
ভারতের হরিদ্বারে হিন্দু সংসদে গণহত্যার আহ্বান জানানোর প্রায় এক মাস অতিবাহিত হয়েছে। এবার হরিদ্বার ধর্ম সংসদের কোর কমিটি গত (২৯/০১/২২)প্রয়াগরাজে একটি “সন্ত সম্মেলন” করেছে। যেখানে উগ্র হিন্দুত্ববাদী বক্তারা আবারও মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঘৃণামূলক বক্তব্য দিয়েছে। এবং ভারতকে “হিন্দু রাষ্ট্র” ঘোষণা করার দাবি জানিয়েছে।
হিন্দুত্ববাদী পুরোহিত স্বামী স্বরূপ আনন্দ, যে হরিদ্বার ধর্ম সংসদে ঘৃণামূলক বক্তৃতা করেছিল। কিন্তু হিন্দুত্ববাদী প্রশাসন তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি।
এবারো সে ইসলাম ও মুসলিমদের নিয়ে জঘন্য বক্তব্য দিয়েছে।সে উগ্র নরসিংহানন্দ এবং জিতেন্দ্র তিয়াগীর মত কুখ্যাত অপরাধীদের মুক্তির দাবি জানিয়েছে। দুজনেই হরিদ্বার বিদ্বেষী বক্তব্য ও অন্যান্য অধরাধের মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে উত্তরাখণ্ডের কারাগারে বন্দী।
সে বলেছে, ‘আমাদের ধর্মীয় ’যোদ্ধাদের’ (যতি নরসিংহানন্দ এবং জিতেন্দ্র ত্যাগী) যদি এক সপ্তাহের মধ্যে মুক্তি না দেওয়া হয় তবে এই প্রচারণা আরও আক্রমনাত্মক হয়ে উঠবে। শুধু আক্রমণাত্মক নয়, এর ফল হবে ভয়াবহ। হতে পারে, এই দুই যোদ্ধার কারাবাসের ফলে ভগৎ সিং এসেম্বলিতে (বোমা হামলা) যা হয়েছিল। আমরাও তাই করব।’ ব্রিটিশ শাসনামলে ১৯২৯ সালে কেন্দ্রীয় আইনসভায় যে বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছিল তা উল্লেখ্য করেও হুমকি দিয়েছে।
আনন্দ আরও বলেছে: “এই জাতীয় ধর্ম সংসদ গ্রামে গ্রামে অনুষ্ঠিত হবে… এই দেশ প্রশাসনের পিতার নয়। এদেশের ধর্মচারী এদেশকে পরিচালনার জন্য ছুটে চলেছে, দিকনির্দেশনা দিচ্ছে। তারা এটি চালিয়ে যাবে।”
প্রয়াগরাজ অনুষ্ঠানে পাস হওয়া রেজুলেশনের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে সে বলেছে, তারা তিনটি রেজুলেশন পাস করেছে।
প্রথম প্রস্তাবটি ছিল তারা ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র ঘোষণা করে এবং প্রধানমন্ত্রীকেও তা করার নির্দেশ দেয়। সে ভারতকে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসাবে ঘোষণাকে “সাংবিধানিক ভুল” বলে অভিহিত করেছে। এবং প্রধানমন্ত্রীকে এই “সাংবিধানিক ভুল” সংশোধন করতে বলেছে। তারা ভারতকে শুধু হিন্দু রাষ্ট্র হিসেবে লিখতে বলেছে।
আরেকটি প্রস্তাব হল ধর্মান্তর বিরোধী আইনকে কঠোর করা। যাতে যে কেউ ধর্মান্তরিত করে তার জন্য মৃত্যুদন্ডের বিধান রাখা।
এসব প্রস্তাব ছাড়াও কিছু ঘটনার ভিডিও ক্লিপ প্রকাশ্যে এসেছে যাতে উগ্র বক্তাদের উস্কানিমূলক বক্তব্য দিতে দেখা যায়।
একজন পুরোহিতকে গণহত্যামূলক বক্তৃতা করতে দেখা যায়। সে বলছে,“আমাদের ভগবান ও দেবদেবীদের কাছ থেকে শিক্ষা অর্জনের পর, আমাদের অস্ত্রে সজ্জিত হতে হবে এবং যেখানেই প্রচার করা হয় সেখানে দেশবিরোধী কার্যকলাপ বন্ধ করতে হবে। যদি তারা না থামে, তাদের (মুসলিমদের) গুলি কর।”
উগ্র স্পিকার হিন্দুদের আরও সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য এবং তাদের যত্ন নেওয়ার জন্য এই পুরোহিতদের হাতে তুলে দেওয়ার আহ্বান জানায়।
অন্য একজন হিন্দুত্ববাদী ধর্মযাজক বলেছে, যে সমস্ত ইসলামিক প্রতিষ্ঠান থেকে ফতোয়া জারি করা হয়, সেগুলিকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে হবে।
দেওবন্দ এবং বেরেলির ইসলামিক সেমিনারি হল দুটি বিশিষ্ট প্রতিষ্ঠান যেগুলোর প্রতি হিন্দু সন্ন্যাসীদের লক্ষ্য রাখতে বলেছে।
এই বিদ্বেষমূলক বক্তৃতাগুলি ছাড়াও, সুমেরু পীঠধীশ্বর জগদ্গুরু স্বামী নরেন্দ্রানন্দ সরস্বতী, এই ইসলাম বিদ্বেষী সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিল, সে ইসলামের বিরুদ্ধে চীনের নীতি গ্রহণ করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
সে আরো বলেছে “ইসলাম মানবতা ও বিশ্বের জন্য একটি বড় হুমকি। একে চূর্ণ করতে হলে চীনের নীতি অবলম্বন করতে হবে এবং চীনের মতো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে তা বন্ধ করা যেতে পারে।
মুসলিমদের শক্তিহীনতার সুযোগে ভারতের উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে এখন প্রকাশ্যে হুমকি দিচ্ছে। মুসলিম মুক্ত ভারত গড়তে মুসলিমদের গণহত্যার আহবান জানাচ্ছে। তাদের আগ্রাসন থেকে বাঁচতে সকল মুসলিমদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বিকল্প নেই বলে মত দিয়েছেন হক্বপন্থী উলামায়ে কেরাম।
তথ্যসূত্র:
—–
১। Declaring India secular state a ‘constitutional mistake’: –
https://tinyurl.com/2yxuh22n
২। ভিডিও লিংক –
https://tinyurl.com/2p84mfb5


