ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর সাবেক বৈমানিক ইউনতান শাপিরা ইসরায়েলি সরকার ও সামরিক বাহিনীকে ‘যুদ্ধাপরাধীদের’ পরিচালিত ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে মন্তব্য করেছে। সম্প্রতি তুরস্কের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আনাদোলু এজেন্সির কাছে দেয়া এক সাক্ষাতকারে সে এই মন্তব্য করে।
২০০৩ সালে দ্বিতীয় ইন্তেফাদার সময় ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর তৎকালীন ক্যাপ্টেন ইউনতান শাপিরা পদত্যাগ করে।
সাক্ষাতকারে সে বলেছে, ‘দ্বিতীয় ইন্তেফাদার সময় আমি উপলব্ধি করলাম ইসরায়েলি বিমান বাহিনী ও ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী লাখ লাখ ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠীর মধ্যে ত্রাস সৃষ্টি করে যুদ্ধাপরাধ করছে। যখনই তা উপলব্ধি করলাম, আমি শুধু নিজেই (বিমান বাহিনী) ছেড়ে আসার সিদ্ধান্ত নেইনি বরং অন্য বৈমানিকদেরও সংগঠিত করলাম যারা এই অপরাধের অংশ হতে অস্বীকার করেছে।’
২০০০ সালে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে পুরো ফিলিস্তিনজুড়ে গণজাগরণ দ্বিতীয় ইন্তেফাদা হিসেবে পরিচিত। ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলিদের মধ্যে বিবাদের মীমাংসায় ক্যাম্প ডেভিড সম্মেলনের ব্যর্থতা এবং ইসরায়েলের বিরোধীদলীয় নেতা অ্যারিয়েল শ্যারনের মসজিদুল আকসা পরিদর্শনের জেরে শুরু হওয়া এই গণজাগরণের পরিপ্রেক্ষিতেই গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলি বসতি ও সামরিক অবস্থান সরিয়ে নেয়া হয়। ২০০৫ সালে এই গণজাগরণের সমাপ্তি হয়।
ইউনতান শাপিরা বলেন, ‘ইসরায়েলি শিশু হিসেবে, আপনি বেড়ে উঠবেন জোরালো জায়নবাদী সামরিকায়িত শিক্ষায়। আপনি ফিলিস্তিন সম্পর্কে কিছুই জানবেন না, ১৯৪৮ সালের নাকবা সম্পর্কে, চলমান নিপীড়ন সম্পর্কে কিছুই জানবেন না।’
ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর দায়িত্ব ছেড়ে আসার পর শাপিরা এক প্রচারণা আন্দোলন শুরু করেন যাতে ফিলিস্তিনিদের আক্রমণের আদেশ অমান্যে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর অন্য সদস্যদের উৎসাহিত করা হয়।
এই প্রচারণায় ২০০৩ সাল থেকে ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর ২৭ বৈমানিক পদত্যাগ করেছেন।
শাপিরা বলেন, তিনি ও ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী থেকে পদত্যাগ করা তার বন্ধুরা ইসরায়েলি জনগণ ও সারাবিশ্বকে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের ‘যুদ্ধাপরাধমূলক নীতি’ সম্পর্কে জানাতে চান।
তিনি বলেন, ‘এই দখলদারিত্ব এক চলমান অপরাধমূলক কাজ ও যুদ্ধাপরাধ এবং আমরা এই যুদ্ধাপরাধের অংশ হতে ইচ্ছুক নই।’
অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড গাজায় ইসরায়েলের সাম্প্রতিক আগ্রাসনে প্রধান ভূমিকা রেখেছে দেশটির বিমান বাহিনী। টানা ১১ দিন বিমান হামলায় গাজায় ২৪৮ জন নিহত ও এক হাজার নয় শ’ ৪৮ জন আহত হয়েছেন।
ইসরায়েলি হামলায় গাজায় মোট এক হাজার বাড়ি সম্পূর্ণ ধ্বংস ও এক হাজার আট শ’ বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানায় ফিলিস্তিনি গৃহায়ন মন্ত্রণালয়।
জাতিসঙ্ঘের মানবিক সহায়তা বিষয়ক সমন্বয় দফতরের (ওসিএইচএ) তথ্য অনুসারে, গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে অন্তত ৯০ হাজার ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
সূত্র: আনাদোলু এজেন্সি ও মিডল ইস্ট মনিটর