আফগানিস্তানের পার্শ্ববর্তী দেশ পাকিস্তান ও ইরান থেকে দেশগুলোর ইসলামবিরোধী সরকারের অমানবিক সিদ্ধান্তের কারণে আফগানিস্তানে ফিরতে বাধ্য হচ্ছেন শরণার্থীরা। বিভিন্ন পথ দিয়ে দেশে প্রবেশ করছেন তারা। ইমারতে ইসলামিয়া আফগানিস্তান এই শরণার্থীদের সাহায্য করার জন্য বেশ কয়েকটি কমিটি গঠন করেছেন। এই সকল কমিটি নিয়মিত আফগান শরণার্থীদের সহায়তা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার জন্য নিয়মিত তদের কার্যক্রমের রিপোর্ট প্রকাশ করছেন।
৪ঠা ডিসেম্বরের প্রকাশিত রিপোর্টটি তুলে ধরা হলো আল ফিরদাউসের পাঠকদের জন্য:
তুরখাম (কল্পিত ডুরান্ড সীমান্ত)
নিবন্ধন, অনুমোদন ও অভ্যর্থনা কমিটি:
তুরখামে এই কমিটি নতুনভাবে আরও ২৪৪ পরিবারের নিবন্ধন করেছেন।
পরিবহন ও স্থানান্তর বিষয়ক কমিটি:
২৬৮ সদস্যের ৫৪টি পরিবারকে তুরখাম থেকে নানগারহার, কোনার, লাগমান ও কাবুলে প্রদেশে পাঠানো হয়েছে এবং তাদেরকে ৩০,৫০০ টাকা ধার হিসেবে দেওয়া হয়েছে।
অস্থায়ী আবাসন বিষয়ক কমিটি:
উমারি ক্যাম্পে ১০টি তাবু এবং ৮টি টয়লেট নির্মাণ করা হয়েছে। ১৩০টি ট্যাংকে পানি সরবরাহ করা হয়েছে।
৫০টি পরিবার বর্তমানে ক্যাম্পে অবস্থান করছেন।
সেবা ও স্বাস্থ্য বিষয়ক কমিটি:
সেবা কমিটি উমারি ক্যাম্পে ৬ হাজার শরণার্থীর মাঝে খাবার বিতরণ করেছেন এবং ১৩০টি ট্যাংকে পানি সরবরাহ করেছেন।
সেবা কমিটির কর্মকর্তারা ৫১২টি সিম কার্ড বিনামূল্যে শরণার্থীদের মাঝে বিতরণ করেছেন।
তথ্য ও জনসচেতনতা বিষয়ক কমিটি:
এই কমিটি উমারি ক্যাম্প ও কল্পিত ডুরান্ড লাইনের বিভিন্ন অংশে অবস্থান নেওয়া শরণার্থীদের নিয়ে সভা-সমাবেশের আয়োজন করেছেন। এর মাধ্যমে তারা শরণার্থীদেরকে পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য শেয়ার করেছেন এবং সচেতনতা সৃষ্টির চেষ্টা চালিয়েছেন।
ব্যক্তিগত সুবিধার জন্য শরণার্থী হিসেবে নিজেকে মিথ্যা পরিচয় না দেওয়ার ব্যাপারটিকে তারা গুরুত্বের সাথে আলোচনা করেছেন। যদি এই কাজে কেউ ধরা পড়ে, তবে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন।
ইওএম কার্যালয়ের সাথে সমন্বয় করে শরণার্থীদের মাঝে অভিবাসন সংক্রান্ত ডকুমেন্টও বিতরণ করেছে এই কমিটি।
৪ শিশুকে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। হারিয়ে যাওয়া অনেকগুলো ডকুমেন্ট ও নাগরিক কার্ড মালিকদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এছাড়া, ক্যাম্পে তথ্য বোর্ড স্থাপন করা হয়েছে।
অভিবাসীদের কর্মসংস্থান বিষয়ক কমিটি:
তুরখামে এই কমিটি ১৪ জন স্নাতক ডিগ্রিধারী, ৬ জন স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী, ১৪ জন হাফেজের নিবন্ধন করেছেন। এছাড়া, ৪৩৫ জন কর্মী এবং ২৪৯ জন পেশাগত দক্ষতাসম্পন্ন ব্যক্তির নিবন্ধনও সম্পন্ন করা হয়েছে।
স্পিন বোল্ডাক (কল্পিত ডুরান্ড লাইন)
নিবন্ধন, অনুমোদন ও অভ্যর্থনা কমিটি:
স্পিন বোল্ডাকে এই কমিটি ৯৬২ সদস্যের ১৬৭টি পরিবারের নিবন্ধন সম্পন্ন করেছে। এর মধ্যে ১৪০টি পরিবারের ৭৯৩ জন সদস্যের দায়িত্ব আইওএম ও ডব্লিউএফবি এর অধীনে দেওয়া হয়েছে। আর ১৬৯ সদস্যের ২৭টি পরিবারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আইওএম এবং ইউএনএইচসিআরের কাছে।
পরিবহন ও স্থানান্তর কমিটি:
২৬২ সদস্যের ৪৫টি পরিবারকে স্পিন বোল্ডাক ও কান্দাহার থেকে হেরাত, কাবুল ও কান্দাহার প্রদেশে স্থানান্তর করা হয়েছে। প্রত্যেক পরিবারকে ৩৮ হাজার আফগানি মুদ্রা ধার হিসেবে দেওয়া হয়েছে।
সেবা ও স্বাস্থ্য বিষয়ক কমিটি:
এই কমিটি ৩৭০০ শরণার্থীর জন্য খাদ্য সরবরাহ করেছে এবং উমারি ও শেরানদাম ক্যাম্পে ৮৪,০০০ লিটার পানির ব্যবস্থা করেছে।
স্বাস্থ্য বিষয়ক দল ২৫৬ রোগীর চিকিৎসা দিয়েছে, ১,৮৩২ জন শরণার্থীকে বিভিন্ন ভ্যাকসিন দিয়েছে, ৮৮০ জন লোকের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেছেন, এবং ৫টি ম্যালেরিয়া ও করোনা স্যাম্পল নিয়ে গেছেন।
জাবুল (কল্পিত ডুরান্ড লাইন)
নিবন্ধন, অনুমোদন ও অভ্যর্থনা কমিটি:
জাবুল প্রদেশের শামালজু জেলার জানযির এলাকায় ৫ সদস্যের ১টি পরিবারের নিবন্ধন ও বায়োমেট্রিক করা হয়েছে।
পরিবহন ও স্থানান্তর কমিটি:
একটি পরিবারকে জানযির এলাকা থেকে শামালজু জেলায় স্থানান্তর করা হয়েছে।
অর্থ ব্যবস্থাপনা কমিটি:
জাবুলে একটি পরিবারকে ১০ হাজার আফগানি অর্থ সাহায্য দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, এই পরিবারকে শিশুদের জন্য শীতের কাপড়সহ ২৩টি উপকরণ দিয়েছে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি।
সেবা ও স্বাস্থ্য বিষয়ক কমিটি:
জাবুলে এই কমিটি ৫০ জন ফিরে আসা শরণার্থীকে রাতের খাবার খাইয়েছে।
পাকতিকা (কল্পিত ডুরান্ড লাইন)
নিবন্ধন, অনুমোদন ও অভ্যর্থনা কমিটি:
ডুরান্ড লাইনের আংগুর আদায় ৭টি পরিবারের নিবন্ধন করা হয়েছে।
পরিবহন ও স্থানান্তর কমিটি:
৭টি পরিবারকে আংগুর আদা থেকে শরণার্থী শিবিরে পাঠানো হয়েছে এবং পরে তাদের নিজ নিজ জেলা ও গ্রামে পাঠানো হয়েছে।
অর্থ ব্যবস্থাপনা কমিটি:
আংগুর আদার ৭টি পরিবারকে অর্থ সহায়তা দিয়েছেন এই কমিটি। প্রতিটি পরিবারকে ১০ হাজার আফগানি দেওয়া হয়েছে।
সেবা ও স্বাস্থ্য বিষয়ক কমিটি:
আংগুর আদা এবং শরনাতে ২২ জন শরণার্থীকে চিকিৎসা দিয়েছে এই কমিটি। ৬৭ জনের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া তাদের আবাসনের ব্যবস্থাসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় বিষয়াদির ব্যবস্থা করা হয়েছে।
যোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক কর্মকর্তারা ৯টি সিম কার্ডও বিতরণ করেছেন সেখানে।
তথ্য ও জনসচেতনতা বিষয়ক কমিটি:
এই কমিটি ফিরে আসা শরণার্থীদেরকে তাদের সন্তানের ভবিষ্যৎ ও শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে তথ্য সরবরাহ করেছেন।
নিমরুজ:
নিবন্ধন, অনুমোদন ও অভ্যর্থনা কমিটি:
সিল্ক রোড দিয়ে দেশে ফেরা ৪৫ পরিবারের ১৪৪ সদস্যের নিবন্ধন ও বায়োমেট্রিক করা হয়েছে। একইভাবে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৬৪২ জন ব্যক্তির নিবন্ধন করা হয়েছে, যাদের মধ্যে ১৪১ জনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আইওএমকে।
অস্থায়ী আবাসন কমিটি:
শরণার্থীদের জন্য তৈরি অস্থায়ী শিবিরে ৩০ পরিবারের ৯৬ সদস্যের আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাদেরকে নগদ অর্থও প্রদান করা হয়েছে।
অর্থ ব্যবস্থাপনা কমিটি:
নিমরুজে ৬ পরিবারকে ১০ হাজার আফগানি দিয়েছে এই কমিটি।
হেরাত
নিবন্ধন, অনুমোদন ও অভ্যর্থনা কমিটি:
৫৩ জন সদস্যের ১৯টি পরিবারের তথ্য হেরাতের ইসলাম কালা বন্দরে সোমবারে নিবন্ধন করা হয়েছে।
অর্থ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক কমিটি:
হেরাতে ১৫টি পরিবারকে ১০ হাজার আফগানি দিয়েছে এই কমিটি।
কাবুল
পরিবহন ও স্থানান্তর কমিটি:
১৬২ সদস্যের ৩২টি পরিবারকে কুন্দুজ ও বলখ প্রদেশে পাঠিয়েছেন পরিবহন ও স্থানান্তর কমিটি।