বাংকার গড়েছিলেন,না পায়খানার সেপটিক ট্যাংক?

0
1438
বাংকার গড়েছিলেন,না পায়খানার সেপটিক ট্যাংক?
সুবিধামত ফন্ট ছোট বড় করুনঃ

সপ্তাহ খানেক আগে ভারতের ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআইএ) মুর্শিদাবাদে ইসলামী জিহাদী দল আল কায়েদার সদস্য ধরেছে বলে জানিয়েছে। তারা এটাও জানিয়েছে যে, ওই মুসলমান কেরালার কিছু ইসলামিস্ট সদস্যের সাথে হাত মিলিয়ে দেশজুড়ে আক্রমণের প্ল্যান করছিলো।

তারপর কলকাতার কিছু খবরের কাগজ ও টিভি চ্যানেল তাদের রিপোর্টে জানায় যে, কীভাবে মুর্শিদাবাদের সদস্যরা দেশজুড়ে আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। বলা হলো-তাঁরা আল কায়েদার সাথে যুক্ত। কিন্তু তাদের কাছে পাওয়া গেলো কালীপূজার সাধারণ বারুদের বাজির পটকার মতো সাজ সরঞ্জাম, কিছু ব্যাটারি, ছোটোখাটো বিদ্যুৎবাহী তার ইত্যাদি।

এক ধৃত সন্দেহভাজন ব্যক্তি আবু সুফিয়ানের বাড়ীতে মাটির তলায় ‘সুড়ঙ্গ’ পেয়েছে এনআইএ গোয়েন্দারা, তাও মিডিয়া রিপোর্টে এলো। রিপোর্টের পাঠক-দর্শকদের পরোক্ষভাবে মেসেজ দেওয়া হলো, এই সুড়ঙ্গ কোনো গোপন কুঠরিতে গিয়েছে, যেখানে হয়তো পার্লামেন্ট উড়িয়ে দেওয়ার জন্য বোমা তৈরী হচ্ছিলো। বা, ওই সুড়ঙ্গ দিয়ে সন্ত্রাসবাদী কাজকর্মের জন্য বাংলাদেশের ইসলামিস্ট জঙ্গীদের সাথে যোগাযোগ রেখেছিলো তারা।

‘এনআই’ ছাড়াও অপেশাদার সাংবাদিকদের একাংশ মুর্শিদাবাদের ধৃতদের জঙ্গী হিসাবে পরিচয় করানোর প্রাণপণ চেষ্টা করে যায়।

কিন্তু তারপরই মিডিয়া রিপোর্টের উপরে ব্যঙ্গাত্মক আক্রমণ শুরু হলো সোশ্যাল মিডিয়াতে। এই আক্রমণে দেখা গেলো যে, মুর্শিদাবাদের ধৃত সন্দেহভাজনরা আল কায়েদার মতো উচ্চপর্যায়ের ইসলামিক দলের সাথে যুক্ত তা বিশ্বাস করতে রাজী নয়। এই জঙ্গীদের কাছে যা কিছু পাওয়া যায়, তাতে এদের আল কায়েদার মতো আন্তর্জাতিক স্তরের জিহাদি গোষ্ঠীর হয়ে কাজ করতে পারে তা কেউই প্রায় বিশ্বাস করেনি। এই প্রথম এমন ফেনোমেনন দেখা গেলো যে, অনেক অমুসলমানেরাও এইসব রিপোর্টের সাংবাদিকদের ভদ্রভাষাতে গালাগালি শুরু করলো ফেসবুকে।

‘এনআই’ তাদের রিপোর্টে কিন্তু সুফিয়ানের বাড়ীর গর্তকে সুড়ঙ্গ বা বাংকার বলে চিহ্নিত করেনি কখনোই – কাল জেনেছি পুলিশের উপর মহলের এক সূত্র থেকে যিনি ‘এনআই’-র অফিসারদের সাথে কথা বলেছেন। কিছু সাংবাদিকই প্রথম ওই গর্তকে সুড়ঙ্গ বা বাংকার বলে চিহ্নিত করে, ওই সূত্র জানায়।

এখন মুর্শিদাবাদ পুলিশ স্থানীয় কিছু সাংবাদিকদের জানিয়েছে যে, ওই এলাকায় মানুষজনের বাড়ীতে একই রকমের অন্তত আরো ৭২টি গর্ত পাওয়া গেছে যেগুলি সব তাদের পায়খানার ট্যাংক। জায়গার অভাব বলে তারা নিজেদের বসতবাড়ীর মধ্যেই এমনি সেপটিক ট্যাংক করেছে। সুফিয়ানের বাড়ীর ট্যাংক খোঁড়া হয়েছে, কিন্তু এখনো তা পায়খানার সাথে যুক্ত হয়নি, তাও কাল জানা গিয়েছে।

চাপে পড়ে প্রায় ৪ দিন হলো কলকাতার কাগজ টিভি সুফিয়ানের বাড়ীর ওই গর্তকে সুড়ঙ্গ বা বাংকার বলে লাফালাফি বন্ধ করেছে। কিন্তু বাংলাদেশের সর্বাধিক প্রচারিত বাংলা দৈনিকে তাদের কলকাতার রিপোর্টার মুর্শিদাবাদে সন্ত্রাসের সুড়সুড়ি জারি রেখেছে। “বাড়িতে বাংকার গড়েছিলেন সেই সুফিয়ান” শিরোনামে কাল ‘প্রথম আলো’ ছেপেছে এক রিপোর্ট যেখানে প্রতিবেদক লিখেছে স্পষ্টভাবেই যে, সুফিয়ান নিজের বাড়ীতে বাংকার বানিয়েছিলো। এই প্রতিবেদকও ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ইঙ্গিত দিচ্ছে তার রিপোর্টে যে সুফিয়ানের বাড়ীতে বাংকারে সে সন্ত্রাসবাদী কাজকর্ম করতো। প্রথম আলোর এই প্রতিবেদক এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কিছু জানতে এনআইএ বা এমনকি স্থানীয় পুলিশের সাথেও যে কথা বলেনি, প্রতিবেদনে তা স্পষ্ট।

অতীতে স্টাডি করা ঠিক এমন অসংখ্য সন্দেহভাজন মুসলমান সন্ত্রাসীদের মামলায় দেখেছি যে, পুলিশ বা এনআইএ তাদের অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণই কোর্টে উপস্থাপন করতে পারেনি এবং সেইসব “সন্ত্রাসবাদীরা” নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছে। কোর্টে এইরকম সন্ত্রাসী মামলায় মুসলমানদের নির্দোষ প্রমাণ হওয়ার হার নিশ্চিতভাবে ৯৭% এর কাছাকাছি।

এ বিষয়ে এক প্রথম সারির ভারতীয় ইনস্টিটিউটের সমীক্ষার রিসার্চাররা আমাকে বলেছেন। বিশেষ পরিস্থিতির চাপে এই সমীক্ষার ফল তারা প্রকাশ্যে আনতে পারেননি। আমি প্রায় দৃঢ় নিশ্চিত, মুর্শিদাবাদের এই ধৃতরা কোর্টে নির্দোষ প্রমাণিত হবেন অন্তত সন্ত্রাসবাদী হামলার মামলায়। তবে এইসব মামলার নিস্পত্তি হতে অনেক বছর লাগে ভারতে। তত বছরে জেলে থেকে এদের জীবন পরিবার সব ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবে।

ভারতে এমন উদাহরণ ভুরি ভুরি আছে, যেখানে দেখেছি ১০, ১২, ১৫ বছর জেলে থেকে সন্দেহভাজন মুসলমান সন্ত্রাসীকে কোর্ট নির্দোষ পেয়েছে। [লেখকের ফেসবুক পোস্ট থেকে]

– শেখ আজিজুর রহমান, বিশেষ সংবাদদাতা- দ্য গার্ডিয়ান ও ভয়েস অব আমেরিকা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধভারতে মুসলিমদের বদনাম করতে ‘ইউপিএসসি জিহাদ’ অনুষ্ঠান সম্প্রচার
পরবর্তী নিবন্ধরোহিঙ্গাদের গ্রাম দখল করে সরকারি ও সেনাবাহিনীদের ভবন নির্মাণ করছে মিয়ানমার