ভারতে ইউপিএসসি পরীক্ষায় মুসলিমদের নির্বাচনকে ঘিরে মুসলিম বিরোধী উসকানিমূলক অনুষ্ঠান সম্প্রচার করেছে হিন্দুত্ববাদী মিডিয়া সুদর্শন টিভি।
‘প্রশাসনের শীর্ষস্তরে দলে দলে ঢুকে পড়ছে মুসলিমরা। জামিয়ার জিহাদিরা হয়ে যাচ্ছে আইএএস, আইপিএস। কঠিন পরীক্ষায় সফল হওয়ার রহস্য কী’? অনুষ্ঠানের প্রচারের জন্য ছড়ানো ভিডিও-তে এমনই বক্তব্য ছড়ানো হয়েছে। ‘বিন্দাস বোল’ নামে সেই টিভি শোয়ের প্রচারে বলা হয়েছে, ‘ভেবে দেখুন জামিয়ার জিহাদিরা হতে চলেছে আপনার জেলাশাসক, মন্ত্রকের সচিব। আমলাতন্ত্র দখলের জেহাদ ফাঁস হচ্ছে’। সেই অনুষ্ঠানের দুটি এপিসোড সম্প্রচার হয়ে গেছে।
ইউপিএসসি-জিহাদ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সঞ্চালক অভিযোগ করছেন একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের অনেক মানুষ সিভিল সার্ভিসে প্রবেশ করছে।’ তাঁর প্রশ্ন, ‘এটা কতটা অনিষ্টকর? এই ধরনের অভিযোগ ইউপিএসসি পরীক্ষার ওপর প্রশ্নচিহ্ন তুলছে। কোনোরকম সত্য ভিত্তি ছাড়া এই ধরনের অভিযোগ কীভাবে কেউ করতে পারে? একটি স্বাধীন সমাজে এই ধরনের অনুষ্ঠানের অনুমতি কীভাবে দেওয়া যেতে পারে?’
ফৌজদারি তদন্তই দেখুন, মিডিয়া বেশিরভাগ সময়েই তদন্তের শুধুমাত্র একটা অংশের উপরই জোর দেয়। তাঁর বক্তব্য, ‘এই অনুষ্ঠানটাই দেখুন। একটা সম্প্রদায় সিভিল সার্ভিসে ঢুকছে বলে অনুষ্ঠান, কতটা উন্মাদ হতে পারে।’
জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত আবাসিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ৩০জন ছাত্র-ছাত্রী এবার ইউপিএসসি সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় সফল হয়েছেন। তার মধ্যে হিন্দু ছাত্র-ছাত্রীরাও রয়েছেন। এই প্রতিষ্ঠান দেশের কেন্দ্রীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যেও শীর্ষস্থানীয় বলে বিবেচিত হয়েছে। এই মূল্যায়ন করেছে কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকই। জামিয়াকে ঘিরে ঘৃণার প্রচার তীব্র হয়েছে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বিরোধী প্রতিবাদের পর। দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো এখানেও ছাত্র-ছাত্রীরা শামিল হয়েছিলেন প্রতিবাদে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীন দিল্লি পুলিশ ক্যাম্পাসে ঢুকে লাঠি চালালে দেশজুড়ে প্রতিবাদ ভেঙে পড়ে। বিজেপি এবং সহযোগী বিভিন্ন শক্তির লাগাতার আক্রমণের কেন্দ্রে জামিয়া।
জেডএফআই শীর্ষ আদালতকে জানিয়েছে, ‘ওই বিতর্কিত প্রোগ্রাম মুসলিমদের বিরুদ্ধে শত্রুভাবাপন্ন মনোভাবকে প্রতিফলিত করে এবং এটা জঘন্য ইসলামোফোবিয়া ছাড়া আর কিছু নয়।’ সুদর্শন টিভির ওই ন্যাক্কারজনক অনুষ্ঠানে জামিয়া মিল্লিয়া ইসলামিয়ার পাশাপাশি জেডএফআইকেও নিশানা করে দাবি করা হয়েছিল যে, সিভিল সার্ভিসে মুসলিমদের অনুপ্রবেশ করানো হচ্ছে।
ওই হস্তক্ষেপ আবেদনে জিহাদের ধারণার ব্যাখ্যা দিয়ে সুদর্শন টিভির ‘ভিত্তিহীন অভিযোগ’কে খণ্ডন করা হয়েছে এবং এই সংস্থার ঘৃণামূলক ক্রিয়াকলাপকে তুলে ধরা হয়েছে। ক্যান্ডিডেটদের বৈচিত্রের কথা উল্লেখ করে আইএ জানিয়েছে যে, জাকাতের অর্থ কাজে লাগিয়ে জাকাত ফাউন্ডেশন অফ ইন্ডিয়া শুধুমাত্র দরিদ্র মুসলিমদের নয়, সব ধর্মাবলম্বী পরীক্ষার্থীদের ১১ বছর ধরে প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে।
পিটিশনে বলা হয়েছে, যে ২৭ জন এ বছর পাশ করেছে তাঁদের মধ্যে ৪ জন অন্য ধর্মের। আগের বছরগুলিতেও অন্য ধর্মের পড়ুয়ারা জাকাত ফাউন্ডেশনের সহযোগিতা পেয়েছেন। ওই টিভি চ্যানেল দাবি করেছিল, যারা জেডএফআইকে জাকাত দেন, তাঁরা সন্ত্রাসবাদী কাজকর্মের সঙ্গে কোনওভাবে যুক্ত। এ মুসলিমবিদ্বেষ এবং এর শিকড় অনেক গভীরে প্রসারিত।
সুদর্শন টিভির মতো আরএসএস ও বিজেপির মদতপুষ্ট গণমাধ্যমগুলি খোলাখুলিভাবে ভুল তথ্য পরিবেশন করে মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে কুৎসা ছড়ানোর কাজে লাগাতার চেষ্টা করে চলেছে। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। এর কারণ কারও অজ্ঞাত নয়।