ভারতের বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইনের পক্ষ ও বিপক্ষ দলের মধ্যে সংঘর্ষের সূচনা হলেও এখন তা মুসলিম নিধনে রুপ নিয়েছে। ভারতের কসাই খ্যাত বর্তমান সময়ের ফেরাউন নরেন্দ্র মোদী আবারো মুসলিম হত্যার হোলিখেলায় মেতে উঠেছে।
পত্রিকার ভাষ্যমতে এখন পর্যন্ত ৩৪ জনকে শহীদ করাসহ অসংখ্য মুসলমানদের উপর হামলা চালানো হয়েছে। মসজিদগুলোতে আগুন দেওয়াসহ মুসলমানদের বাড়িঘর ও দোকান-পাটে লুটপাট চালানো হচ্ছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
আজ ২৭ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে প্রেরিত বার্তায় হাটহাজারী মাদরাসার মুহাদ্দিস ও হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা আশরাফ আলী নিজামপুরী ক্ষোভ প্রকাশ করে আরো বলেন, নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতার সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ ছাড়াই ভারতের নয়াদিল্লিতে বেছে বেছে মুসলমানদের হত্যা করা হচ্ছে। আহতদের চিকিৎসা সেবা বন্ধ করা হয়েছে। মুসলমানদের ব্যবসা বানিজ্য, দোকান-পাটে লুটপাট চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। স্পষ্টতই এটা যে পরিকল্পিত ও পদ্ধতিগত গণহত্যা তা পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে এমন ঘৃণিত কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে।
মাওলানা নিজামপুরী বলেন, আমাদের বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রায় দেড় কোটি লোক বসবাস করে। আমরা সবসময় তাদের সাথে সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি বজায় রাখলেও পাশ্ববর্তী দেশ ভারতে সবসময়ই মুসলমানদের উপর নির্যাতন চালানো হয়। মসজিদগুলোতে হামলা চালানো হয়।
মাওলানা আশরাফ আলী নিজামপুরী বলেন, ভারতবর্ষে মুসলমানদের দেড় হাজার বছরের রয়েছে গৌরবময় ইতিহাস ও ঐতিহ্য । শিক্ষা-সাহিত্য, শিল্প-সংস্কৃতি ও উন্নয়নশীল জাতিগোষ্ঠী গঠনে মুসলমানদের রয়েছে গৌরবদীপ্ত অবদান! ভারতবর্ষের ভাগ্যকাশে যখন বৃটিশ বেনিয়ারা জুলুম-নির্যাতন, হত্যা, লুটতরাজসহ দখলদারিত্বের ত্রাস সৃষ্টি করে কালবৈশাখী ঝড় তৈরি করেছিল, সেই বৈরী পরিবেশে মুসলমানদের আত্মত্যাগ ও স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন -সংগ্রাম ভারতবর্ষের ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, মুসলমানদের অবদান ঐতিহ্যকে অস্বীকার করার মাধ্যমে মুসলমানদেরকে কোণঠাসা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, হিন্দুসমাজের মধ্যে বর্ণভেদের কারণে নিম্ন শ্রেণির হিন্দুদের শিক্ষার কোনও অধিকার ছিল না। তৎকালীন ব্রাহ্মণ শিক্ষকেরা নিম্ন হিন্দুদের শিক্ষা দিতে কখনো রাজি হতেন না। সংস্কৃত ছিল বেদের ভাষা। তাই ব্রাহ্মণ ছাড়া অন্যেরা বেদ স্পর্শ করতে পারতেন না। এমতাবস্থায় মুসলমান সুলতানরা ইসলামের শাশ্বত উদার নীতি অনুসরণ করে নিম্ন হিন্দু সমাজের জন্যেও শিক্ষার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। সুলতানী আমলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রত্যেক নাগরিক, হিন্দু-মুসলমান, নারী-পুরুষের সমান সুযোগ ও অধিকার প্রতিষ্ঠিত ছিল। বেদের ভাষা সংস্কৃত ছিল বলে সাধারণ হিন্দু নাগরিকরা মোটেই পড়তে পারতেন না। তাই মুসলমানরা সংস্কৃত গ্রন্থ ফার্সিতে অনুবাদ করে স্কুল ও মক্তবে হিন্দু ছাত্রদের সংস্কৃত পড়ার বিশেষ ব্যবস্থা করেছিলেন। ভারতের শিক্ষা বিস্তারের ইতিহাসে মুসলিম শাসকদের অবদান অনস্বীকার্য। মুসলিম শাসকদের শিক্ষার উদ্যোগ নিঃসন্দেহে চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
তিনি আরো বলেন, আমরা লক্ষ্য করছি পরিকল্পিত এই হত্যাকাণ্ডকে কিছু কিছু হলুদ মিডিয়া দাঙ্গা বলে অপ্রচার চালানোর ব্যর্থ চেষ্টায় লিপ্ত হচ্ছে। অথচ, এটা দাঙ্গা নয়, পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে মুসলমানদের হত্যা করা হচ্ছে। আমরা গণমাধ্যমে দেখেছি, বাবরি মাসজিদকে যে ভাবে শহীদ করা হয়েছে, ঠিক সেভাবেই গতকাল বিভিন্ন মসজিদে হামলা চালানোসহ মসজিদের মিনারে গোরুয়া হিন্দুদের পতাকা টানানো হয়েছে। এমন ঘৃণিত ও পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের সময় বাংলাদেশ সরকারসহ বিশ্বসমাজ নীরব দর্শকের ভূমিকায় থাকা দুঃখজনক।
আগামী ১৭ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য মুজিববর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানে মোদীকে আমন্ত্রণ জানানোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, মোদী সরকার সাম্প্রদায়িক, দাঙ্গাবাজ ও বিশ্ব সন্ত্রাসী। মোদীর হাতে হাজার হাজার মুসলমানের রক্ত লেগে আছে। এমন একজন ঘৃণিত সন্ত্রাসীকে কোন ভাবেই ৯০ ভাগ মুসলমানদের দেশে অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো মেনে নেওয়া যায় না। আশা করি এব্যাপারে সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। অন্যথায় এদেশের হক্কানি ওলামায়ে মাশায়েখের ডাকে পুরো দেশ উত্তপ্ত হয়ে যেতে পারে।
আল্লাহর রাসূল সা. ভারতবর্ষে গাজওয়ায়ে হিন্দ অনুষ্ঠিত হওয়ার ভবিষ্যৎ বাণী করেছেন। আমাদের মনে হচ্ছে এটা গাজওয়ায়ে হিন্দের পূর্বাবাস। তাই সকল মুসলমানকে মানসিক ও আর্থিকসহ সকল প্রস্তুতি গ্রহণের আহবান জানান মাওলানা আশরাফ আলী নিজামপুরী।