
বিজয় দিবসের রাষ্ট্রীয় আয়োজনে অংশ নেওয়া এক প্যারাট্রুপারকে ঘিরে দেশজুড়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। ওই প্যারাট্রুপার হল মোহাম্মদ ইবনুল ইসলাম অভি। সে তার ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে জুলাই আন্দোলনকে ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ আখ্যা দিয়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে ধারাবাহিক রাজনৈতিক পোস্ট দেয়।
১৮ ডিসেম্বর দৈনিক আমার দেশের বরাতে জানা যায়, সম্প্রতি পোস্টগুলো ভাইরাল হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা তৈরি হয়। এসব পোস্টে কোথাও জুলাইয়ের ছাত্র-জনতাকে ‘মৌলবাদী’ বলা হয় আবার কোথাও আক্রমণাত্মক ভাষায় ‘গর্দান নেওয়ার’ ইঙ্গিতও দেখা গেছে, যা নিয়ে জনমনে গভীর উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
জানা গেছে, ১৬ ডিসেম্বর সেনাবাহিনীর প্যারাট্রুপিং দলে বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরীর পাশেই ছিল প্যারাট্রুপার অভি। মূলত ওই ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই সমালোচনা শুরু হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অভি ফেসবুকে ইংরেজিতে ‘ibnulovhi ibnulovhi’ নামে একটি অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে। ওই অ্যাকাউন্ট থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের আগে ও পরে একাধিক পোস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে ‘সন্ত্রাসী কার্যক্রম’ হিসেবে আখ্যা দেয়। একই সঙ্গে হাসিনার প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে একাধিক পোস্ট দেয়। সর্বশেষ ২ ডিসেম্বর সে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে মুজিববাদী বক্তব্যসংবলিত একটি পোস্ট দেয়। এর আগে ১২ নভেম্বরের একটি পোস্টে সে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক এবং গাজীপুর চৌরাস্তার মতো স্পর্শকাতর স্থানে সহিংসতার ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করে। ওই পোস্টে শামীম ওসমান এবং শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টারের নাম উল্লেখ করে ‘বড়ই অভাব’ কথাটি ব্যবহার করা হয়।
এছাড়া ১৬ আগস্ট শেয়ার করা আরেকটি পোস্টে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বাড়ি প্রসঙ্গে শরীফ ওসমান হাদির একটি ফটোকার্ডে সে লেখে, পাক বাহিনীর নাপাক পানিতে তোর মতো হাজার হাজার হাদি পয়দা হয়েছে বর্তমান এই বাংলায়। ওই পোস্টের কমেন্ট বক্সে ‘মৌলবাদীদের গর্দান নেওয়া’-সংক্রান্ত মন্তব্যও দেখা যায়। তার ওই ফেসবুক আইডি গত ১৬ ডিসেম্বর রাত ১২টা পর্যন্ত সক্রিয় ছিল। তবে, এসব পোস্টের স্ক্রিনশট ইতোমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে।
জানা গেছে, প্যারাট্রুপার অভির বাড়ি চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার সুন্দরপুর এলাকায়। তার বাবার নাম নজরুল ইসলাম। অভিযোগ রয়েছে, তার বড় ভাই ইমরুল রাফি ফটিকছড়ি উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি পদে প্রার্থী ছিল এবং পরিবারটি দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত।
এলাকার বাসিন্দা আবদুল হাকিম জানায়, জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার সময় তার ভাই সরাসরি জড়িত ছিল। ওই সময় অভিও ফেসবুকে ছাত্র-জনতাকে সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে একাধিক পোস্ট দেয়।
রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ দিবসে অংশ নেওয়া একজন সেনাসদস্যের এমন প্রকাশ্য রাজনৈতিক অবস্থান এবং সহিংস বক্তব্য সামাজিক ও নিরাপত্তাগত দিক থেকে কতটা উদ্বেগজনক, সে প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহলে।
তথ্যসূত্র:
১। জুলাই আন্দোলনকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড আখ্যা দেওয়া প্যারাট্রুপার অভি আলোচনায়
– https://tinyurl.com/46rtwc2v


