আ.লীগকে ফেরাতে এবং দেশকে অস্থিতিশীল করতে কাজ করছে পান্না

0
60

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জহিরুল ইসলাম (জেড আই) খান পান্নার নানা কর্মকাণ্ড নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে। তার একের পর এক বিতর্কিত মন্তব্যে বিব্রত আইনজীবী ও রাজনীতিকরা। মূলত পান্নার ওপর ভর করেই সুশীল সমাজের নামে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগকে রাজনীতির মাঠে ফেরানোর চক্রান্তে একটি মহল লিপ্ত বলে অভিযোগ।

এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার পক্ষে মামলা শুনানির আবেদনে নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে এই আইনজীবী। বিতর্কিত সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হককে নিয়েও সে সৃষ্টি করেছে বিতর্ক।

গণমাধ্যম সূত্র জানায়, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচার হচ্ছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। এ-সংক্রান্ত মামলায় ভারতের আশ্রয়ে থাকা হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের পর এখন সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে। বিচারের এমন পর্যায়ে গত মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) হঠাৎ করেই ট্রাইব্যুনালে একটি আবেদন জমা দেওয়া হয়। ওইদিন ট্রাইব্যুনালের বিচার কার্যক্রমের শুরুতে আইনজীবী নাজনীন নাহার জেড আই পান্নার পক্ষে আবেদন পেশ করে। সে বলে, ‘সিনিয়র আইনজীবী জেড আই খান পান্না আজকে এখানে আসতে পারেনি। সে শেখ হাসিনার পক্ষে আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ পেতে চায়। এ কথা ট্রাইব্যুনালকে জানানোর জন্য আমাকে পাঠিয়েছে।’

আইনের সব ধরনের প্রভিশন ও বিধিবিধান জানার পরও পান্না এমন আবেদন করায় বিস্ময় প্রকাশ করেছে খোদ ট্রাইব্যুনাল। তার মোটিভ (উদ্দেশ্য) নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পলাতক হাসিনার পক্ষে আইনজীবী নিয়োগের বিষয়ে ট্রাইব্যুনাল বলে, ‘তার (শেখ হাসিনা) পক্ষে স্টেট ডিফেন্স (রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী) নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ প্রক্রিয়া শেষ।’

রাজনৈতিক বিতর্ক সৃষ্টি করতে পান্নার আবেদন

ট্রাইব্যুনালের বিচারপ্রক্রিয়াকে বিতর্কিত করার চেষ্টা হচ্ছে উল্লেখ করে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন গণমাধ্যমকে বলেন, বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। এ অবস্থায় জেড আই খান পান্নার আবেদন গ্রহণের আইনগত এখতিয়ার ট্রাইব্যুনালের নেই। এটা জেনেও সে (পান্না) আবেদন করায় তার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

গণহত্যার ন্যায়সংগত ও আইনসম্মত বিচার চাইলে পান্না এমন আবেদন করতে পারত না উল্লেখ করে খোকন বলে, শেখ হাসিনার গণহত্যার বিষয়টি কেউ অস্বীকার করতে পারেন না। শুধু রাজনৈতিক বিতর্ক সৃষ্টির জন্যই অসময়ে এমন আবেদন করা হয়ে থাকতে পারে।

আইনগত সুযোগ না থাকার পরও ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার পক্ষে শুনানিতে অংশ নিতে পান্নার করা আবেদনকে রাজনৈতিক বিতর্কের অপচেষ্টা বলে মনে করছেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। তিনি আমার দেশকে বলেন, ‘পান্না সাহেব একজন সিনিয়র আইনজীবী। তিনি বেশ ভালো করেই জানেন শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের এ পর্যায়ে তার অংশ নেওয়ার সুযোগ নেই। এটা জেনেও তিনি রাজনৈতিক ফায়দা নিতেই আবেদনটি করেছেন। যদিও এর কোনো আইনি ভিত্তি নেই।

আ.লীগের প্রত্যাবর্তনে পান্নার মঞ্চ গঠন

গত ৫ আগস্ট ছিল স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার পতন ও পলায়ন দিবস। গত বছরের ওই দিনে ছাত্র-জনতার তীব্র গণআন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। গণঅভ্যুত্থানের মুখে দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে গিয়ে আশ্রয় নেয় হাসিনা।

স্বৈরাচারের পতন দিবসে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মরণে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। ওইদিন বিকালে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে জুলাই ঘোষণা পাঠ করে প্রধান উপদেষ্টা। সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেয় সে। ওইদিনই ‘মঞ্চ ৭১’ নামে একটি সংগঠন নিয়ে মাঠে নামে জেড আই পান্না।

পান্নার ‘মঞ্চ ৭১’কে আওয়ামী লীগেরই প্ল্যাটফর্ম হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন রাজনীতিবিদসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা। তাদের মতে, মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের সম্ভাবনা দেখা দেওয়ার পর থেকেই পান্নাসহ আরো কয়েকজন সরাসরি রাজনীতির মাঠে নেমে পড়েছে। গত এক বছর তারা আত্মগোপনে কিংবা বিভিন্ন জায়গায় ঘাপটি মেরে থাকলেও এখন ধীরে ধীরে আড়াল থেকে বের হচ্ছে।

রাজনীতিবিদদের মতে, গত ১০ মে প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তার নেতাদের বিচার কার্যসম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দলটির যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের সংশোধনী প্রস্তাবও অনুমোদন দিয়েছে, যাতে ট্রাইব্যুনাল কোনো রাজনৈতিক দল, তার অঙ্গসংগঠন বা সমর্থক গোষ্ঠীকে শাস্তি দিতে পারে। এরপর থেকেই আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী শ্রেণি বিভিন্ন নামে মাঠে নেমে পড়েছে বলে জানায় রাজনৈতিক নেতারা।

পান্নার ঘোষণায় আ.লীগ-ছাত্রলীগের নড়াচড়া

১৫ আগস্ট উপলক্ষে কালো রঙের পোশাক পরে রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল আইনজীবী জেডআই খান পান্না। বুধবার (১৩ আগস্ট) ভারতের একটি গণমাধ্যমকে এ-সংক্রান্ত সাক্ষাৎকার দেওয়ার পর আওয়ামী লীগ (কার্যক্রম নিষিদ্ধ) ও নিষিদ্ধ ঘোষিত সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দিনটি পালনের ঘোষণা দেয়। এর আগে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে প্রচার চালানো হয়—‘১৫ আগস্ট জেডআই খান পান্না জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. কামাল হোসেনকে নিয়ে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবের বাড়ি যাবে।’

এর আগে গত রোববার ফেসবুক লাইভে পান্না বলে, ‘প্রিয় দেশবাসী, আগামী ১৫ আগস্ট জাতির একটি শোক দিবস। আপনারা যে যেখানে থাকেন, সেদিন যেহেতু শুক্রবার, সেহেতু অন্তত কালো জামা না হলেও কালো ব্যাজ ধারণ করবেন এবং বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের যে ১৬ জন এবং দুজন বাইরের, হয়তো একজন কর্নেল জামিল এবং একজন বরিশালের রিন্টু। তো আপনারা তাদের জন্য দোয়া করবেন আল্লাহর কাছে।’

খায়রুল হককে নিয়ে নতুন রাজনীতি

বহুল বিতর্কিত সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক বর্তমানে কারাগারে রয়েছে। গত ১১ আগস্ট হাইকোর্টে তার জামিনের আবেদন করা হয়। খায়রুল হকের পক্ষে শুনানি করতে আদালতে হাজির হয় জেডআই খান পান্না এবং এমকে রহমান।

খায়রুল হকের জামিনের শুনানিকে কেন্দ্র করে আদালতে জড়ো হন আওয়ামী লীগ সমর্থিত আরো বেশ কয়েকজন আইনজীবী। তারা তাৎক্ষণিক শুনানি করতে চাইলে সময়ের আরজি জানান রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী। তিনি বলেন, এ মামলায় রাষ্ট্রের পক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল শুনানি করবে।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর এ সময় চাওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে আওয়ামীপন্থি আইনজীবীরা আদালতে তুমুল হট্টগোল করে। এ নিয়ে আদালতে হাতাহাতি ও ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে।


তথ্যসূত্র:
১. পান্নায় ভর করে আওয়ামী লীগের প্রত্যাবর্তনের চেষ্টা
-https://tinyurl.com/2purj7v5

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধঢাবিতে কালচারাল ফ্যাসিস্টদের ছবিতে জুতা নিক্ষেপ কর্মসূচি শিক্ষার্থীদের
পরবর্তী নিবন্ধছাত্রদলের দু’গ্রুপের সংঘর্ষে পুলিশসহ আহত ৭