গাজায় জায়োনিস্ট ইসরায়েলি বাহিনীর সামরিক আগ্রাসনের ৮৩তম দিনেও তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তুলছেন ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ যোদ্ধারা। এদিন ২৪ ঘন্টায় জায়োনিস্ট বাহিনীর অন্তত ১৯টি সাঁজোয়া যান ও ট্যাংক ধ্বংস হয়েছে, হতাহত হয়েছে বহু জায়নবাদী সৈন্য।
কাসসাম ব্রিগেডের তথ্যমতে, গত ২৮ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার, গাজার শহরের আত-তুফাহ এবং আদ-দারাজ এলাকায় জায়োনিস্ট বাহিনীর সাথে তীব্র সংঘর্ষ হয়েছে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের। এসময় প্রতিরোধ যোদ্ধারা আল ইয়াসিন-১০৫ শেল এবং শাওয়াজ বোমা দিয়ে জায়োনিস্টদের ৭টি সাঁজোয়া যানকে লক্ষ্যবস্তু করেছেন। ফলে এসব যানে থাকা সৈন্যরা হতাহতের শিকার হয়েছে।
এমনিভাবে মধ্য গাজার বুরেজ ক্যাম্পেও এদিন তীব্র সংঘর্ষ হয়েছে। এলাকাটিতে প্রতিরোধ যোদ্ধারা ইয়াসিন-১০৫ শেল দিয়ে জায়োনিস্ট বাহিনীর একটি সামরিক যান ও একটি বুলডোজার ধ্বংস করতে সক্ষম হন। একইভাবে শাওয়াজ বোমার সাহায্যে অন্য আরো একটি ট্যাংককে লক্ষ্যবস্তু করেন।
এদিন মধ্য গাজার আল-মাগাজি ক্যাম্পেও ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ক্যাম্পটিতে প্রতিরোধ যোদ্ধারা আল ইয়াসিন-১০৫ শেলের আঘাতে জায়োনিস্টদের একটি ট্যাংক ধ্বংস করেছেন। সেই সাথে একটি ভবনে ইহুদিদের অবস্থান লক্ষ্য করে বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণ ঘটান প্রতিরোধ যোদ্ধারা। আর ক্যাম্পের পূর্ব দিকে ইহুদি বাহিনীর একটি চৌকি লক্ষ্য করে মর্টার শেল দিয়ে আঘাত করে সম্পূর্ণ চৌকিটি ধ্বংস করে দেন মুজাহিদগণ। ক্যাম্পটিতে মুজাহিদদের এসকল অভিযানে বহু জায়োনিস্ট সৈন্য হতাহত হয় বলেও ধারণা করা হয়।
অপরদিকে গাজার কেন্দ্রীয় অঞ্চলের উত্তর-পূর্ব তাল্লাত ও আর-রায়িস এলাকায় জায়োনিস্ট ইসরায়েলের দুটি সেনাদলকে উড়িয়ে দিয়েছেন মুজাহিদগণ। এলাকাটিতে জড়ো হওয়া জায়োনিস্ট বাহিনীর ঐ দু’টি দলকে আল-কাসসামের যোদ্ধারা ভারী ক্যালিবারের মর্টার শেল দিয়ে আঘাত করেন। ফলশ্রুতিতে অধিকাংশ জায়োনিস্ট সৈন্য হতাহত হয় এবং অন্যরা পিছু হটতে বাধ্য হয়।
এদিন জায়োনিস্ট বাহিনী ও প্রতিরোধ যোদ্ধাদের মাঝে সর্বাধিক সংখ্যক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে গাজা উপত্যকার দক্ষিণে, খান ইউনুস শহরের আশপাশের এলাকাগুলোতে। শহরটির বিভিন্ন এলাকায় জায়োনিস্ট বাহিনীর বিরুদ্ধে ১১টি অভিযান পরিচালনা করছেন মুজাহিদগণ। প্রতিরোধ যোদ্ধারা তাদের এসব অভিযানে জায়োনিস্ট বাহিনীর মার্কাভা ট্যাংক সহ অন্তত ৮টি সাঁজোয়া যান ধ্বংস করতে সক্ষম হন। সেই সাথে অনুপ্রবেশকারী একটি দল সহ জায়োনিস্ট বাহিনীর জড়ো হওয়া ৩টি দলকে মর্টার ও বোমা বিস্ফোরণের মাধ্যমে উড়িয়ে দেন। একইভাবে শত্রু সৈন্যদের যানবাহন রাখার কয়েকটি কেন্দ্রও এদিন মুজাহিদগণ ধ্বংস করেন।
অপরদিকে বৃহস্পতিবার আল-জাজিরায় প্রকাশিত এক অডিও বিবৃতিতে কাসসাম ব্রিগেডের মুখপাত্র আবু উবাইদাহ (হাফি.) জানান, প্রতিরোধ যোদ্ধারা গত ২ দিনে জায়োনিস্ট বাহিনীর ৩টি হেলিকপ্টারকে লক্ষ্যবস্তু করতে সক্ষম হয়েছেন। সেই সাথে তাঁরা জায়োনিস্ট বাহিনীর নিক্ষেপ করা অবিস্ফোরিত বোমা ও গোলাবারুদকে সক্রিয় করছেন, আর সেগুলো দিয়ে জায়োনিস্ট বাহিনীর বিরুদ্ধে গুরত্বপূর্ণ অনেক অভিযান পরিচালনা করেছেন।
তিনি বলেন, আমাদের জনগণ অচীরেই মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে এবং এই আগ্রাসন থেকে বেরিয়ে আসবে (ইনশাআল্লাহ)। কেননা ইতিমধ্যে “তুফানুল-আকসা” অপারেশন ইহুদিবাদী সত্ত্বাকে ধ্বংসের পথে বসিয়েছে। এসময় তিনি বরকতময় এই যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বীর মুজাহিদ ও দৃঢ়তার সাথে এখনো গাজায় দাড়িয়ে থাকা জনগণকে স্যালুট জানান।