ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর আগমন নবীপ্রেমিক মুসলিমদের জন্য অবমাননাকর

মুহাম্মাদ ইব্রাহীম

0
778
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ

গতকাল ১০ সেপ্টেম্বর রবিবার রাতে ঢাকায় এসেছে ফ্রান্সের কুখ্যাত প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। গণমাধ্যম সূত্র জানা গেছে, দিল্লিতে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন শেষে ঢাকায় দুই দিনের সফরে এসেছে সে।

ফ্রান্স ও ফ্রান্সের এই প্রেসিডেন্টের সাথে জড়িতে আছে নবী প্রেমিক মুসলিমদের ক্রোধ ও শত্রুতা। তাই ৯০ ভাগ মুসলিম অধ্যুষিত এই দেশে ফরাসি প্রেসিডেন্টের আগমনের ঘটনাটিকে নবীপ্রেমিক বাংলাদেশি মুসলিমদের সঙ্গে হাসিনা সরকারের চরম হঠকারী ও লজ্জাজনক প্রতারণা হিসেবে বিবেচিত হওয়ার দাবি রাখে। তাকে এমনকি বাংলাদেশের বিমানবন্দরে সেনাবাহিনীর গার্ড অফ অনার প্রদান করেছে শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামীলীগ সরকার।

ফরাসি প্রেসিডেন্টকে গার্ড অফ অনার প্রদান করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী

ফ্রান্স নামটি শুনলেই ভেসে উঠে ইসলাম বিদ্বেষী ও মুসলিমদের রক্তে রঞ্জিত এক বর্বরতার প্রতিচ্ছবি। দেশটির রয়েছে ইসলাম বিদ্বেষের দীর্ঘ এক ইতিহাস। সাম্রাজ্যবাদী এ দেশটি আফ্রিকা মহাদেশে লাখ লাখ মুসলিমের প্রাণ হরণ করেছে। নিজেদের দেশে বসবাসরত মুসলিমদেরকেও কোণঠাসা করতে ছাড়েনি তারা। স্কুল-কলেজে মুসলিম ছাত্রিদের শরিয়াতের নির্দেশ পর্দা পালনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা, মসজিদ-মাদ্রাসা বন্ধ করে দেয়া, মাদ্রাসার পাঠ্যসূচী পরিবর্তন করা ফ্রান্সের নিয়মিত ঘটনা।

ফরাসিদের সবচেয়ে বড় অপরাধ, যুগে যুগে রাসূল ﷺ অবমাননায় তারা ছিলো সবার শীর্ষে। আর এ শতাব্দীতে এসেও তারা রাসুল ﷺ এর অবমাননায় এতটুকু পিছপা হয়নি। বরং রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় রুচিবহির্ভূত এই কাজ তারা চলমান রেখেছে। স্বয়ং ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ নবী অবমাননার কাজে প্ররোচিত করেছে তার দেশের সাধারণ মানুষকে।

গত ২০২০ সালের ইসলাম বিদ্বেষী স্যামুয়েল পার্টি নামে এক শিক্ষক ক্লাসে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার নামে শিক্ষার্থীদেরকে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর ব্যাঙ্গাত্মক কার্টুন দেখিয়ে অবমাননা করে। বেশ কয়েকবারের এমন ঘটনার পর এক মুসলিম যুবক তাকে হত্যা করে।

এ ঘটনায় ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ইসলামকে সন্ত্রাসবাদের ধর্ম বলে আখ্যায়িত করে। বিতর্কিত এই কার্টুন অংকনের নিন্দা জানাবে না বলে দম্ভোক্তি করে সে। এমনকি ব্যাঙ্গাত্মক কার্টুন আঁকা সেই শিক্ষককে ফ্রান্সের সম্মানসূচক ‘লেজিয়ন ডি’হনরে’ বা ‘লেজিয়ন অফ অনার’ পুরষ্কারে ভূষিত করে। একই সাথে হামলার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দেয় সে।

এ ঘটনার পর ফ্রান্সের পুলিশ দেশটির অন্তত ৫০টি মসজিদ ও মুসলিম-অধ্যুষিত এলাকায় ভয়াবহ অভিযান চালায়।

এর চেয়ে বড় বিষয়, ফ্রান্সের কয়েকটা হোটেলের পুরো দেয়ালজুড়ে টানা কয়েকদিন ধরে প্রজেক্টরের মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর ব্যাঙ্গাত্মক কার্টুন প্রদর্শন করা হয় সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায়।

সে সময় ফ্রান্স প্রেসিডেন্ট ইসলাম ও রাসূল ﷺ এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ায় ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছিল বিশ্ব মুসলিম। দেশে-দেশে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ, মিছিল, প্রতিবাদ ও পণ্য বয়কট আন্দোলন অব্যাহত ছিল।

এর আগে রাসূলুল্লাহ্‌র ﷺ বিতর্কিত কার্টুন ছাপানোর পর ফ্রান্সের ব্যঙ্গাত্মক ম্যাগাজিন শার্লি এবদোতে হামলার ঘটনা ঘটে। সে সময়ও শার্লি হেবদোর সমালোচনা উঠলেও তাদের পক্ষে শক্ত অবস্থান নেয় এই ম্যাক্রোঁ।

এসবের প্রেক্ষিতে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামরিক সকল ক্ষেত্রে ইসলাম বিদ্বেষী ফ্রান্সকে উপযুক্ত জবাব দেয়া জরুরি ছিল। ঠিক এই সময় একটি মুসলিম অধ্যুষত রাষ্ট্রে তাকে সফর নিয়ে এসে নবী প্রেমিক মুসলিমদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটিয়েছে এ সরকার।

নিজেদের ক্ষমতার শেষ সময় এসেও ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণের ক্ষেত্রে কোন ছাড় দেয়নি ‘ইসলাম বিদ্বেষী’ তকমা পাওয়া আওয়ামীলীগ সরকার। এর আগে একই কায়দায় গুজরাটের কসাই খ্যাত ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আগমন উপলক্ষে দেশের ইসলামপ্রিয় মুসলিমদের বুকে গুলি চালাতে কুণ্ঠাবোধ করেনি হাসিনা সরকার। তারা এমনকি নবী অবমাননাকারী নুপুর শর্মার ঘটনার সময় একটি বিবৃতি পর্যন্ত দেয়নি।



 

তথ্যসূত্র:

১. ঢাকায় পৌঁছালেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ | President of France | Ekhon TV
https://tinyurl.com/2zktrnee
২.
রবিবার ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ঢাকা আসছেন
https://tinyurl.com/2mjwsk2x
৩. ফরাসি প্রেসিডেন্টকে সশস্ত্র বাহিনীর গার্ড অব অনার | President of France | Ekhon TV
https://tinyurl.com/2p9xvuyh

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধমার্কিন আধিপত্যের শেষের শুরু: ঐতিহাসিক ৯/১১ আক্রমণ
পরবর্তী নিবন্ধতুরখাম সীমান্তে পাকিস্তানের গুলিবর্ষণ, ইমারতে ইসলামিয়ার সমালোচনা