ভারত শুধু বিশ্বের বেশিরভাগ হিন্দু, জৈন এবং শিখই বসবাস করে না, এটি বিশ্বের একটি বৃহত্তম মুসলিম জনগোষ্ঠী এবং খ্রিস্টান ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদেরও আবাসস্থল। প্রত্যেকেরই রয়েছে আলাদা ধর্মীয় বিধি বিধান। সেকুলাররা ভারতকে একটি নিরপেক্ষ বৃহত গণতন্ত্রের দেশ হিসেবে দাবী করে। সকলকে ধর্মীয় বিধি বিধান পালনের স্বাধীনতা দেওয়ার বড়াই করে থাকে।
যদি তাদের কথা ধরেও নেওয়া হয়, তাহলে, ধর্মনিরপেক্ষ কথাটির অর্থ হল রাষ্ট্র কোন বিশেষ ধর্মকে সাহায্য বা পৃষ্ঠপােষকতা করবে না এবং এক ধর্ম অপেক্ষা অন্য ধর্মকে প্রাধান্য দেবে না।
তাদের মনগড়া সংবিধানের ২৫নং ধারায় বলা হয়েছে, প্রত্যেক ব্যক্তির বিবেকের স্বাধীনতা এবং ধর্ম গ্রহণ, ধর্ম পালন, ও ধর্ম প্রচারের স্বাধীনতা রয়েছে।
কিন্তু আসলেই কি তাই?
ভারতের সেকুলার রাজনীবিদরা মুসলিমদেরকে সংবিধানে ধর্মীয় স্বাধীনতা থাকার গালগল্প শুনিয়ে বহুকাল ধরে বোকা বানিয়ে রেখেছে। কিন্তু ধীরে ধীরে ধর্মনিরপেক্ষতার আড়ালে থাকা ভারতের ভয়ঙ্কর হিন্দুত্ববাদী চেহারা সামনে আসতে শুরু করেছে। ধর্ম নিরপেক্ষতার মুখোশ সরিয়ে রেখে এখন ভারত প্রকাশ্যে কল্পিত রামরাজ্য বাস্তবায়ন করতে কাজ করে যাচ্ছে। মুসলিমদের উপর জুলুম নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে বিরামহীন।
এর প্রকাশ্য রুপ সামনে আসে মুসলিমদের ঐতিহ্যবাহী বাবরী মসজিদ শহীদ করে দেওয়ার মাধ্যমে। প্রশাসনের প্রত্যক্ষ ও প্ররোক্ষ সমর্থনে জোরদার হতে থাকে মুসলিমদের মসজিদ ভেঙ্গে হিন্দুত্ববাদীদের মন্দির গড়ার লড়াই। বাবরি মসজিদ ভাঙ্গার পর হিন্দুত্ববাদীরা ঘোষণা দেয়- এহতো ছ্যারফ শুরু হ্যায়,
অ্যায়োদ্ধা(অযোধ্যা) ছ্যারফ ঝাকি হ্যায়,
কাশী-মথুরা বাকি হ্যায়।
আর এটা শুধু ঘোষণাই নয় হিন্দুরা ইতিমধ্যে বাবরি মসজিদের পর কাশী, মথুরাসহ ভারতের অসংখ্য স্থানের ঐতিহ্যবাহী সব মসজিদ ভেঙ্গে দেওয়ার মত প্রেক্ষাপট তৈরি করে ফেলেছে।
বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি)-র হিন্দুত্ববাদী নেতা কুন্দন চন্দ্রাবত। ২০ শে ডিসেম্বর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা গেছে, হিন্দুত্ববাদীদের আয়েজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেওয়ার সময় সে মুসলিমদের পবিত্র স্থান মসজিদগুলোকে ‘ব্ল্যাক স্পট’ বা কালো দাগ বলে অভিহিত করেছে।
সে বলেছে, ‘হিন্দুরা ১৯৯২ সালে একটি কালো দাগ (বাবরি মসজিদ) মুছে ফেলেছে।’
ধর্মীয় বিধি বিধান পালনের স্বাধীনতা!
ভারতে বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিম জনগোষ্ঠী থাকলেও হিন্দুত্ববাদীদের রোষানলে ও আপত্তির কারণে মুসলিমরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। মুখোশধারী হিন্দুদের অসাম্প্রদায়িকতার বুলিতে বিশ্বাস করে নিজেদের দ্বীন ধর্মে ছাড় দিতে দিতে প্রকৃত ইসলামের স্বকীয়তা হারিয়ে ফেলেছে। নামে মাত্র ইসলাম ও মুসলিম যারা আছে, তাদেরকেও নির্মূল করার জন্যে উঠেপড়ে লেগেছে হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসীরা।
ধর্মীয় স্বাধীনতা বিপন্ন বলে ভারতকে অমুসলিমরাই কালো তালিকাভুক্ত করেছে। সেগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে, ইউনাইটেড স্টেটস কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম বা ইউএসসিআইআরএফ।
ভারতকে তারা ‘কান্ট্রিজ অফ পারটিকুলার কনসার্ন’ বা যে সব দেশের পরিস্থিতি চিন্তাজনক, সেই তালিকায় রেখেছে।
ইউএসসিআইআরএফ-এর রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘ভারতে নাগরিকত্ব সংশোধন আইন পাস করা হয়েছে। তার ওপর সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছে, সারা দেশে এনআরসি বা নাগরিকপঞ্জি করা হবে। আসামের অভিজ্ঞতা বলছে, দেশজুড়ে এনআরসি হলে প্রচুর মানুষ নাগরিকত্ব হারাবেন। অ-মুসলিমদের জন্য সিএএ-র সুরক্ষা আছে। সে ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে দেশজুড়ে এনআরসি হলে শুধুমাত্র মুসলিমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।’
নামাযে বাঁধা:
———-
ভারতে কট্টর হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই মুসলিমদের উপরে দমন-পীড়ন বাড়ছে। মুসলিমদের মসজিদগুলো ভেঙ্গে দেওয়া হচ্ছে। খোলা জায়গায় নামায পড়া বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।
খালি জায়গা বলতে তারা মূলত বোঝাচ্ছে কার পার্ক, কারখানা, বাজার এবং কারখানার কাছে সরকারী মালিকানাধীন প্লট এবং আবাসিক এলাকা – যেখানে শ্রমিক শ্রেণীর মুসলমানরাই মূলত বছরের পর বছর ধরে নামাজ পড়ে আসছেন।
গরু জবাইয়ে নিষেধাজ্ঞা:
—————-
মুসলিমদের অন্যতম ধর্মীয় বিধান ইদুল আযহায় কুরবানী করা। এছাড়াও গরুর মাংস মুসলিমদের জন্য হালাল একটি সুস্বাধু আমিষ খাবার।
কিন্তু হিন্দুত্ববাদীরা গরুকে মা মনে করায় ভারত জুড়ে কোথাও প্রকাশ্যে আইন করে কোথাও অঘোষিত ভাবে গরু জবাই, খাওয়া ও পরিবহন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। শুধু এমন অজুহাতেই অগণিত মুসলিমকে পিটিয়ে হতাহত করেছে উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা।
ভারতের বিজেপিশাসিত উত্তরপ্রদেশের ক্ষমতাসীন সরকার গরু জবাই ঠেকাতে একটি আইনে সংশোধনী এনেছে। নতুন আইনটিতে গরু জবাইয়ের শাস্তি হিসেবে ১০ বছরের কারাদণ্ডের বিদান রাখা হয়েছে। রাজ্য মন্ত্রিসভায় ‘গো-হত্যা প্রতিরোধ (সংশোধিত) অধ্যাদেশ-২০২০’ নামের আইনটি অনুমোদন করা হয়। রাজ্যে কেউ গরু জবাই করলে ১০ বছর কারাদণ্ড এবং ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার আইন করা হয়। অন্যদিকে, কেউ যদি গবাদিপশুর অঙ্গহানি করে তার জন্য সাত বছরের কারাদণ্ড এবং তিন লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রয়েছে। রাজ্যে গরু জবাই সম্পূর্ণ বন্ধ করার উদ্দেশ্যে ওই আইন করা হয়েছে।
দেশটিতে আরও অনেক রাজ্য রয়েছে, যেখানে গরু জবাইয়ের বিষয়ে কঠোর আইন রয়েছে।
হিজাব পরিধানে বাঁধা:
—————
কথিত গণতন্ত্রের পূজারীরা ব্যক্তি স্বাধীনতার নামে যা ইচ্ছে তাই করতে পারবে। তাদের খুশিমত পোশাক পড়তে পারবে। কিন্তু যখনই কোন মুসলিম মহিলা ইসলামের বিধান ও ব্যক্তি স্বাধীনতার কথা বলে হিজাব পড়বে, তখনই তারা বাঁধা হয়ে দাড়াবে।
ভারতে মুসলিম মহিলাদের হিজাবকে কার্যত অঘোষিত নিষেধাজ্ঞায় রাখা হয়েছে। হিজাবের কারণে অনেক বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন মুসলিম নারীরা।
.
ভারতের পশ্চিমবঙ্গে হিজাব পরা ছবির জন্য ‘বাতিল’ করে দেয়া হয় পুলিশে চাকরির আবেদনপত্র।
২০২০ সালে কনস্টেবল হিসেবে প্রায় সাড়ে আট হাজার পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়। যার মধ্যে মহিলা কনস্টেবলের শূন্যপদ ছিল ১ হাজার ১৯২। ওই পদে নিয়োগের জন্য আবেদনপত্রের সাথে যারা হিজাব পরা ছবি দিয়েছিলেন, তাদের সকলের আবেদনপত্র বাতিল করে দেয়া হয়।
.
ভারতের কর্ণাটকের উদুপির গভর্নমেন্ট পি.ইউ মহিলা কলেজে মুসলিম ছাত্রীদের ক্লাসরুমে হিজাব পরা নিষিদ্ধ করেছে ইসলাম বিদ্বেষী কর্তৃপক্ষ
মুসলিম শিক্ষার্থীরা জানান, ক্যাম্পাসের ভেতরে মুসলিম শিক্ষার্থীদের উর্দুতে কথা বলা বা সালাম দেওয়াও নিষিদ্ধ। কলেজের অধ্যক্ষ রুদ্র গৌড় অভিভাবকদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতেও রাজি হয়নি। হিজাব পড়ায় মুসলিম ছাত্রীদের ক্লাসে প্রবেশ করতেও দেওয়া হচ্ছে না।
.
উত্তর প্রদেশের গেরুয়া সরকারের কট্টর হিন্দুত্ববাদী মন্ত্রী আনন্দ স্বরূপ শুকা।
গোমূত্র পানকারী এই মন্ত্রী বলেছে, বোরখা পরিধান করা নাকি আদতে একটি অমানবিক কু-প্রথা, যা প্রগতিশীল চিন্তাধারার কোনো মুসলিম সমর্থন করতে পারে না। সে মনে করে খুব শীঘ্রই এমন সময় আসবে, যখন মুসলিম মহিলাদেরকে তারা এই বোরখা পরিধান এর হাত থেকে বিরত রাখবে।
শুধুমাত্র মুসলিম হওয়ায় হিন্দুত্ববাদীদের হামলা:
—————————–
২৯ই নভেম্বর: ভারতের ঝাড়খণ্ডে কয়েকজন কাশ্মীরি মুসলিম শীতকালীন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বিক্রি করতে এসেছিলেন। এ সময় অন্তত ২৫ উগ্র হিন্দু তাদের উপর আক্রমণ করে, বেদম পিটিয়ে আহত করে। পরে তাদেরকে ‘জয় শ্রী রাম’ ও ‘পাকিস্তান মুর্দাবাদ’ স্লোগান দিতে বাধ্য করে।
.
২৮ই নভেম্বর: মোঃ আদিল একজন মানসিক প্রতিবন্ধী, তার বয়স ২২ বছর। হিন্দুরা তাকে নির্মমভাবে মারধর করে। সে ভুল করে ঝাড়খণ্ডের একটি হিন্দু মহল্লায় হাঁটাহাটি করছিল। হামলাকারীরা তার দাড়ি ধরে টানাটানি করে অপমান করে এবং মাথার টুপি খুলে মাটিতে ফেলে দেয়। হামলার দিন সে মাগরিবের নামাজ আদায়ের জন্য একটি মসজিদে গিয়েছিল।’
.
১২ই নভেম্বর: ত্রিপুরায় ক্ষমতাসীন হিন্দুত্ববাদী সরকার ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) কয়েকজন নেতার অংশগ্রহণে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ও বজরং দলের অন্তত ৬ হাজার সদস্য মুসলিমদের বিরুদ্ধে এক মিছিলের আয়োজন করে। এ সময় মুসলিমদের দোকান, গাড়ি ও বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে আগুন জ্বালায় ও হামলা চালায় উগ্র হিন্দুরা। এমনকি মুসলিম নারীদের শ্লীলতাহানী পর্যন্ত করে ঐ হিন্দু সন্ত্রাসীরা।
.
২০ই অক্টোবর: মধ্যপ্রদেশে হিন্দুদের নবরাত্রি উৎসবের সময় বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মতো উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা এলাকায় সাম্প্রদায়িক পোস্টার লাগায়। তাদের পোস্টারে লেখা ছিল, ‘অহিন্দুদের প্রবেশ নিষিদ্ধ’। পরে ১০ বছর বয়সী মুসলিম শিশুর কথিত উপস্থিতি নিয়ে উগ্র হিন্দুরা মুসলিম এলাকায় হামলা চালায়।
.
১০ই অক্টোবর: গুজরাটের আহমেদাবাদের পালদি এলাকায় হিন্দুত্ববাদীদের আক্রমণে দুই মুসলিম কিশোর গুরুতর আহত হয়। একজন ভুক্তভোগীর বাবা বলেছেন, ছেলে দুটিকে কেবল এই কারণে আক্রমণ করা হয়েছিল যে, তারা কুর্তা পায়জামা এবং মাথায় টুপি পরিধান করেছিল। এগুলো পরিধানের ফলে তাদের মুসলিম বলে চেনা যাচ্ছিল৷ তারা মাদ্রাসা থেকে ফেরার পথে হিন্দুরা তাদের উপর হিংস্রভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তাদের এতো বেশি মারধর করা হয়েছিল যে, কয়েকদিন পর্যন্ত তারা অজ্ঞান ছিল।
.
৯ই অক্টোবর: মধ্যপ্রদেশের ইন্দোর শহরের কাম্পেল এলাকায় একটি মুসলিম পরিবারকে হিন্দু অধ্যুষিত গ্রাম থেকে স্থায়ীভাবে চলে যেতে নির্দেশ করে হিন্দুত্ববাদীরা। মুসলিম পরিবারটি চলে যেতে অস্বীকার করার পর একদল হিন্দু লোহার রড দিয়ে মুসলিম পরিবারটির উপর আক্রমণ করে। পরিবারটি গ্রামের একমাত্র মুসলিম পরিবার বলে জানা গেছে।
.
৯ই সেপ্টেম্বর: উত্তর প্রদেশের শামিলি এলাকার বাসিন্দা সমীর চৌধুরী (২২)। তাঁর মুসলিম পরিচয় জানার পর বেশ কয়েকজন হিন্দুত্ববাদী লাঠি, রড ও দা দিয়ে কুপিয়ে তাকে খুন করে৷
.
২২শে আগস্ট: মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরের গোবিন্দ নগর এলাকায় হিন্দুদের কাছে চুড়ি বিক্রি করার অভিযোগে এক মুসলিম চুড়ি বিক্রেতাকে মারধর করেছে হিন্দুরা। তসলিম নামে ২৫ বছর বয়সী এ যুবককে মারধরের ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। এ ঘটনায় হিন্দুত্ববাদীদের গ্রেফতার না করে উলটো এই যুবককেই গ্রেফতার করেছে হিন্দুত্ববাদী পুলিশ।
.
১৬ই মে: হরিয়ানার নুহ জেলার ২৭ বছর বয়সী আসিফ খান একজন জিম প্রশিক্ষক। তাকে ও তার কয়েকজন চাচাতো ভাইকে তুলে নিয়ে যায় হিন্দুত্ববাদীরা। পরে তাকে পিটিয়ে হত্যা এবং তার সাথে থাকা তার চাচাতো ভাইদের মেরে গুরুতর আহত করে উগ্র হিন্দুরা।
.
১৬ই মার্চ: ঝাড়খণ্ডের রাঁচি জেলার সিরকা পঞ্চায়েতের মহেশপুর গ্রামে মোটরসাইকেলের টায়ার চুরি করার মিথ্যা অভিযোগে মোবারক খান নামে ২৬ বছর বয়সী মুসলিমকে খুঁটির সাথে বেঁধে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে উগ্র হিন্দুরা।
বাস্তবতা বুঝানোর জন্য শুধু কয়েকটি ঘটনা এখানে তুলে ধরা হয়েছে। এমন কতশত ঘটনা ঘটছে তার কোন সঠিক হিসেব নেই। যে দেশে শুধু মুসলিম হওয়াটাই অপরাধ, এতটুকুই হিন্দুত্ববাদীদের হামলার জন্য যথেষ্ঠ- সেখানে মুসলিমদের ধর্মীয় স্বাধীনতা কতটুকু থাকতে পারে!
ভারতকে শুধুমাত্র হিন্দুদের দেশ বানানোর কার্যক্রম:
——————————-
স্যেকুলার নেতারা ভারতকে কথিত বৃহৎ গণতন্ত্রের দেশ দাবি করলেও নিয়ন্ত্রক হিন্দুত্ববাদীরা ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্রে রূপান্তর করার জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। হিন্দুত্ববাদী অনেক নেতা ভারতকে শুধু হিন্দুদের দেশ হিসেবে আখ্যায়িত করে। মুসলিমদের ভারত ছাড়া করার এবং মুসলিম মুক্ত অখণ্ড ভারত নির্মাণের ঘোষণা ও প্রকাশ্য এজেন্ডা নিয়ে এগোচ্ছে এই হিন্দুত্ববাদীরা।
ভারতের নয়াদিল্লিতে তথাকথিত সাংবাদিক ও কট্টর ইসলামবিদ্বেষী সুরেশ চাভানকে দেখা গেল- সে হিন্দু যুব বাহিনীর সদস্যদের (সিএম যোগী আদিত্যনাথের দল) ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্রে রূপান্তর করার শপথ করাচ্ছে, যেখানে অন্যকোন ধর্ম কিংবা মতবাদের মানুষের জায়গা হবে না।
এছাড়া ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র ঘােষণা করার দাবি জানিয়েছে পুরীর কথিত শঙ্করাচার্য স্বামী নিশ্চলানন্দ সরস্বতী মহারাজ।
ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্রে রূপান্তর করার বিভিন্ন স্থানের শপথের আরো কয়েকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। সেই ভিডিওগুলোতে প্রকাশ্যে মুসলিমগণহত্যার ডাক দিতে দেখা গেছে হিন্দু নেতাদের।
মুসলিমদের জন্য সতর্কবার্তা
——————
ভারতে হিন্দুত্ববাদীরা রাম রাজ্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পরিকল্পিতভাবে ধীরে ধীরে মুসলিম গণহত্যার দিকে যাচ্ছে। মুসলিমদের জাতিগত নির্মূল প্রক্রিয়ার পূর্ব ধাপগুলো সম্পন্ন করে মূল নিধন পর্বে প্রবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছে হিন্দুত্ববাদীরা। মুসলিম নিধনের ডাক দেওয়া হচ্ছে। এবার আরো এক ধাপ এগিয়ে উগ্র হিন্দুত্ববাদী পিঙ্কি চৌধুরী এক জনসভায় “ইসলামকে দ্রুতগতির বিষ ও খ্রিস্টধর্মকে ধীরগতির বিষ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। আর দাবি করেছে ইসলাম ও খ্রিস্টান ধর্মকে পৃথিবী থেকে মুছে দিতে হবে।
জেনোসাইড ওয়াচের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক স্ট্যান্টন বলেছে, ভারত মুসলিম সম্প্রদায়ের উপর গণহত্যা চালানোর ৮ম ধাপে আছে। আর এক ধাপ পরেই শুরু হবে মুসলিম গণহত্যা।
ইসলামি চিন্তাবীদগণ তাই এখন স্পষ্টভাবেই বলছেন মুসলিমদের এখন চিন্তা করা উচিৎ- তাদের খুন করতে হিন্দুত্ববাদীরা তরবারি ধার দিয়ে দিচ্ছে, অস্ত্রের প্রশিক্ষণ নিচ্ছে; সুতরাং তারা কি এখন হিন্দুত্ববাদী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়াবে, নাকি নিজেদের চোখের সামনে স্ত্রী-সন্তান-পরিবারের জান-মাল ও ইজ্জত-আব্রুর লুণ্ঠিত হওয়ার বা নিজে খুন হওয়ার জন্য প্রহর গুণবে?
মুসলিমদের জন্য বিজয়ের সুসংবাদ:
———————-
গভীর অন্ধকারে পতিত ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলিমদেরকে আশার বাণী শুনিয়েছেন বিজ্ঞ উম্মাহ দরদী ইসলামি চিন্তাবীদ। তাঁরা বলছেন- মুসলিমরা যেন হিন্দুত্ববাদীদের অস্ত্রের ঝনঝনানী, জনবলের প্রস্তুতি, দাম্ভিক আচরণে ভীতিগ্রস্থ হয়ে না পরে; কেননা শেষ বিজয়ের হাসি মুসলিমরাই হাসবে, এর ভবিষৎবাণীও করে গেছেন সাদিকুল মাসদুক হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
সুতরাং, বর্তমান পেরেশানিময় পরিস্থিতি কত দ্রুত রং বদলায় বা শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়, তা হয়তো সময়ই বলে দেবে।
লেখক: উসামা মাহমুদ