কাশ্মীরী সাংবাদিকদের উপর মোদির কঠোরতা

0
862
কাশ্মীরী সাংবাদিকদের উপর মোদির কঠোরতা

কাশ্মীরের সাংবাদিকদের মারাত্মক চাপের মধ্যে কাজ করতে হয়। কারো রিপোর্টে সামান্য ভুল হলেও কর্তৃপক্ষের শক্ত খড়্গ নেমে আসতে পারে। তাই লেখার সময় সব সময় একটা ভয় কাজ করে যে, এমনকি সামান্য ভুল হলেও কারাগারে জায়গা হতে পারে।

ঝুঁকি থাকলেও কাশ্মীরের গল্প বিশ্বকে জানতে হবে। স্থানীয় ও জাতীয় মিডিয়ায় জায়গা যেহেতু সীমিত হয়ে গেছে, তাই বহু সাংবাদিক কাশ্মীরের ঘটনা তুলে ধরতে আন্তর্জাতিক মিডিয়ার দ্বারস্থ হচ্ছে।

এখানকার সাংবাদিকদের সবচেয়ে বড় আতঙ্ক হলো পাবলিক সেফটি অ্যাক্ট। এই আইনে অভিযোগ ছাড়াই অনির্দিষ্টকালের জন্য আটকে রাখা যায়। অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্য কাশ্মিরিয়াতের সম্পাদক কাজি শিবলি সম্প্রতি নয় মাস কারাগারে থেকে মুক্তি পেয়েছেন। কাশ্মীর ন্যারেটরের সহকারী সম্পাদক আসিফ সুলতান দুই বছরের বেশি ধরে কারাগারে আছেন।

সরকারবিরোধী গেরিলাদের সাথে কথা বলার কারণে এ বছর এক ডজন সাংবাদিককে পুলিশের হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। এদের মধ্যে জাতীয় পত্রিকার সাংবাদিকও রয়েছেন। অনেকের মোবাইল নিয়ে স্ক্যান করা হয়েছে। মে মাসে একটি বন্দুকযুদ্ধের খবর ছাপানোর কারণে আমার নিজের পত্রিকা দ্য কাশ্মীর ওয়ালা’র সম্পাদককে তলব করা হয়। কর্তৃপক্ষ বলেছে, ওই রিপোর্টে ‘পুলিশের ভাবমূর্তি’ ক্ষুণ্ন হয়েছে।
আগস্টের শেষ দিকে কাশ্মীরে একটি ধর্মীয় মিছিলে অংশগ্রহণকারী তরুণ মুসলিমদের উপর মালাউন বাহিনীর ছোড়া ছড়ড়া গুলিতে বেশ কয়েকজন অন্ধ হয়ে যায়। ভারতের জাতীয় সংবাদপত্র ও আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলোতে প্রকাশিত একটি ছবিতে সেই ভয়াবহতা উঠে আসে, যেখানে দেখা গেছে এক টিনএজ যুবকের চোখের মনি ও চোখের কোটর ঝাঁঝড়া হয়ে আছে।

কাশ্মীরে অবশ্য পাঠকরা আঞ্চলিক পত্রিকাগুলোতে ঘটনার পরবর্তী কয়েক দিনেও এই বিষয়ের কোন উল্লেখই পায়নি।

এই সংবাদ প্রকাশে কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। কিন্তু সরকার এটা পছন্দ করবে না। পুলিশের হয়রানির ভয়ে এবং বিজ্ঞাপন হারানোর ভয়ের কাশ্মীরের মূলধারার গণমাধ্যমগুলো ২০১৯ সালের আগস্টে জম্মু ও কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন বাতিলের পর থেকেই নিজেদের উপর সেলফ-সেন্সরশিপ আরোপ করেছে।

ভিন্নমত প্রকাশের সবশেষ প্ল্যাটফর্ম সোশাল মিডিয়ার উপরও সরকারের নজরদারি বেড়েছে। আগস্টে বেশ কিছু জনপ্রিয় টুইটার অ্যাকাউন্ট হঠাৎ করে উধাও হয়ে যায়। স্থানীয় মিডিয়াগুলোতে খবর প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে বেশ কিছু ব্যক্তি বলেছেন, ‘দেশ-বিরোধী’ বিষয়বস্তুর অভিযোগে তাদেরকে হয়রানি করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস এর আগে এক অনুসন্ধানে দেখতে পায় যে, কাশ্মীর নিয়ে কাজ করে, এ ধরণের হাজার হাজার টুইটার অ্যাকাউন্ট ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে ব্লক করে রাখা হয়েছে। টুইটারের ‘দেশভিত্তিক কনটেন্ট নীতি’র অধীনে এটা করা হয়েছে, যেই নীতি অনুসারে স্থানীয় আইনের পরিপন্থী এবং আদালতের আদেশের আওতায় পড়তে পারে, এ ধরণের একাউন্ট লক করে দেয়া হয়।

এই সব কিছুই মনে হয় যেন কাশ্মীরের মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণের জন্য মোদি সরকারের পরিকল্পিত নীতির অংশ। কেন্দ্রের শাসনের বিরুদ্ধে স্থানীয়দের সমালোচনা আগে থেকেই বন্ধের জন্য নয়াদিল্লী বেশ কয়েক মাস ধরে কারফিউ জারি এবং সব ধরণের যোগাযোগ বন্ধ রেখেছিল। মোবাইল ও ইন্টারনেট সেবাও এ সময় বন্ধ ছিল।

এই সব কিছু সত্বেও কাশ্মীরের সাংবাদিকরা ক্ষমতার ব্যাপারে সত্য প্রকাশের জন্য নতুন পথ বের করে নিচ্ছে। গত বছরে কাশ্মীরে সামরিক ষাঁড়াশি অভিযানের বিষয়টি অধিকাংশ ভারতীয় মিডিয়া এড়িয়ে যাওয়ার পর, অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের স্থানীয় তিন সাংবাদিক এই ঘটনাগুলোকে ফটো প্রতিবেদনের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন।

মিনাম শাহ একজন কাশ্মীর-ভিত্তিক সাংবাদিক

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধতারপরও বেহাল ঢাকার সড়ক
পরবর্তী নিবন্ধভারতে মুসলিমদের বদনাম করতে ‘ইউপিএসসি জিহাদ’ অনুষ্ঠান সম্প্রচার