২০২২ সালের ২২ সেপ্টেম্বর। একজন রোহিঙ্গা নারী তার সন্তান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে থাকা স্বামীর কাছে যেতে চান। কিন্তু ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার তাদেরকে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টশন সরবরাহ করতে অস্বীকৃতি জানায়। দিল্লির হাইকোর্ট বলে, ভারতে বসবাসরত রোহিঙ্গা শরণার্থীরা ‘ভারতের জাতীয় নিরাপত্তাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে’।
২০১৮ সালে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ এর সাথে যুক্ত বলে দাবি করে নরেন্দ্র মোদির সরকার। তারা সুপ্রিম কোর্টকে বলে, “অবৈধ অভিবাসীদের ব্যাপারে আদালতের হস্তক্ষেপ করার এখতিয়ার নেই।”
কোনো ধরনের প্রমাণ ছাড়াই হিন্দুত্ববাদী সরকারের সাথে সম্পর্কযুক্ত টেলিভিশন চ্যানেল এবং মিডিয়াগুলোও এ ধরনের অভিযোগ রঙ চড়িয়ে প্রকাশ করে। তারাও বলে বেড়ায়, রোহিঙ্গারা সন্ত্রাসবাদের সাথে যুক্ত এবং ভারতের নিরাপত্তার জন্য হুমকি।
এই ধরনের বর্ণনার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদেরকে রীতিমতো অপরাধী হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে। এমনকি ভারত বলেছে, তারা বৈধ ভ্রমণ নথিপত্র না থাকা শরণার্থীদেরকে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে গণ্য করে ফেরত পাঠাবে। অবশ্য এভাবে ফেরত পাঠানো বিদ্যমান আন্তর্জাতিক আইনের মূলনীতিকেও ভঙ্গ করে। বিদ্যমান আন্তর্জাতিক আইনের মূলনীতির আওতায় কোনো দেশ শরণার্থীদেরকে এমন দেশে ফেরত পাঠাতে পারে না, যেখানে শরণার্থীরা ক্ষতি বা নিপীড়নের মুখোমুখি হয়।
ভারত জাতিসংঘের শরণার্থী সম্পর্কিত অধিবেশন (১৯৫১) এবং ১৯৬৭-এর প্রোটোকলের পক্ষপাতী না হওয়ায়, ভারতের শরণার্থী সুরক্ষার বাধ্যবাধকতা সীমাবদ্ধ। এ বিষয়ে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে মালভিকা প্রাসাদ আর্টিকেল ১৪ এ লিখেছিলেন। [১]
কিন্তু নন-রিফাউলমেন্টকে (আশ্রয়প্রার্থী বা শরণার্থীকে এমন দেশে ফেরত যেতে বাধ্য না করা, যেখানে শরণার্থীরা ক্ষতি বা নিপীড়নের মুখোমুখি হয়) সকল দেশের জন্য বাধ্যতামূলক বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠিত আইন হিসেবে গণ্য করা হয়। আর জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা (UNHCR) রোহিঙ্গাদেরকে আশ্রয়প্রার্থী এবং শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
এছাড়া মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণা ১৯৪৮, নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের আন্তর্জাতিক চুক্তি ১৯৬৬, শিশু অধিকার কনভেনশন ১৯৮৯ এবং আরও বিভিন্ন চুক্তিতে ভারত অঙ্গীকারাবদ্ধ। আর এ সবকিছুতে আটকদের অধিকার সম্পর্কে স্পষ্ট বলা আছে; নারী ও শিশুদের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ রয়েছে।
কিন্তু ভারত দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক—উভয় আইনই ভঙ্গ করেছে বলে প্রতীয়মান হয়। এমনকি অপ্রাপ্তবয়স্ক আটকদের সাথে পর্যন্ত নিয়মনীতির কোনো তোয়াক্কা করছে না হিন্দুত্ববাদী ভারত সরকার। এমনই একটি ঘটনা আমি পেয়েছি; আর সেটি নিয়ে ২০২২ সালের জানুয়ারিতে আর্টিকেল-১৪ তে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। শাহজাদা বাগের শহরতলীর উত্তর-পশ্চিম দিল্লিতে অবস্থিত একটি আটক কেন্দ্রের (Detention Center) ঘটনা সেটি। আটক কেন্দ্রটি ‘সেবা কেন্দ্র’ নামে পরিচালিত।
[নোটঃ এই প্রবন্ধে যেসকল বিধানের কথা বলা হয়েছে, সবই মানব রচিত বিধান।]
[চলবে ইনশাআল্লাহ…]
অনুবাদ : সাইফুল ইসলাম
আগের পর্ব পড়ুন
১। কেমন আছেন ভারতের রোহিঙ্গা শরণার্থীরা ||পর্ব-১ || এক রোহিঙ্গা নারীর আত্মকাহিনী
– https://alfirdaws.org/2022/10/25/60180/
তথ্যসূত্র :
1. Rohingya Refugees Recall Desperate Conditions With No Legal Recourse In Delhi Detention Centre – https://tinyurl.com/yvxps73w