আমিরুল মু’মিনীনের পক্ষ থেকে মুসলিম উম্মাহর প্রতি পবিত্র ঈদুল আযহার শুভেচ্ছাবার্তা

    1
    1908

    ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তান প্রশাসনের সাথে সম্পৃক্ত সূত্রগুলি পবিত্র “ঈদুল আযহা” উপলক্ষে সম্প্রতি একটি বার্তা প্রকাশ করেছে। যাতে আফগান প্রশাসনের সর্বোচ্চ নেতা, আমিরুল মু’মিনিন, শাইখুল হাদিস মৌলভি হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা হাফিজাহুল্লাহ্ কর্তৃক আসন্ন ঈদুল আযহা উপলক্ষ্যে মুসলিম উম্মাহকে শুভেচ্ছাবার্তার মাধ্যমে অভিনন্দন জানানো হয়েছে। ঈদ বার্তায় দেশের সর্বশেষ পরিস্থিতি উল্লেখ করা হলেও আফগানিস্তানের ভবিষ্যৎ নিয়েও মূল্যায়ন করা হয়েছে। সেই সাথে ইসলামী শাসনের বিরোধিদের অতীত থেকে শিক্ষা নিতেও পরামর্শ দেন শাইখ হাইবাতুল্লাহ।

    আল্লাহ তাআলার নামে শুরু করা বিবৃতির শুরুতেই তিনি বিশ্বের মুসলিম উম্মাহ এবং আফগানিস্তানের মুসলিম ও মুজাহিদ জাতিকে পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষ্যে হৃদয় নিংড়ানো শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন। তিনি দেশবাসীকে, শুহাদাদের পরিবারবর্গকে, তাঁদের বিধবা আহলিয়াদের এবং তাঁদের ইয়াতিম শিশুদেরকেও সুভেচ্ছা জানান। এবং আল্লাহর কাছে দুআ করেন যে, তিনি যেন সকলের কুরবানি, হজ, ইবাদত ও আমলে সালেহগুলো কবুল করে নেন। (আমীন)

    এরপর তিনি দেশবাসীকে মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, “আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহে আমরা এই বছরের ঈদুল আযহা উদযাপন করছি এমন সময়ে, যখন আমাদের দেশটি পুরোপুরিভাবে স্বাধীন। এখানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এমন এক সরকারব্যবস্থা যার ভিত্তি ইসলামি শরীয়াহ। যার ছায়ায় আফগান জাতি বসবাস করছে শান্তি ও ভ্রাতৃত্বের কোমল বন্ধনে।”

    তিনি এটাও মনে করিয়ে দেন যে, আফগানিস্তানের এই বিজয়ের পিছনে অবদান শুধু ইমারাতে ইসলামিয়ার মুজাহিদীনদের নয়, বরং এই বিজয়ের পিছনে অবদান রয়েছে পুরো আফগান জাতির, যাঁরা বিগত ২০ বছরের জিহাদে সবরকমের কষ্ট সহ্য করেছেন দাঁতে দাঁত চেপে।

    তিনি আরও বলেন, “ইসলামি ইমারাতের মূল দৃষ্টি আফগানিস্তানে পূর্ণাঙ্গ ইসলামি শরীয়াহ মোতাবেক সরকার গড়ে তোলায়, যাতে দেশে বিরাজ করে শান্তি ও নিরাপত্তা।”

    তিনি প্রতিবেশী দেশগুলকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “আমরা আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোকে জানাতে চাই, আমাদের সাথে তাদের শত্রুতা নেই এবং আমাদের ভূমি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হবেনা। একই সাথে এও জানিয়ে দিতে চাই যে, আমরা চাইনা কোনো দেশ আমাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে কোনোরকমের হস্তক্ষেপ করুক।”

    আমেরিকার সাথে চুক্তির উল্লেখ করে বলেন যে, চুক্তি অনুযায়ী আমেরিকার সাথে ইমারাতে ইসলামিয়ার কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হতে পারে। তবে এক্ষেত্রে ইসলামি ইমারতের স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়া হবে।

    আফগান নাগরিকদের দেশে ফিরে আশার আহব্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আফগানিস্তান আফগানদের মাতৃভূমি, আমরা চাই সকলেই অংশগ্রহণ করুক দেশ বিনির্মাণে। আমি মনে করি এটি সব আফগানদের দায়িত্ব। আমরা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিচ্ছি, আমরা শত্রুতা চাইনা, আমরা চাই সকলের দিকেই আমাদের বন্ধুত্বের হাতকে প্রশস্ত করে দিতে। বন্ধুত্ব ও দুশমনির ব্যাপারে আমরা কেবলমাত্র ইসলামের নীতি (আল ওয়ালা ওয়াল বারাহ) মেনে চলবো।”

    ইসলামি ইমারতের বিরোধীদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, “যারা আফগানিস্তানের ইসলামি সরকারের বিরোধীতা করছে এবং দেশের ভিতর ও বাহির থেকে বিভিন্ন চক্রান্ত করার অপতৎপরতা চালাচ্ছে, আমি তাদেরকে বলতে চাই,- পূর্বের ঘটনাপ্রবাহ দেখ এবং শিক্ষা গ্রহণ কর। তোমাদের জন্য এটাই ভালো হবে যে এসব অপতৎপরতা বন্ধ করা এবং শরীয়াহর ছায়াতলে ফিরে আসা।”

    সেই সাথে তিনি দেশবাসী আশ্বস্ত করে বলেন যে, তারা যেসব সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন, সেগুলো সম্পর্কে ইমারতে ইসলাম পূর্ণভাবে অবগত। অর্থনীতিকে শক্তিশালী করা, দেশকে পুনর্গঠন করা এবং বিদ্যমান সমস্যাগুলোর সমাধান করা ইমারাত ও দেশবাসী – উভয় পক্ষের যৌথ দায়িত্ব বলে উল্লেখ করেন তিনি।এবং তিনি সবাইকে নিজ নিজ ক্ষেত্রে কাজ করার এবং একে অপরকে সহায়তা করে দেশের অগ্রগতিতে অংশ নেওার আহব্বান জানিয়েছেন।

    আফগানবাসী ইসলামি ইমারাতকে সমর্থন করে যাবে – এই ব্যাপারে আমিরুল মু’মিনিন দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। তিনি উলামায়ে কেরাম, গোত্র নেতা এবং নেতৃবৃন্দদের কার্যক্রমের তারিফ করে বলেন যে, তাঁরা সকলে ইমারাতে ইসলামিয়াকে পূর্ণ সমর্থন দিয়েছেন এবং সম্প্রতি কাবুলে অনুষ্ঠিত বিশাল জমায়েতে ইমারতের সর্বাঙ্গীন কল্যাণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অনেক প্রস্তাব ও সুপারিশ পেশ করেছেন।

    ইমারাতে ইসলামিয়া যে শরীয়াহ এর মাপকাঠিকে গুরুত্ব দিয়ে শিক্ষাখাতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করছে, পাশাপাশি শিশুদের জন্য যুগোপযোগী পাঠ্যক্রম তৈরিকে গুরুত্ব দিচ্ছে, সে ব্যপারেও সবাইকে আশ্বস্ত করেন তিনি।

    কোনোরকমের বে-ইনসাফি কিংবা বে-আইনি কাজ সংঘটিত হলে সে সম্পর্কে অভিযোগ দায়ের করার জন্য ইমারাতে ইসলামিয়া অভিযোগ দায়ের কর্তৃপক্ষের কাছে সর্বস্তরের জনগণের অভিযোগ করতে পারার ব্যবস্থা সম্পর্কে তিনি মনে করিয়ে দেন। আর এই কর্তৃপক্ষের স্টাফদের প্রতি তিনি নিরদেশনা দেন যে, “আপনারা মানুষের অভিযোগ শোনার ব্যাপারে অত্যন্ত দায়িত্বশীল হবেন এবং প্রতিটি অভিযোগ ঠিকানা ও সময় সহ যথাযথভাবে লিপিবদ্ধ করবেন। প্রয়োজনে তারা সুপ্রিম কোর্ট কিংবা সামরিক আদালতের সাহায্য নিবেন।”

    স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা খাতের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, “স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা খাতের সাথে জড়িত প্রত্যেকের দায়িত্ব যতদূর সম্ভব বেশি থেকে বেশি মানুষকে স্বাস্থ্য সেবার আওতায় আনা। স্থানীয় ও বিদেশী সংস্থগুলোর সাহায্য নিয়ে দেশজুড়ে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার ব্যাপারে আপনাদের তৎপর থাকতে হবে।”

    উলামায়ে কেরামকে তিনি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সাথে যুক্ত থেকে মানুষের মাঝে আরো বেশি সচেতনতা তৈরি করতে, এবং তাদের কাজকে শরীয়াহ অনুযায়ী সংশোধন করে দিতে অনুরধ করেন আমিরুল মু’মিনিন। সেই সাথে তিনিমনে করিয়ে দেন যে, “আল্লাহর দ্বীনের সাথে বিরোধ সৃষ্টি না করলে প্রত্যেক জাতিই সুখ-শান্তির দেখা পাবে। দাওয়াহ এবং ইসলাহ এর দিকটা পুরোপুরিই উলামায়ে কেরামের উপর ন্যাস্ত। আপনারা মানুষের অন্তরকে নূরে নূরান্বিত করবেন মসজিদে, জমায়েতে, মিডিয়া প্রোগ্রামে – সর্বত্র। আপনারা হবেন মানুষের হিদায়াতের ওয়াসিলা।”

    সকল নাগরিকের অধিকার নিশ্চিতে এবং নারীদের শরীয়াহ’র মাপকাঠি অনুযায়ী সম্পূর্ণ অধিকার ভোগ করার ব্যপারে তিনি ইমারতের দৃঢ়প্রতিজ্ঞা পুনর্ব্যক্ত করেন। আর ইমারাতে ইসলামিয়া যে ইসলামি শরীয়াহ’র আলোকে এবং দেশের স্বার্থ বিবেচনাপূর্বক বাকস্বাধীনতার সুযোগ করে দিয়েছে, সেব্যপারেও তিনি উল্লেখ করেন।

    এছারাও আমিরুল মু’মিনিন ইমারাতে ইসলামিয়ার নিরাপত্তা বাহিনীকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার নিরদেশ দিয়ে বলেন, “তাদের দৈনন্দিন কার্যক্রম, নিষ্ঠা, সদিচ্ছা ও তাদের উর্ধ্বতনের আনুগত্যের উপর। আপনারা ঔদ্ধত্য পরিহার করুন এবং নিজেদের মধ্যে পারষ্পরিক মহাব্বতের বন্ধন তৈরি করুন।”

    তিনি আরও বলেন, “কোষাগার ও জাতীয় সম্পদের যথাযথ ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণের দিকে আমাদের সকলের মনোযোগ দিতে হবে। অস্ত্র, সাঁজোয়াযান, গোলাবারুদ, সরকারি স্থাপনা এবং কোষাগার সংশ্লিষ্ট সবকিছুর যথাযথ ব্যবহার করা হোক – এই বিশ্বাস আমাদের জাতি আমাদের উপর রাখে। অতএব কারো অনুমতি নেই এগুলোর যথেচ্ছ ব্যবহার কিংবা অপচয়ের।”

    সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত আফগানদেরজন্য তিনি দয়া করেন এবং ক্ষতিগ্রস্তদের সাথে তাদের দুঃখ-কষ্ট ভাগাভাগি করে নেওার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “আমি সংশ্লিষ্ট সকল অফিসারকে ভূমিকম্প কবলিত এলাকায় পৌঁছে দ্রুততম সময়ে ক্ষতিগ্রস্তদের হাতে সহায়তা তুলে দিতে নির্দেশ দিয়েছি। আমার বিশ্বাস, নিষ্ঠার সহিত তারা তাদের দায়িত্ব পালন করবেন।”

    পরিশেষে তিনি এই বলে বক্তব্য শেষ করেন, “আমি বক্তব্যের সমাপ্তিতে ঈদুল আযহা উপলক্ষ্যে আরো একবার শুভেচ্ছা জানাতে চাই সকল দেশবাসীকে এবং আমি আশা করি ঈদের দিনগুলো আপনারা নিরাপদ ও উৎসবমুখর পরিবেশে অতিবাহিত করবেন।”



     

    অনুবাদক ও সংকলক  :  ত্বহা আলী আদনান



     

    দ্রষ্টব্য : আমিরুল মু’মিনিনের পূর্ণ বার্তাটি দাওাহইলাল্লাহ ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে। পাঠকের সুবিধা বিবেচনায় লিংকটি নিচে দিয়ে দেওয়া হল
    https://dawahilallah.com/forum/জিহাদি-প্রকাশনা/চিঠি-ও-বার্তা/181787-১৪৪৩



     

    ১টি মন্তব্য

    মন্তব্য করুন

    দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
    দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

    পূর্ববর্তী নিবন্ধআল-কায়েদার সফল হামলায় এক ডজনেরও বেশি মালিয়ান সেনা হতাহত
    পরবর্তী নিবন্ধফটো রিপোর্ট | শিশুদের সাথে আফগান সামরিক বাহিনীর ঈদুল আযহার প্রথম দিন উদযাপন