বরিশালে গোয়েন্দা পুলিশের নির্যাতনে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। ছয় দিন আগে রেজাউল করিম রেজা নামে ওই যুবককে পুলিশ ধরে নিয়ে গেলেও কোথায় নেয়া হয়েছে এ সম্পর্কে পরিবারকে আর কিছু জানানো হয়নি। পরে হাসপাতাল থেকে কারা কর্তৃপক্ষের ফোন পেয়ে তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় পায় স্বজনরা। রোববার সকালে তার মৃত্যু হয়।
পুলিশের নির্যাতনে সিলেটে এক যুবকের মৃত্যুর ঘটনার দুই মাসের মধ্যে পুলিশের বিরুদ্ধে আবার এরকম ঘটনা ঘটলো।
পুলিশের নির্যাতনে মৃত্যুর ঘটনা ঘটলো এমন দিনে, যেদিন বাংলাদেশের শেখ হাসিনা একটি বক্তব্যে জনগণের মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার আর আইনের শাসনকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়ার জন্য পুলিশের প্রতি তাগিদ দিয়েছে।
৩০ বছর বয়সী রেজাউল করিম রেজা কিছু দিন আগে আইন বিষয়ে পড়াশোনা শেষ করে বরিশালের আদালতে প্রশিক্ষণ নিচ্ছিল। গত মঙ্গলবার রাতে বাড়ির সামনের রাস্তা থেকে তাকে ধরে নিয়ে যায় বরিশালের গোয়েন্দা পুলিশ বা ডিবির কয়েকজন সদস্য।
এরপর কয়েক দিন কোনো খোঁজখবর না থাকার পর গতকাল কারা কর্তৃপক্ষের ফোন পেয়ে হাসপাতালে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে দেখতে পান। আজ ভোরে তার মৃত্যু হয়েছে।
তার পরিবারের একজন সদস্য মাসুম বিল্লাহ বলছিলেন, পুলিশের নির্যাতনে গুরুতর রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়েছে।
মাসুম বিল্লাহ জানান, ‘তারা একটা নাটক করে তাকে নিয়ে গেছে। তাকে বলেছিল, বছর শেষ বা শুরু হচ্ছে, আমাকে যদি দুইজন আসামি ধরে দিতে পার, তাহলে তোমাকে ছেড়ে দেবো। তিনি বলেন, আমি কাকে ধরে দেবো? আমার তো এমন কোনো শত্রু নেই। আমি কাউকে ধরে দিতে পারবো না। তখন সে বলেছে, কীভাবে কী করতে হয়, সেটা আমি জানি। তোমাকে আগে নিয়ে যাই, তারপর দেখাচ্ছি, কীভাবে কী করতে হয়।’
‘এরপর গাড়িতে করে নিয়ে চলে গেছে। ওই সময় ওর বাবা পুলিশের পায়েও ধরেছিল ছেড়ে দেয়ার জন্য, কিন্তু ছাড়ে নি।’
‘নিয়ে যাওয়ার পরে আর কোনো যোগাযোগ করতে দেয়নি। কোথায় নিয়ে গেছে, সেটাও জানা যায়নি। যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও যোগাযোগ করতে দেয়নি। গতকাল কারাগার থেকে আমাদের ফোন দিয়ে বলে তিনি হাসপাতালে আছেন। আমরা গিয়ে দেখতে পাই, তিনি অসুস্থ, রক্তক্ষরণ হচ্ছে। ওই সময়েও আমাদের শুধু ওষুধ কিনে দিতে বলেছে, দেখতে বা কথা বলতে দেয়নি’ তিনি বলেন। তার এই মৃত্যুর ঘটনায় বিক্ষোভ করেছে এলাকার মানুষজন।
বাংলাদেশে পুলিশী হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ এবারই প্রথম নয়।
বিভিন্ন সময় সরকার ও পুলিশের শীর্ষ পর্যায় থেকে এ ধরণের নির্যাতন বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়েছে, কিন্তু কখনোই সেটা পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। গত অক্টোবরে সিলেটে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছিল।