‘কোন কাম নাই। বাড়ির বাইরে বারায়য়াও লাব (লাভ) নাই। পয়সা-পাতি যা আছিলো শ্যাষ। হামরা একন কী খায়া বাচমো? সংসার চালামো ক্যামনে?’ চোখে-মুখে চিন্তা আর একরাশ হতাশা নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন ভ্যানচালক বাবু মিয়া। গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার হেলেঞ্চা গ্রামের বাসিন্দা তিনি।
বাবু মিয়া জানান, ভ্যান চালিয়ে যা আয় হতো তা দিয়ে সংসারের নিত্যপ্রয়োজনীয় খরচ চলতো। করোনা রোধে সরকারি নিষেধাজ্ঞার পর সবকিছু বন্ধ থাকায় এখন আয়ও হচ্ছে না। একই কথা জানালেন উপজেলার বোনারপাড়া বাজারের পান বিক্রেতা একরামুল ইসলাম। তার অভাবের সংসারে স্ত্রীসহ আছে দুই মেয়ে ও এক ছেলে। প্রতিদিন বাজার থেকে চাল-ডাল সবজি না কিনলে বাড়িতে চুলায় আগুন জ্বলে না। কারণ হিসেবে জানালেন, সংসারে তার সঞ্চয় বলে কিছু নেই। করোনা ভাইরাসের কারণে দোকান বন্ধ থাকায় মাথায় হাত পড়েছে। একরামুল বলেন, দোকান খুলে রাখতে পারি না, কারণ পুলিশ এসে হুমকি দেয়। এখন দোকান না চললে সংসার চলবে কীভাবে? বুঝতে পারছি না।
রিপোর্টঃ আমাদের সময়
পাশের দোকানি রতন বাবু ও আব্দুল জলিলেরও একই কথা। তাদের সংসারেও দিন আনি দিন খাই অবস্থা। ঘরে বসে থাকলে কীভাবে চলবে সংসার? এমন চিন্তা সবসময় তাদের মাথায়। এমন চিত্রই এখন উপজেলার নিম্ন আয়ের মানুষের। উপজেলার তেলিয়ান-সাহারভিটা গ্রামের ভ্যানচালক মছির উদ্দিন বলেন, প্রতিদিন ভ্যান চালিয়ে যা আয় হয় তা দিয়েই সংসার চলে। করোনা ভাইরাসের কারণে চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় তিন বেলা পেট ভরে খাওয়া জোটেনি। ভ্যান নিয়ে বের হলেও রাস্তায় তো মানুষ নেই। এখন সারাদিনে ৫০ টাকা উপার্জন করাই কষ্টকর। এভাবে কতদিন চলবে প্রশ্ন তার।
গাইবান্ধা জেলায় চারজনের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্তের পরপরই পাল্টে গেছে মানুষের জীবন চিত্র। সরকারি নির্দেশনায় সচেতনতাসহ বাড়িতে বন্দিজীবন কাটছে সব শ্রেণিপেশার মানুষ। তবে আয়-উপার্জন না থাকায় কষ্টে আছে রিকশা-ভ্যানচালক, চা-পানের দোকানিসহ নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষ। পুলিশের পিটুনির ভয়ে দোকানপাট খুলতে পারছেন না কেউ।