির্যাতন, নির্বিচার হত্যা এবং এমনকি শিরচ্ছেদের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ উঠেছে। মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, আরাকান আর্মি এখন মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ‘অসমাপ্ত কাজ’ অর্থাৎ রোহিঙ্গাদের নিশ্চিহ্ন করার পথেই হাঁটছে।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, ২০২৪ সালের ১৭ মে আরাকান আর্মি বুদিডাং শহরে রোহিঙ্গাদের বসতবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। এই হামলার ফলে গত ১৮ মাসে প্রায় ১,৫০,০০০ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে, যার ফলে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীর সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়েছে, যা বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শরণার্থী সংকট।
গণহত্যার বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের সামনে তুলে ধরছে আরাকান রোহিঙ্গা ন্যাশনাল কাউন্সিল (এআরএনসি)। এই সংগঠনের সহ-সভাপতি নেই-সেই লউইন বলেন, ‘১৫ মাস পর আমরা গণহত্যার ছবি হাতে পেয়েছি। এর আগে কেউ বিশ্বাস করত না। কিন্তু এখন প্রমাণ রয়েছে। আমরা জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক আদালতের কাছে বিচারের দাবি জানাচ্ছি।’ তিনি আরও জানান, ‘গত বছরের ১৭ মে একদিনেই আরাকান আর্মি পুরো পরিবারগুলোকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে। তারা শিশু, নারী, প্রতিবন্ধী কাউকেই রেহাই দেয়নি।’
তিনি আরও জানান, ‘আরাকান আর্মি নিজেদের অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ন্যায়ভিত্তিক শাসনের প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে তারা রোহিঙ্গাদের ওপর হত্যাকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। মিয়ানমার সেনাবাহিনী এবং আরাকান আর্মির মধ্যে ক্ষমতার লড়াই থাকলেও, রোহিঙ্গা ইস্যুতে তারা একমত যে, এই মুসলিম জনগোষ্ঠীকে দেশ থেকে নিশ্চিহ্ন করতে হবে।’
প্রতিবেদনে বলা হয়, বুদিডাং এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট না থাকায় ঘটনাগুলো নিরপেক্ষভাবে যাচাই করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তবে নেই-সেই লউইন জানান, তারা কিছু অ্যাপ ও কিছু বিশ্বস্ত উৎসের মাধ্যমে প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে ঘটনার বিবরণ সংগ্রহ করেছেন। একজন প্রত্যক্ষদর্শীর ভাষ্যমতে, আরাকান আর্মি একদিনেই ৬০০-র বেশি মানুষ হত্যা করে এবং লাশগুলো ফেলে রেখে শহরটি পুড়িয়ে দেয়।
রোহিঙ্গা মুসলিমদের মোবাইলে ধারণকৃত গণহত্যার কিছু চিত্র:
তথ্যসূত্র:
1. Rohingya mass graves found in Myanmar’s Rakhine state, survivors demand justice
– https://tinyurl.com/ycx6mmxa


